AB Bank
  • ঢাকা
  • বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ২ আশ্বিন ১৪৩২

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী : এক আলোকবর্তিকা ও সংগ্রামী সাধক


Ekushey Sangbad
আসগর সালেহী, চট্টগ্রাম
১১:৩০ এএম, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী : এক আলোকবর্তিকা ও সংগ্রামী সাধক

আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী একটি নাম, একটি ইতিহাস, সংগ্রাম ও আপোষহীন বিদগ্ধ জননেতার নাম।তিনি শুধু একজন আলেম নন, বরং একাধারে সমাজসংস্কারক, চিন্তাবিদ ও ইসলামী আন্দোলনের রাহবার এবং বাতিল ফিরকার জন্য আতঙ্ক।

তিনি ১৯৩৫ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ফটিকছড়ি উপজেলার বাবুনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর সম্মানিত পিতার নাম আল্লামা হারুন বাবুনগরী (রহ.) এবং পিতামহের নাম হযরত সুফী আজিজুর রহমান (রহ.)।

ইতিহাস বলছে—তাঁর পূর্বপুরুষগণ সুদূর আরব থেকে চট্টগ্রামে আগমন করে প্রথমে দক্ষিণ চট্টগ্রামে বসতি স্থাপন করেন, পরে ফটিকছড়ির নিচিন্তাপুর হয়ে বাবুনগর গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।

তাঁদের বংশপরম্পরা চতুর্দশ পুরুষে গিয়ে সুফি সাধক শেখ বুরহানুদ্দীন সিদ্দিকীর সঙ্গে যুক্ত হয়, যিনি হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাযি.)-এর বংশধর ছিলেন। এ সূত্রেই তাঁদের পরিবার “সিদ্দিকী” উপাধি ধারণ করে। এই ইলমি ও আধ্যাত্মিক ধারা থেকে সুফি আজিজুর রহমান (রহ.) দারুল উলূম হাটহাজারীর গোড়াপত্তনে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন এবং তাঁর চার সন্তানই যুগশ্রেষ্ঠ আলেমে রাব্বানী ও ওলিয়ায়ে কামিলে পরিণত হন।

তাঁদের মধ্যে আরেফে রাব্বানী আল্লামা শাহ হারুন বাবুনগরী (রহ.) ছিলেন জামিয়া ইসলামিয়া আজিজুল উলূম বাবুনগরের প্রতিষ্ঠাতা এবং আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী (হাফিজাহুল্লাহ) তাঁরই যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে দীনি খেদমতে অগ্রসরমান রয়েছেন।

ছোটবেলা থেকেই তিনি কুরআন-হাদীস ও দ্বীনের প্রতি অনুরাগী ছিলেন। পারিবারিক পরিবেশ, গ্রামের সাধারণ জীবনযাত্রা ও ধার্মিক আবহ তাঁকে ইসলামী জ্ঞানের পথে এগিয়ে দেয়। অল্প বয়সেই তীক্ষ্ণ মেধা ও প্রখর স্মৃতিশক্তির পরিচয় দেন, যা পরবর্তীতে তাঁকে ইলমে নববীর একজন অনন্য খেদমতগারে পরিণত করে। শৈশব থেকেই তাঁর মাঝে ছিল অদম্য সাহস, সত্য বলার দৃঢ়তা এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার মানসিকতা।

প্রাথমিক শিক্ষার পর তিনি দারুল উলূম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসায় ভর্তি হন। সেখানেই উস্তাদদের ছায়ায় দীনি জ্ঞানের বিস্তৃত ভুবনে প্রবেশ করেন। ফিকহ, তাফসীর, হাদীস, আরবি সাহিত্য ও যুক্তিবিদ্যায় তাঁর অসাধারণ মেধার প্রকাশ ঘটে।

পরবর্তী সময়ে দারুল উলূম দেওবন্দে গমন করে বিশ্ববরেণ্য ওলামায়ে কেরামের সাহচর্য লাভ করেন। সেখানে তিনি বৃটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা আল্লামা সাইয়্যিদ হুসাইন আহমদ মাদানী (রহ.)-সহ তৎকালীন দেওবন্দের শীর্ষ আসাতিজায়ে কেরামের সান্নিধ্য পান।

দীর্ঘ অধ্যয়ন শেষে তিনি দারসে হাদীসে খ্যাতি অর্জন করেন। দেশে ফিরে শিক্ষকতা শুরু করেন এবং অচিরেই শায়খুল হাদীস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন। তাঁর বয়ান ছিল হৃদয়গ্রাহী, গবেষণামূলক ও ছাত্রদের অন্তরে দীনের প্রতি গভীর অনুরাগ জাগানোর অনন্য মাধ্যম।

