শ্রীনগরে বহিস্কৃত যুবদল নেতার নেতৃত্বে মসজিদে ঢুকে বিএনপির এক গ্রুপের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার মাগরিবের নামাজের সময় উপজেলার দেউলভোগ দয়হাটা বায়তুল আমান জামে মসজিদে এই ঘটনা ঘটে।
এই ঘটনায় মো. রুবেল (৪০) বাদী হয়ে বহিষ্কৃত যুবদল নেতা তরিকুল ইসলামকে প্রধান আসামী করে ১৩ জনের নাম উল্লেখসহ আসামী করে শ্রীনগর থানায় মামলা দায়ের করেছে। এই মামলায় অজ্ঞাত আরও ১৫/২০ জনকে আসামী দেখানো হয়েছে। শ্রীনগর থানা মামলা নং- ২৮ তারিখ ২৮/১১/২০২৫ ইং, ধারাঃ আইন শৃঙ্খলা বিগ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইন ২০০০ (সংশোধন ২০১৯) এর ৪/৫।
মামলার এজাহার সুত্রে জানা যায়, গতকাল শুক্রবার ২৮/১১/২০২৫ তারিখ সন্ধ্যা অনুমান ০৫.১০ ঘটিকার সময় শ্রীনগর থানাধীন দয়াহাটা সাকিনস্থ দেউলভোগ দয়াহাটা মাদ্রাসায় আমার নানা চেরাগ আলী বেপারীর জানাযার নামাযে অংশগ্রহণ করার জন্য আমি সহ শফিক মোড়ল, আলমগীর আলম, আওলাদ হোসেন উজ্জ্বল, বাদশা, মুরাদ, ফাহাদ, ইমনগণ উক্ত স্থানে যাই। ইং-৫২৮/১১/২০২৫ তারিখ সন্ধ্যা অনুমান ০৫.২০ ঘটিকার সময় মাগরিবের নামায আদায়রত অবস্থায় উপরোক্ত এ বিবাদীসহ অজ্ঞাতনামা বিবাদীরা হাতে চাপাতি, চাকু, হকিস্টিক ইত্যাদি নিয়া পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে জনমনে আতংক সৃষ্টি করে এলোপাথারীভাবে শ্রীনগর থানাধীন দয়াহাটা সাকিনস্থ দেউলভোগ দয়াহাটা দারুন উলুম কওমিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসার প্রবেশ মুখে আসিয়া ১নং বিবাদী হকিস্টিক দিয়া আখতার হোসেন (৪৯), পিতা ওহাব আলী, সাং- কুকুটিয়া, খান শ্রীনগর, জেলা- মুন্সীগঞ্জ এর বাম হাতে বারি মারিয়া হাড়ভাঙ্গা জখম করে তখন আখতার হোসেন মাটিতে পরে গেলে ১,৩,৪ নং বিবাদীদের হাতে থাকা পিস্তল সদৃশ্য বস্তু বের করে এই বলে হুমকি প্রদান করে যে, কেউ এগিয়ে আসলে গুলি করে খুন করবে মর্মে হুমকি প্রদর্শন করে বিশৃঙ্খল পরিবেশও জনমনে ত্রাস সৃষ্টি করে। আমরা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে মসজিদের ভিতরে প্রবেশ করি। তখন ৭,৮, ১১, ১৩ নং বিবাদীরা মসজিদে প্রবেশপথে ঢুকে হাতে থাকা ধারালো চাপাতি, হকিস্টিক, লোহার রড দিয়া এলোপাথারী আঘাত করলে, - তখন আবদুর রহিম (৪৭), পিতা- আলফু বেপারী, সাং- কুচিয়ামোড়া, থানা- সিরাজদিখান, জেলা- মুন্সীগঞ্জ এব - মাথায় চাপাতি দিয়া কোপ দিলে গুরুতর কাটা রক্তাক্ত জখম প্রাপ্ত হয় এবং মমিনুল ইসলাম (২০), পিতা নুরুল ইসলাম, সাং- কুচিয়ামোড়া, থানা- সিরাজদিখান, খানা। শ্রীনগর, জেলা- মুন্সীগঞ্জ এর মাথায় চাপাতি দিয়া কো দিলে গুরুতর কাটা রক্তাক্ত জখম প্রাপ্ত হয়। ২,৫,৬,৯,১২, ১৩ নং বিবাদীরা ভিকটিম আখতার হোসেন, আবদুর রহিম, মমিনুল ইসলাম জখম হয়ে মাটিতে পরে থাকলে তাদের সাথে থাকা মোবাইল ফোন- ০৩ টি, যাহার মূল্য অনুমান ৭০,০০০/- টাকা এবং নগদ ৫০,০০০/- টাকা ছিনিয়ে নিয়া যায়। সকল বিবাদীরা আতংক সৃষ্টি করে যাওয়ার সময় ৫,০০,০০০/- টাকা চাঁদা দাবি করে এবং বিবাদীদের হাতে থাকা হকিস্টিক, লোহার রড ও লাঠি সোঠা দিয়া মসজিদের সামনে পাকিং এ থাকা কয়েকটি মটরসাইকেল এবং প্রাইভেকটকার ভাংচুর করে অনুমান ১,২০,০০০/- টাকার ক্ষতি সাধন করে চলিয়া যায় পরে আমি সহ উপস্থিত জনগণের সহায়তায় আখতার হোসেন, আবদুর রহিম, মমিনুল ইসলামদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, শ্রীনগর নিয়া প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
মামলায় যাদের আসামী করা হয়েছে-
