রাজশাহী জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ আলী সরকারের হিমাগারে তিনজনকে ডেকে নিয়ে নির্যাতনের মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এতে নিরাপত্তাহীনতায় পড়েছেন মামলার বাদী। নিরাপত্তা চেয়ে তিনি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। বৃহস্পতিবার রাতে রাজশাহীর এয়ারপোর্ট থানায় এই জিডি করা হয়।
জিডিতে মামলার বাদী উল্লেখ করেন, হিমাগারে তিনজনকে নির্যাতনের ঘটনায় গত ৭ অক্টোবর তিনি বাদী হয়ে এয়ারপোর্ট থানায় একটি মামলা করেন। নির্যাতনের শিকার তিনজনকে দেখতে বৃহস্পতিবার তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে গিয়েছিলেন। বাড়ি ফিরে শোনেন, হেলমেট পরিহিত এক ব্যক্তি তাকে বাড়িতে খুঁজতে গিয়েছিলেন।
ওই ব্যক্তি তাকে না পেয়ে তার নানিকে বলে আসেন, তিনি যে মামলা করেছেন তা তুলে নিতে হবে। তা না হলে তাকে প্রাণে মেরে ফেলা হবে। তার নানি যেন তাকে এ কথা জানিয়ে দেন। হুমকি দেওয়া ব্যক্তি বাদীর নানিকে আরও জানিয়ে যান, তার আরও নাতি আছে। তারা সবাইকেই চেনেন। মামলা না তুললে তাদেরও ক্ষতি হবে। এতে তারা এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
মামলার বাদী বলেন, ‘ঘটনার দিন বিকেলেই যে মামলা রেকর্ড হওয়ার কথা, সেটা রেকর্ড করতে পুলিশ রাত ৯টা পর্যন্ত বাজিয়ে দেয়। লম্বা এই সময়ে আসামিপক্ষ লোক পাঠিয়ে আমাদের মোটা টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেন মামলা না করার জন্য। পুলিশই মামলা রেকর্ড করতে বিলম্ব করে তাদের এ সুযোগ করে দিয়েছিল। আমরা টাকার কাছে বিক্রি না হয়ে মামলা করেছি। এখন মামলা তুলে নিতে আমাদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় পড়েছি।’
জানতে চাইলে এয়ারপোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফারুক হোসেন শুক্রবার বলেন, ‘নির্যাতনের মামলাটি যে উপপরিদর্শক (এসআই) তদন্ত করছেন, তাকেই জিডিটি তদন্ত করতে দেওয়া হয়েছে। তিনি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন। বাদীর ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই।’
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার সকালে রাজশাহীর পবা উপজেলার বায়া এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ আলী সরকারের হিমাগারে ডেকে নিয়ে এক তরুণ (২৭), এক নারী (৩০) ও এক কিশোরীকে (১৩) নির্যাতন করা হয়। তাঁদের মধ্যে ওই তরুণ একটি মেডিকেল কলেজের পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী। ওই নারী ও কিশোরী তাঁর খালাতো বোন। তাঁদের আটকে রেখে মারধরের পাশাপাশি শরীরের বিভিন্ন স্থানে সেফটিপিন ফুটিয়েও নির্যাতন করা হয়।
আর এ ঘটনা ঘটান মোহাম্মদ আলী সরকারের ছেলে আহসান উদ্দিন সরকার জিকো (৪৫), মেয়ে আঁখি (৩৫) ও হাবিবা (৪০)। তাদের অভিযোগ, বাবা মোহাম্মদ আলী সরকারের সঙ্গে ওই নারীর অনৈতিক সম্পর্ক আছে। তাই তাদের ডেকে নিয়ে নির্যাতন করা হয়।
নির্যাতনের বিষয়টি জানতে পেরে স্থানীয়রা বিক্ষোভ করেন। হিমাগারের অফিসকক্ষে ভাঙচুর হয়। পরে তিনজনকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়। আর অবরুদ্ধ থাকা তিনজনকে গ্রেপ্তার করে থানায় নেয় পুলিশ। তবে পরদিন তারা আদালত থেকে জামিন পেয়ে যান।
মামলার বাদীর অভিযোগ, পুলিশ দুর্বল ধারা দিয়ে মামলা রেকর্ড করেছে। তাই তারা জামিন পেয়েছেন। আসামিদের মধ্যে দুই বোন হাবিবা ও আঁখি দেশের বাইরে থাকেন। জামিন পাওয়ায় তারা পালিয়ে যাবেন বলে তিনি আশঙ্কা করছেন। এ জন্য তিনি আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে আবেদন করবেন যেন আসামিরা দেশত্যাগ করতে না পারেন।
বাদীকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে মামলার আসামি আহসান উদ্দিন সরকার জিকোকে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। তাই এ বিষয়ে তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
একুশে সংবাদ/এ.জে



একুশে সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

