পঞ্চগড়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মহালয়া উৎসবের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিদুর রহমান কর্তৃক লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন ৬–৭ জন সাংবাদিক। একই সময় প্রকাশ্যে সাংবাদিকদের ‘সন্ত্রাসী’ বলেও গালিগালাজ করেন তিনি। এ ঘটনায় স্থানীয় সাংবাদিকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে।
রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বোদা উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের করতোয়া নদীর আউলিয়ার ঘাট এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটে। সেতু না থাকায় মহালয়ার অনুষ্ঠানের সংবাদ সংগ্রহে নদী পার হতে যাচ্ছিলেন সাংবাদিকরা। সেই ঘটনার একটি ভিডিও ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
ভুক্তভোগী সাংবাদিকরা জানান, ২০২২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর করতোয়া নদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় ৭১ জনের মৃত্যু হয়। তার তৃতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে এবং মহালয়া অনুষ্ঠানের সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে কর্তব্যরত ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিদুর রহমান তাদের নদী পার হতে বাধা দেন। এ সময় নৌকায় অন্যান্য ব্যক্তিদের মোটরসাইকেল পারাপার হতে দেখা গেলেও সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে তিনি অনুমতি দেননি। তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে সাংবাদিকরা বিষয়টি ক্যামেরায় ধারণ করলে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, “আপনারা সন্ত্রাসী।”
ঘটনার ভিডিওতে দেখা যায়, ম্যাজিস্ট্রেট সাংবাদিকদের নদী পার হতে বাধা দেন, অথচ তখন নদীতে একাধিক নৌকা চলাচল করছিল এবং সেগুলোতে মোটরসাইকেলও পার হচ্ছিল। সাংবাদিকরা প্রশ্ন তুললে—“যখন অন্যরা মোটরসাইকেল পার হচ্ছে, আমরা কেন নিউজের কাজে যেতে পারব না?”—তিনি আরও ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, “আপনি আল জাজিরা, বিবিসি বাংলা বা আন্তর্জাতিক যেই সাংবাদিকই হন না কেন, এতে আমার যায় আসে না, যেতে পারবেন না।” এর কিছুক্ষণ পরই তিনি অশালীনভাবে সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, “আপনারা সন্ত্রাসী।” শতাধিক মানুষের সামনে এমন আচরণে স্থানীয় সাংবাদিকরা তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানান।
বাংলাভিশন টেলিভিশনের সাংবাদিক মোশারফ হোসেন বলেন, “আমরা নিজেদের পরিচয় দেওয়ার পরও ম্যাজিস্ট্রেট রেগে গিয়ে বলেন, ‘আল জাজিরা হোন, বিবিসি হোন, কিছু যায় আসে না। আপনারা যেতে পারবেন না।’ পরে বলেন, ‘আপনারা তো সন্ত্রাসী।’”
ঢাকা পোস্টের জেলা প্রতিনিধি নূর হাসান জানান, “ঘাটে তখন ভিড়ও ছিল না, অন্যরা মোটরসাইকেলসহ পার হচ্ছিলেন, এমনকি ইউএনওও যাচ্ছিলেন। অথচ আমাদের ক্ষেত্রেই বাধা দেওয়া হলো।”
ঘটনার সময় উপস্থিত বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রবিউল ইসলাম সাংবাদিকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন।
পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক (ডিসি) সাবেত আলী সাংবাদিকদের জানান, “বিষয়টি জানার পর ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিদুর রহমানকে ঘটনাস্থলের সার্বিক দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।”
তবে অভিযুক্ত ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিদুর রহমান দাবি করেন, “ঘাট এলাকায় পূর্বে একটি বড় নৌকা দুর্ঘটনা ঘটেছিল। তাই নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা কঠোরভাবে দায়িত্ব পালন করছিলাম। নৌকায় মোটরসাইকেল নিয়ে কাউকে পার হতে দেওয়া হয়নি।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, “সাংবাদিকরা আমাকে নানা কথা বলেন এবং ভিডিও করতে থাকেন।”
তবে স্থানীয় সাংবাদিকদের দাবি, ঘাট দিয়ে অন্যরা মোটরসাইকেলসহ নদী পার হয়েছেন। এ বিষয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের বক্তব্য, “ওইসব মানুষ পাশের অন্য জায়গা থেকে নৌকায় নদী পার হয়েছেন।”
একুশে সংবাদ/প.প্র/এ.জে