শীত না আসতেই চোরের উৎপাত বৃদ্ধি : দিনে টার্গেট, রাতে চুরি

দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সুযোগে বাড়ছে চুরির ঘটনা। বাসাবাড়িতে স্বর্ণালংকার, টাকা-পয়সা, মোটরসাইকেল, সিএনজি, অটোরিকশা, গরু-ছাগল থেকে শুরু করে বিপণিবিতানের মালামাল—সবকিছুই চোরের নিশানায়। স্থানীয় পর্যায়সহ আন্তঃউপজেলার একাধিক পেশাদার চোরচক্র এসব চুরির সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। শীত না নামতেই এমন চুরির উপদ্রবে আতঙ্কে দিন কাটছে রামগঞ্জবাসীর।

লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলায় সাম্প্রতিক সময়ে অস্বাভাবিক হারে সক্রিয় হয়ে পড়েছে চোরচক্র। রাত নামলেই কোথাও না কোথাও ঘটছে একাধিক চুরির ঘটনা। মুদি দোকান, বাসাবাড়ি, হাটবাজার এমনকি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানও রেহাই পাচ্ছে না তাদের হাত থেকে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, অপরাধীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ না নেওয়ায় দিন দিন এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাত নামলেই সংঘবদ্ধ চোরের দল দোকানপাট ও বাড়িঘরে হানা দিচ্ছে। এমনকি থানা মসজিদ থেকেও চুরি হয়েছে। অপরিচিত লোকজনের আনাগোনা বেড়ে যাওয়ায় চুরি নিয়ে উদ্বেগ ছড়িয়েছে গ্রামেগঞ্জে।

তথ্য অনুযায়ী, চলতি মাসের ১ নভেম্বর রাতে রামগঞ্জ থানার সামনে মুক্তিযোদ্ধা ভবনের নিচতলায় শহিদ উল্যাহ পাটোয়ারী টি স্টোর এবং একই রাতে পৌর শহরের জিয়া শপিং কমপ্লেক্সের পশ্চিম গেটের সামনে ‘ফ্যামিলি বাজার’ মুদি দোকানে চুরি হয়। এর আগে ৩০ অক্টোবর পৌর অভিরামপুর গ্রামের হাজী বাড়িতে কামাল হোসেনের ঘরে চুরি হয়। ২৮ অক্টোবর পৌর টামটা গ্রামের হুমায়ুন কবির চৌধুরীর ঘরে চুরি করে নগদ ৪২ হাজার টাকা, দুটি মোবাইল ফোনসহ প্রায় এক লাখ টাকার মালামাল নিয়ে যায় চোরেরা। এ ঘটনায় তিনি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

একই রাতে ওই এলাকায় আরও চারটি চুরির ঘটনা ঘটে। ২৭ অক্টোবর রাতে অভিরামপুর গ্রামের জাফর মিয়ার ঘর, ২০ অক্টোবর রাতে চন্ডীপুর ইউনিয়নের বকুলতলা মসজিদবাড়ির আবুল কাশেমের ঘর থেকে অটোরিকশা, ১৯ অক্টোবর দরবেশ ইউনিয়নের বালুয়া চৌমনী মাষ্টারপাড়ায় স্কুলশিক্ষিকা আকলিমা আক্তারের বাড়ি থেকে চার ভরি স্বর্ণালংকার ও নগদ ৪৫ হাজার টাকা চুরি হয়।

১৭ অক্টোবর রাতে রামগঞ্জ থানা মসজিদের ব্যাটারি, ১০ অক্টোবর জিয়া শপিং কমপ্লেক্সের সামনে থেকে শেখ ফরিদের একটি সিএনজি এবং ৬ অক্টোবর পৌরসভা এলাকার উত্তর সোনাপুর হাজী দরবেশ আলী জামে মসজিদ থেকে একটি মোটর চুরি হয়। একই দিনে দরবেশ আলী বাড়ির হারুনুর রশিদের ঘর থেকেও দুইটি মোটর চুরি হয়।

চলতি বছরের ৩ জুলাই থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত চার মাসে রামগঞ্জ উপজেলার চন্ডীপুর ইউনিয়নে ৩৩টি, রামগঞ্জ পৌরসভায় ৩০টি, ভোলাকোটে ২৫টি, ভাদুরে ১৩টি, লামচরে ১৫টি, দরবেশপুরে ১০টি, ভাটরায় ১৫টি, নোয়াগাঁওয়ে ২২টি, কাঞ্চনপুরে ২০টি ও ইছাপুরে ১৮টি ছোট-বড় চুরির ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয়রা জানান।

টামটা গ্রামের ভুক্তভোগী হুমায়ুন কবির পাটোয়ারী বলেন, “আমার ঘরে ২৮ অক্টোবর চুরির ঘটনায় থানায় জিডি করেছি। এখনও কোনো প্রতিকার পাইনি। একই রাতে আমাদের গ্রামে আরও কয়েকটি চুরি হয়, কিন্তু অনেকে হয়রানির ভয়ে থানায় অভিযোগ করেননি।”

অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য মো. বাচ্চু মিয়া বলেন, “আগে শুনতাম শীতকালে চুরি বাড়ে, এখন তো শীত না আসতেই চুরির মহোৎসব শুরু হয়েছে। নতুন মুখ দেখা যাচ্ছে এলাকায়। তারা দিনে টার্গেট করে রাতে চুরি করছে।”

স্থানীয় ডা. শেখ ফরিদ ও শিক্ষক আনোয়ার হোসেনসহ অনেকে বলেন, “চুরি বেড়ে যাওয়ার বড় কারণ মাদক। মাদকাসক্তরা টাকার জন্য চুরি করছে। পুলিশের রাতের টহল জোরদার করতে হবে, পাশাপাশি সামাজিক উদ্যোগও নিতে হবে।”

একুশে সংবাদ/এ.জে