১। তরিকুল ইসলাম (৪৩), ২। রুবিনা (৩০), স্বামী রফিক বাশার, উভয় পিতা-মান্নান বেপারী, উভয় সাং- দয়াহাটা মোড়লবাড়ী, ৩। আলমগীর হোসেন (৪২), পিতা- ফকির উদ্দিন, সাং-১৫ টেক্কামার্কেট দীঘিরপাড়, ৪। জাকির (৪৫), পিতা- মালেক, সাং- দয়াহাটা, ওয়ার্ড নং- ০৯, ৫। ডালিয়া (৩২), স্বামী- তরিকুল ইসলাম, সাং- দয়াহাটা মোড়লবাড়ী, ৬। রিনা (৩২), স্বামী- সুজন, সাং- দয়াহাটা মোড়লবাড়ী ০৭। সিফাত শেখ (২৫), পিতা- শাহিন শেখ, সাং- দেওপাড়া, ৮। টিপু (৩৫), পিতা- হাবিবুর রহমান, সাং এ পশ্চিম বেজগাঁও, ০৯। বড় বুলেট (৩৫), পিতা- ইসমাইল, সাং- বুড়িবাড়ি, ১৭। নাঈম শেখ (৩৫), পিতা-আওয়াল শেখ, সাং- বাড়ৈগাঁও, ১১ মিন্টু (৩৫), পিতা- সামাদ শেখ, সাং- পূর্ব বেজগাঁও, ১২। মণ্ডন মোল্লা ? (৩১), পিতা- জহর মোল্লা, সাং- অজ্ঞাত, ১৩। সাদেক (৩৫), পিতা- আফসু মাদবর, সাং- কানাইনগর, সর্ব খানা- শ্রীনগর, জেলা- মুন্সীগঞ্জগন সহ অজ্ঞাতনামা ১৫/২০ জন।
স্হানীয় সুত্রে জানাগেছে, মুন্সীগঞ্জ জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য আওলাদ হোসেন উজ্জলের শশুরের জানাজায় অংশ নিতে ওই এলাকায় যান বিএনপির কেন্দ্রিয় কমিটির সেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আলহাজ মমিন আলী সহ তাদের অনুসারীরা। এসময় একই পথ দিয়ে যাওয়ার পথে মোটরসাইকেল ও গাড়ির সাথে ধাক্কা লাগার বিষয়ে মীর সরফত আলী সপু ও মমিন আলীর লোকজনের সাথে উপজেলা যুবদলের বহিস্কৃত যুগ্ন-আহবায়ক তরিকুল ইসলামের কথা কাটাকাটি হয়। মাগরিবের নামাজের সময় হয়ে যাওয়ায় জানাজার পূর্বে নেতা কর্মীরা নামাজের জন্য দেউলভোগ দয়হাটা বায়তুল আমান জামে মসজিদে ঢুকে। এসময় তরিকুল ইসলাম তার লোকজন নিয়ে মসজিদে ঢুকে মীর সরফত আলী সপুর সমর্থকদের উপর হামলা চালায়। এতে আব্দুর রহিম(৪৭), মমিনুল ইসলাম ফাহিম(২৪) ও আক্তার হোসেন (৪৯) আহত হয়। এই ঘটনায় পুলিশ তরিকুলের বোন রুবিনাকে আটক করেছে।
তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় মীর সরফত আলী সপু বলেন, এটি একটি পরিকল্পিত হামলা। তিনি হামলাকারীদেরকে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবী জানান এবং শনিবার সকাল ১০ টায় প্রতিবাদ মিছিলের ঘোষণা দেন।
অপরদিকে আলহাজ্ব মমিন আলী বলেন, তরিকুল মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে বিএনপির খসড়া মনোনয়ন ধারী শেখ মোঃ আব্দুল্লহর লোক। এর আগে তাকে পুলিশ আটক করেছিল। পরে থানায় হামলা করে তাকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়।
অপর একটি সূত্র জানায়,তরিকুলের মোটরসাইকেলে লাগানো শেখ মোঃ আব্দুল্লাহর নির্বাচনী স্টিকারকে কেন্দ্র করে কথা কাটাকাটির সূত্রপাত হয়েছিল। তবে তরিকুল পক্ষের দাবী এখানে তাদেরকে মারধর করা হয় এবং তরিকুলের চোখের নীচে জখম হয়েছে।
উল্লেখ্য গত ১০ জানুয়ারী সন্ধ্যায় একটি হত্যা চেষ্টা মামলার ওয়ারেন্ট ভূক্ত আসামী শ্রীনগর উপজেলা যুবদলের আহবায়ক কমিটির যুগ্ন আহবায়ক তরিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছিলো পুলিশ। তাকে ছাড়িয়ে নিতে তাৎক্ষকি ভাবে বিএনপি, যুবদল, সেচ্ছাসেবক দল,ছাত্রদলের শতাধিক নেতা কর্মী থানা ঘেরাও করে তরিকুলকে ছিনিয়ে নেয়। এই ঘটনায় শ্রীনগর থানার তৎকালীন অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কাইয়ুম উদ্দিন চৌধুরীকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
পরে এই ঘটনায় যুবদলের আহবায়ক জয়নাল আবেদীন জেমস, মামুনুর রশিদ মামুন সহ ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে ২০১ জন নেতা কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়। পরিদিন ১১ জানুয়ারী যুবদলের কেন্দ্রিয় কমিটির সহ দপ্তর সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয় তরিকুল ইসলামকে দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছ।
শ্রীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ নাজমুল হুদা খান জানান, এই ব্যাপার থানায় মামলা হয়েছে। দোষীদের গ্রেপ্তারের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
একুশে সংবাদ/এ.জে
একুশে সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
