রাজশাহীর তানোরে ইউনিয়ন পরিষদের মাসিক দুস্থ ও অসহায় জনসাধারণ (ভিডাব্লিউভি) প্রকল্পের আওতায় খাদ্য গুদামের প্রতি বস্তায় চাল তিন থেকে পাঁচ কেজি কম দেওয়া সংক্রান্ত বিষয় জানতে চাওয়া বা প্রতিবাদ করার কারণে কামারগাঁ ইউপি চেয়ারম্যান সুফি কামাল মিন্টুকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। গুদামের মূল গেটে তালা মেরে তাকে আটকে রাখা হয় বলে জানা গেছে।
ঘটনা বুধবার সকাল প্রায় ১১টায় কামারগাঁ খাদ্য গুদামে ঘটে। গুদামের কর্মকর্তা আতিকুর রহমানের ভাড়া করা মশিউর রহমান ইউপি চেয়ারম্যানকে স্যান্ডেল দিয়ে পিটিয়ে লাঞ্ছিত করেন। মশিউর রহমান কামারগাঁ গ্রামের সিরাজ শেখের ছেলে। ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়রা খাদ্য গুদামের মূল গেটের সামনে অবস্থান নেয়। পরে সংবাদ পেয়ে উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা ও পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। স্থানীয়দের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
চেয়ারম্যান সুফি কামাল মিন্টু জানান, বুধবার সকালে ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের ৪৫৪ জন দুস্থকে ৩০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হবে। সকাল ৯টার দিকে ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম রাজা ও কয়েকজন মেম্বার খাদ্য গুদাম থেকে চাল উত্তোলন করে ইউপি পরিষদে নিয়ে আসে। বস্তা ওজন করার সময় দেখা যায় ৫০ কেজির প্রতিটি বস্তায় ৩–৪ কেজি করে চাল কম রয়েছে। পরে খাদ্য গুদামের কর্মকর্তা আতিকুর রহমান ওসিএলএসডির কাছে বিষয়টি জানতে চাওয়া মাত্রই মশিউর রহমান স্যান্ডেল দিয়ে চেয়ারম্যানকে আঘাত করে এবং মূল গেটে তালা মেরে আটকে রাখে। এরপর চেয়ারম্যান ইউএনওকে অবহিত করেন। কিছুক্ষণের মধ্যে উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা উপস্থিত হয়ে তাকে মুক্ত করেন। চালের বস্তা পুনরায় ওজন করে কমের সত্যতা নিশ্চিত করা হয় এবং অতিরিক্ত ৬ বস্তা চাল জরিমানা হিসেবে দেওয়া হয়।
কামারগাঁ খাদ্য গুদামের কর্মকর্তা আতিকুর রহমান দাবি করেন, “চাল বের হওয়ার পর আমার দায়িত্ব নেই। চেয়ারম্যান আমাকে লাঞ্ছিত করেছেন। পরে আমাকে উদ্ধার করতে মশিউর উপস্থিত হন। ওই সময় চেয়ারম্যানকে স্যান্ডেল দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। গুদাম থেকে চাল বের হওয়ার পর জরিমানা দেওয়া হয়েছে কারণ তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নির্দেশ দিয়েছেন।”
স্থানীয়রা এবং ইউপি সদস্যরা অভিযোগ করেছেন, “একজন খাদ্য গুদামের কর্মকর্তা কীভাবে চেয়ারম্যানকে লাঞ্ছিত করতে পারেন তা ভেবে অবাক লাগে। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তিনি নানা ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছেন। সাধারণ মানুষ চরম হয়রানির শিকার হচ্ছেন। চাল তুলতে গেলে টাকা ছাড়া কোনো সহযোগিতা নেই। টাকা না দিলে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করানো হয় এবং প্রতিবাদ করলে বিভিন্ন নেতার ভয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়।”
উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা শেখ মলিউজ্জামান সজিব ঘটনাটি নিশ্চিত করে বলেন, “ঘটনাটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যাতে ভবিষ্যতে খাদ্য গুদামের ভিতরে এমন ঘটনা আর না ঘটে।”
পীরগঞ্জ থানার ওসি আফজাল হোসেন জানান, “সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। পরিস্থিতি বর্তমানে স্বাভাবিক রয়েছে। এঘটনায় কোনো পক্ষ অভিযোগ দায়ের করেনি। অভিযোগ পেলেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
একুশে সংবাদ/এ.জে



একুশে সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

