জয়পুরহাট জেলার কালাই উপজেলায় এক সহকারী শিক্ষক ঋণের বোঝা সইতে না পেরে জয়পুরহাট সদর উপজেলার পুরানাপৈল রেলগেটে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। নিহত শিক্ষক মো. ফারুক হোসেন (৪৯) কালাই উপজেলার হারুঞ্জা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। তিনি উপজেলার হারুঞ্জা পূর্বপাড়া এলাকার মৃত লৎফর রহমানের ছেলে।
বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৭টার দিকে পুরানাপৈল রেলগেটে এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে জয়পুরহাট সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহ উদ্ধার করে এবং পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সান্তাহার রেলওয়ে থানাকে অবহিত করে।
পরিবার ও প্রতিবেশীদের সূত্রে জানা গেছে, ফারুক হোসেন দীর্ঘদিন ধরে পক্ষাঘাতজনিত (প্যারালাইসিস) রোগে ভুগছিলেন। এক হাত সম্পূর্ণ অবশ থাকায় স্বাভাবিক চলাফেরাতেও তার কষ্ট হতো। অসুস্থতার কারণে নিয়মিত চিকিৎসা ও ব্যয়বহুল ওষুধের খরচ চালাতে গিয়ে তিনি বিভিন্ন এনজিও, সমবায় সমিতি ও স্থানীয় মহাজনদের কাছ থেকে একাধিকবার ঋণ নেন। অভাব-অনটনের কারণে তার মাসিক বেতনের বেশিরভাগ অংশই কিস্তি ও উচ্চ সুদের হফকা ঋণ পরিশোধে ব্যয় হয়ে যেত। ফলে সংসার চালাতে গিয়ে তাকে চরম আর্থিক সংকটে পড়তে হয়। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের কোনো পথ না দেখে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন তিনি।
বুধবার বিকেলে বিদ্যালয় ছুটির পর বাড়িতে ফিরে পরিবারের কাউকে কিছু না জানিয়ে তিনি বাইরে বের হয়ে যান। পরে জয়পুরহাট শহর হয়ে পাঁচবিবি যাওয়ার পথে পুরানাপৈল রেলগেটে গিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা চিলাহাটিগামী বরেন্দ্র এক্সপ্রেস ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়েই ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
নিহতের স্ত্রী শারমিন আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমার স্বামী ঋণের বোঝা আর মানসিক চাপ সইতে না পেরে এই পথ বেছে নিয়েছে। এখন আমি সন্তানদের নিয়ে কিভাবে চলব? ওরা বাবাকে হারাল, আমি হারালাম স্বামীকে।”
তার সহকর্মী ও গ্রামের বাসিন্দা সাহাবুল হক সুফল বলেন, “ফারুক স্যারের ঋণের বোঝা ছিল, এটা আমরা জানতাম। কিন্তু সে যে এতটা অসহায় হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেবে, তা ভাবতেই পারছি না। এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের বিষয়।”
জয়পুরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তামবিরুল ইসলাম বলেন, “ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন শিক্ষক ফারুক হোসেন। আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করি এবং রেলওয়ে থানা কর্তৃপক্ষকে জানাই।”
সান্তাহার রেলওয়ে থানার ওসি হাবিবুর রহমান বলেন, নিহতের পরিবারের অনুরোধে মরদেহ তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ না থাকায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়েছে।
একুশে সংবাদ/জ.প্র/এ.জে
 
    
 
                        

 
                                         
                                             
                                                        
                             একুশে সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
একুশে সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন 
												 
												 
												 
												 
												 
												 
												 
												 
                                             
                                             
                                             
                                            
