AB Bank
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

নারীদের তৈরি কুমড়ো বড়ির কদর সারাদেশে


Ekushey Sangbad
একুশে সংবাদ ডেস্ক
০১:১২ পিএম, ৪ জানুয়ারি, ২০২১
নারীদের তৈরি কুমড়ো বড়ির কদর সারাদেশে

সুজলা-সুফলা শষ্য-শ্যামল ফসলে ভরা আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ। শীতের মৌসুম এলেই এ দেশের গ্রাম বাংলার নারীরা খাবারে বাড়তি স্বাদ আনতে কুমড়ো বড়ি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করেন। 

আর তাই শীত জেঁকে বসায় নওগাঁর আত্রাইয়ের প্রতিটি গ্রামে কুমড়ো বড়ি তৈরির যেন ধুুম পড়েছে। কুমড়ো বড়ি তৈরির উপযুক্ত সময় শীতকাল। 

শীতের সময় গ্রামের নারীদের কর্ম ব্যস্ততা বেড়ে যায়। তারপরও নিত্যদিনের ছোট কাজও বেশি থাকে। এর মধ্যেই সব কাজের আগে সকাল বেলা কুমড়া বড়ি তৈরি করেন নারীরা। কুমড়া বড়ি তরকারির একটি মুখরোচক খাদ্য। এতে তরকারির স্বাদে যোগ হয় নতুন মাত্রা।

সরেজমিনে উপজেলায় বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শত শত নারী কুমড়ো বড়ি তৈরির কাজে জড়িত রয়েছে। শীতের আগমণের সঙ্গে সঙ্গে কুমড়ো বড়ি তৈরির ব্যস্ততা বেড়ে যায় তাদের মাঝে। 

বর্ষাকাল বাদে বাঁকি মাসগুলোতে কমবেশী কুমড়ো বড়ি তৈরি করা হয়। আশ্বিন মাস থেকে ফাল্গুন এই ৬ মাস কুমড়ো বড়ি তৈরির ধুম পড়ে যায়। শীতকাল কুমড়ো বড়ি তৈরির ভরা মৌসুম। এ সময় গ্রামের প্রতিটা বাড়ীতে কমবেশি কুমড়ো বড়ি তৈরি করা হয়। পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাকিটা বাজারে বিক্রি করেন। 

শীতের সময় কুমড়ো বড়ির চাহিদা থাকে বেশী, আর গ্রামাঞ্চলের নারীরা বাড়তি আয়ের জন্য কুমড়ো বড়ি তৈরি করেন। কুমড়ো বড়ি তৈরির প্রধান উপকরণ মাসকলাইয়ের ডাল আর চালকুমড়া। এর সঙ্গে সামান্য মসলা। 

বাজারে প্রতি কেজি মাসকলাই ১০০ থেকে ১২০ টাকা আর চাল কুমড়া ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সাইজ হিসাবে চালকুমড়া ৫০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে ক্রয় করা যায়। ৫ কেজি চালকুমড়ার সঙ্গে ২ কেজি মাসকলাইয়ের মিশ্রণে কুমড়ো বড়ি ভাল হয়। 

প্রথমে মাসকলাই রৌদ্রে শুকিয়ে যাতায় ভেঙ্গে পরিস্কার করে বা না ভেঙ্গে পানিতে ভিজিয়ে রেখে খোসা ছাড়িয়ে নেওয়া হয়। প্রায় ৫ থেকে ৬ ঘন্টা মাসকলাই পানিতে ভেজাতে হয়। তারপর ঢেঁকি বা শিল-পাটা পিষে নিয়ে কুমড়ো বড়ির মিশ্রণ তৈরি করা হয়। 