শিক্ষক জীবনে তিনি বিশেষভাবে হাদীস ও তাফসীরের ময়দানে অবদান রাখেন। সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিমসহ গুরুত্বপূর্ণ কিতাব তিনি দীর্ঘকাল ধরে পড়িয়েছেন। তাঁর দারস ছিল গভীরতা ও প্রাঞ্জলতার মিশ্রণ, যেখানে শিক্ষার্থীরা শুধু কিতাবের জ্ঞানই নয়, বরং বাস্তব জীবনে ইসলামের অনুশীলনের অনুপ্রেরণাও পেত।

জামিয়া ইসলামিয়া বাবুনগর মাদরাসাকে তিনি একটি পূর্ণাঙ্গ দ্বীনি শিক্ষাকেন্দ্রে রূপ দেন। তাঁর অক্লান্ত প্রচেষ্টায় মাদরাসার খ্যাতি শুধু দেশে নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ছড়িয়ে পড়ে। পাশাপাশি তিনি বেফাকুল মাদারিস ও হাইয়াতুল উলয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশের নেতৃত্বে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। ইসলামী শিক্ষার মানোন্নয়নে এবং কওমি মাদরাসাগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান ছিল অসামান্য।

জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তিনি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর এবং বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক নির্বাচিত হন।

আন্দোলন, মিছিল-মিটিং ও দাবিদাওয়ার ময়দানে তিনি আপোষহীন নেতৃত্বের পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন। ইসলামী স্বার্থবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ডে কখনো সমঝোতা করেননি, বরং সাহসিকতার সঙ্গে সত্যের পক্ষে কণ্ঠ উচ্চারণ করেছেন।

আল্লামা বাবুনগরী ছিলেন রাজনৈতিকভাবে প্রাজ্ঞ ও দূরদর্শী। পাকিস্তান আমল থেকে তিনি দেশের রাজনীতির ঘটনাপ্রবাহ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতেন। যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের অভিজ্ঞতা, নেজামে ইসলাম পার্টির উত্থান-পতন এবং স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ের রাজনৈতিক অস্থিরতা তাঁকে ভিন্নধর্মী চিন্তায় উদ্বুদ্ধ করে।

তাঁর বয়ান ছিল আপোষহীন, স্পষ্টভাষী এবং হৃদয়কাড়া। তিনি কোনো দল বা গোষ্ঠীর চাপে কখনো সত্য গোপন করেননি। লা-মাযহাবী, কাদিয়ানী, সাদিয়ানী ও জামায়াতে ইসলামী প্রতিষ্ঠাতা মওদূদী চিন্তাধারার বিরুদ্ধে তিনি প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়েছেন। আওয়ামি লীগ কিংবা জামায়াত—কোনো রাজনৈতিক দলকেই তিনি দ্বীনবিরোধী কর্মসূচির ক্ষেত্রে ছাড় দেননি।

ব্যক্তিগত জীবনে তিনি সাদাসিধে, বিনয়ী ও দুনিয়াবিমুখ একজন বুজুর্গ আলেম। বড় কোনো উপাধি বা খেতাবের মোহ তাঁকে আকৃষ্ট করেনি। ছাত্র, শিক্ষক, মুরিদ ও সাধারণ মানুষ—সবার সঙ্গেই তিনি অত্যন্ত মমতা ও ভদ্রতায় মিশতেন।

তাকওয়া, ইবাদত-বন্দেগি, আখলাকে হাসানাহ ও আখেরাতনিষ্ঠা ছিল তাঁর চরিত্রের মূল বৈশিষ্ট্য। সাহাবায়ে কেরাম ও মাশায়েখদের জীবনাদর্শ তিনি নিজ জীবনে বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছেন।

আল্লামা বাবুনগরী দাঃবাঃ একাধারে জ্ঞান, আধ্যাত্মিকতা ও সংগ্রামের আলোকবর্তিকা—যার জীবন থেকে বর্তমান ও আগামী প্রজন্ম প্রেরণা লাভ করবে। তাঁর নাম ইতিহাসের পাতায় দীপ্ত অক্ষরে লেখা থাকবে।

 

একুশে সংবাদ/এ.জে

সর্বোচ্চ পঠিত - সারাবাংলা

Link copied!