রাজশাহীর তানোরসহ বৃহত্তর বরেন্দ্র অঞ্চলে চলতি মৌসুমে আমণখেতে ইঁদুরের উপদ্রবে কৃষকরা রীতিমতো দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
জানা গেছে, এ বছর আমণ মৌসুমে ইঁদুরের আক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ফলে চাষিদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে যাচ্ছে। ইঁদুর তাড়াতে কৃষকরা ব্যবহার করছেন কলাগাছ, পলিথিন ও অডিও ক্যাসেটের ফিতা।
তানোরের শুকদেবপুর গ্রামের চাষি আলম মণ্ডল (৩২) জানান, তিনি খেতে কলাগাছ ও লাঠি পুঁতে তাতে পলিথিন ব্যাগ ও ক্যাসেটের ফিতা ঝুলিয়ে কিছুটা সফলতা পেয়েছেন। চাঁন্দুড়িয়া ইউনিয়নের বেড়লপাড়া গ্রামের কৃষক জলিল (৩৩) বলেন, “চার বিঘা জমিতে আমণ চাষ করেছি। আবহাওয়া ভালো থাকায় ধানও ভালো হয়েছিল। কিন্তু খেতের বেশিরভাগ ধান ইঁদুর কেটে নষ্ট করেছে। কৃষি বিভাগ থেকেও তেমন কোনো পরামর্শ পাইনি।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কৃষি কর্মকর্তা জানান, আমণের শেষ সময়ে বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি ইঁদুরের উপদ্রব বেড়েছে। তিনি বলেন, শুধু বিষটোপ নয়; খেতে কলাগাছ, বাঁশ বা লাঠিতে পলিথিন বেঁধে দেওয়া কিংবা রাতে টায়ার পোড়ানোর মতো পদ্ধতি ব্যবহার করলে উপদ্রব কিছুটা কমে।
রাজশাহী ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের এক কৃষি বিশেষজ্ঞ জানান, ইঁদুর দ্বারা দেশে প্রতিবছর প্রায় ৭০০ কোটিরও বেশি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ইঁদুরের কারণে ধান, চাল ও অন্যান্য ফসলের ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭২৩ কোটি ৬২ লাখ টাকা। আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০২৩ সালের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ইঁদুর বছরে ৫০ থেকে ৬০ লাখ মানুষের এক বছরের খাবার নষ্ট করে। তাই কৃষকদের সচেতন হয়ে ইঁদুর দমন করতে হবে।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে রাজশাহী জেলায় প্রায় ৭০ হাজার ২২৪ হেক্টরে আমণের চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ হাজার হেক্টরে পোকা দমনের অংশ হিসেবে পাচিং-লগ, লাইন পদ্ধতি ও ধনিচা চাষ করা হয়েছে। রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ মিলিয়ে এ অঞ্চলে মোট চাষাবাদ হবে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ হেক্টরের বেশি।
তানোর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ আহমেদ বলেন, “ইঁদুর একটি জাতীয় সমস্যা। ইঁদুর যা খায় তার চেয়ে বেশি ফসল নষ্ট করে। তাই কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, বিভিন্ন দমন পদ্ধতি প্রয়োগ করে ইঁদুরকে পুরোপুরি নির্মূল করতে হবে, যাতে তারা আর বংশবিস্তার করতে না পারে।”
একুশে সংবাদ/রা.প্র/এ.জে