তবে এখন উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কুমড়ো বড়ি তৈরির মেশিন স্থাপনের পর থেকে সবাই মেশিনে মাড়াই করে মাসকলাই ও কুমড়ার মিহি করা হচ্ছে। এরপর দুইটির মিশ্রণে কুমড়ো বড়ির উপকরণ তৈরি করা হয়। রৌদ্রউজ্জ্বল ফাঁকা স্থান, বাড়ির আঙ্গিনা, ছাদ বা খোলা জায়গায় ভোর থেকে বড়ি তৈরি করা শুরু হয়। পাতলা কাপড়ে সারি সারি বড়ি বসানো হয়। কুমড়ো বড়ি বসানোর পর দুই-তিন দিন একটানা রৌদ্রে শুকানো হয়। সূর্যের আলো কম হলে ৩-৪ দিন পর্যন্ত শুকাতে সময় লেগে যায়। শুকানোর পর কাপড় থেকে বড়ি উঠিয়ে পাত্রে সংরক্ষণ করা হয়।

গ্রামের পিছিয়ে পড়া অনেক মেয়েরা নিজেদের ভাগ্য উন্নয়নে শ্রম দিয়ে অনেক বছর ধরে এ কুমড়ো বড়ি তৈরিকাজে নিয়োজিত রয়েছেন উপজেলার পাঁচুপুর ইউনিয়নের সাহেবগঞ্জ গ্রামের প্রায় ৩০-৪০টি পরিবার।

ওই গ্রামের নারী কারিগর লতা মহন্ত বলেন, আগে কুমড়ো বড়ি ব্যবসায়ী পরিবারগুলো প্রথম অবস্থায় তেমন স্বচ্ছল ছিল না। এখন অনেকেই কুমড়ো বড়ির ব্যবসা করেই স্বাবলম্বী হয়েছেন। তিনি আরো বলেন, ৫ কেজি কুমড়ার সঙ্গে দুই কেজি মাসকলাইয়ের কুমড়ো বড়ি ভাল তৈরি হয়। আগে মাসকলাই পানিতে ভিজিয়ে পরিস্কার করা, আর ঢেঁকিতে বা পাটায় বেটে বড়ি তৈরি করতে প্রচুর পরিশ্রম হত, সেই সঙ্গে অনেক সময় লাগতো। এখন খোসা ছাড়ানো মাসকলাই বাজারে ক্রয় করতে পাওয়া যায়। মাসকলাই পানিতে ভিজিয়ে মেশিনের সাহায্যে মাড়াই করে অল্প সময়ে বড়ি তৈরির মিশ্রণ তৈরি করা খুব সহজ হয়েছে। এতে করে অল্প সময় প্রচুর পরিমাণ কুমড়ো বড়ি তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। এক কেজি কুমড়ো বড়ি তৈরি করতে প্রায় ১২০ টাকা মত খরচ হচ্ছে। আর বাজারে ২শ থেকে আড়াইশ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এতে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাড়তি আয় করা সম্ভব হচ্ছে।

উপজেলার কুমড়ো বড়ির ব্যবসায়ী গৌড় চন্দ ও উজ্জল চন্দ্র বলেন, এখানকার কুমড়ো বড়ি খুব সুস্বাদু হওয়ায় এ অঞ্চলের বড়ি এলাকার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়। বিশেষকরে ঢাকায় এর চাহিদা সবচেয়ে বেশি। 

তিনি আরো জানান, এটি সারা বছরজুড়ে তৈরি করা সম্ভব। কিন্তু শীতকালে এর কদর বেশি হয়। কারণ, শীতের সময় রান্না করে খেতে বেশ মজা লাগে। কৈ মাছ, শিং মাছ ও শৈল মাছের সাথে রান্না করলে তরকারি খেতে মজাই আলাদা। তাদের কুমড়ো বড়ি বানানো থেকে শুরু করে সব কাজ বাড়ির মেয়ে বা নারী শ্রমিকরা করে থাকেন। কুমড়ো বড়ি তৈরি করতে নারী শ্রমিকদের মজুরীও কম। 

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ কেএম কাউছার হোসেন জানান, শীত মৌসুমে গ্রামের নারীরা কুমড়ো বড়ি তৈরি করে বাড়তি আয় করছে। গ্রামীণ নারীরা উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও পৃষ্টপোষকতা পেলে তারা নিজেদের ভাগ্য উন্নয়ন ও গ্রামীন অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হবে। 

একুশে সংবাদ/ না.হ.না/এস


 

Link copied!