ঢাকার ধামরাই পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ছোট চন্দ্রাইল এলাকা বছরের অধিকাংশ সময় জলাবদ্ধতায় ডুবে থাকে। তিন শতাধিক পরিবার প্রায় তিন বছর ধরে পানিবন্দি অবস্থায় চরম দুর্ভোগের মুখে। সঠিক পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় নষ্ট হচ্ছে এলাকার পরিবেশ, বাড়ছে রোগবালাই। দ্রুত এ দুর্ভোগ লাঘবে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে স্থানীয়রা। উপজেলা প্রশাসনও এই ভোগান্তি দূর করতে উদ্যোগ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।
এলাকাবাসী জানিয়েছেন, ২০১৬ সালে ধামরাই পৌরসভা ক’ শ্রেণীতে উন্নীত হলেও আশানুরূপ সেবা তারা পাচ্ছে না। তালতলা কমিশনার মোড় থেকে ছোট চন্দ্রাইল হয়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক পর্যন্ত রাস্তায় পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বছরের অধিকাংশ সময় জলাবদ্ধতা থাকে। তিন শতাধিক পরিবার, তিনটি স্কুল ও একটি মাদ্রাসার সহস্রাধিক শিক্ষার্থী প্রতিদিন ময়লা পানি পেরিয়ে যাতায়াত করছে। এতে ডায়রিয়া, চর্মরোগ, জ্বরসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা। সামান্য বৃষ্টিতেই ঘরে পানি ঢুকে যায়, অনেকের ঘর ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অভিযোগ সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি—এমনটিই অভিযোগ ভুক্তভোগী এলাকাবাসীর।
রাজিয়া আক্তার নামে এক গৃহবধূ বলেন, “আমার স্বামী অটোরিকশা চালান, সেটা বাড়িতে আনা যায় না। খুব সমস্যা, বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারে না। আমরা বাসা থেকে বের হতে পারি না। পানি ঘরের গেট পর্যন্ত। বর্জ্যের পানিতে সবসময় দুর্গন্ধ থাকে। আমরা এই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি চাই।”
রাহেলা খাতুন নামের আরেক গৃহবধূ বলেন, “রাস্তা অনেক দিন ধরে পঁচা পানিতে ভরা। ৩-৪ বছর হলো। পানি নিষ্কাশনে কোনো ব্যবস্থা নেই। এলাকার মানুষ নিজ উদ্যোগে পরিষ্কার করলেও কয়েক দিনের মধ্যে আগের মতোই হয়ে যায়। আমাদের ৩-৪টি ঘর নষ্ট হয়ে গেছে। পানিতে দাঁড়িয়ে রান্না করি। বাচ্চাদের চুলকানি রোগ সারে না। আর ঠান্ডাজ্বর তো রয়েছেই। আমরা খুব অসহায় অবস্থায় আছি।”
ফজলুর রহমান নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “গত তিন বছর ধরে এই পানি রাস্তায়। সামান্য বৃষ্টি হলে ঘরে ঢুকে যায়। দুর্গন্ধ থাকে। সবাই খুব কষ্টে আছে। বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারে না। হাঁটাও যায় না। আমরা প্রশাসনের কাছে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।”
এদিকে, দুর্ভোগ নিরসনে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ ও দীর্ঘমেয়াদি পানি নিষ্কাশন পরিকল্পনা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ।
ধামরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও ধামরাই পৌরসভার প্রশাসক মো. মামনুন হাসান অনীক বলেন, “৯ নম্বর ওয়ার্ডের জ্যোতিবিদ্যা নিকেতন থেকে কমিশনার মোড় পর্যন্ত যে সড়ক রয়েছে, সেটি কিছুদিন ধরে পানির নিচে তলিয়ে আছে। এটি ৫-৭ বছর আগে একবার সংস্কার করা হয়েছিল, তবে সাম্প্রতিক সময়ে কোনো কাজ হয়নি। ফলে মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। অল্প সময়ের মধ্যে আমরা মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠাব। আশা করছি বরাদ্দ পেলে দ্রুত মানুষের দুর্ভোগ লাঘব হবে।”
একুশে সংবাদ/ঢা.প্র/এ.জে