মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ফিলিপাইন থেকে আমদানিকৃত উচ্চফলনশীল এমডি-২ জাতের আনারস পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করে সফল হয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। এই সাফল্য দেশের কৃষি অর্থনীতিতে নতুন দিগন্ত উন্মোচনের সম্ভাবনা তৈরি করেছে বলে মনে করছে কৃষি বিভাগ।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার ৬নং আশিদ্রোন ইউনিয়নের রাধানগর, ডলুছড়া ও মহাজিরাবাদ এলাকায় প্রায় পাঁচ হেক্টর জমিতে এই জাতের আনারস চাষ করা হয়েছে। চায়ের রাজ্যে বিদেশি জাতের আনারস প্রথমবারই গুণ, মান ও স্বাদে সবাইকে চমকে দিয়েছে।
স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছেন, এমডি-২ আনারস পাকার পর ১০–১৫ দিন পর্যন্ত রাখা যায়, যা দেশি আনারসের তুলনায় অনেক বেশি। এছাড়া, খেতে সুস্বাদু, কম ঝালাপোড়া এবং চাষের খরচও তুলনামূলক কম। ডলুছড়া গ্রামের কৃষক আতর আলী ২২ শতাংশ জমিতে ২ হাজার ২৫০টি চারা রোপণ করেছেন এবং ইতিমধ্যেই প্রায় অর্ধ লক্ষ টাকার আনারস বিক্রি করেছেন। মহাজিরাবাদ গ্রামের শফিক মিয়া ৩০ শতাংশ জমিতে ২ হাজার ৫০০ চারা রোপণ করেছেন এবং ভালো ফলন পেয়ে সন্তুষ্ট।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি অফিস জানিয়েছে, মৌলভীবাজারসহ টাঙ্গাইল, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি জেলায় প্রথমবারের মতো ফিলিপাইনের এমডি-২ আনারস পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করা হয়েছে। এই সাত জেলায় মোট ৩৮০ জন চাষিকে ২ হাজার ২৫০টি করে চারা বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছিল। সব জেলায় পরীক্ষামূলক চাষ সফল হয়েছে, তবে শ্রীমঙ্গলের আনারস মান, স্বাদ ও গুণে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
শ্রীমঙ্গল কৃষি অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মাসুকুর রহমান বলেন, “এই অঞ্চলের মাটি এমডি-২ আনারস চাষের জন্য উপযোগী। ফলনশীলতা ও স্বাদ আন্তর্জাতিক মানের।” উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন বলেন, “এই জাতের আনারস হেক্টর প্রতি ১৫–১৬ টন উৎপাদন দেয়। দেশীয় আনারসের তুলনায় বেশি রসালো ও মিষ্টি।”
এমডি-২ আনারস আন্তর্জাতিকভাবে ‘গোল্ডেন সুইট’ বা ‘এক্সট্রা সুইট পাইনআপেল’ নামে পরিচিত এবং ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড ও কোস্টারিকার মতো দেশে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয়। পুষ্টিগুণেও সমৃদ্ধ—ভিটামিন সি, ব্রোমেলিন নামক হজম সহায়ক এনজাইম এবং স্বল্প ক্যালোরি রয়েছে।
মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জালাল উদ্দীন জানান, “এ জাতের আনারস সহজে নষ্ট হয় না, দীর্ঘদিন সংরক্ষণযোগ্য এবং রপ্তানিযোগ্য। এটি বাংলাদেশের আনারস চাষে নতুন দিগন্ত খুলে দিচ্ছে।”
এই সফলতা অব্যাহত থাকলে শ্রীমঙ্গল হয়ে উঠতে পারে উন্নত জাতের আনারস উৎপাদনের সম্ভাবনাময় কেন্দ্র, যা রপ্তানির মাধ্যমে দেশের আয় বৃদ্ধি করবে এবং কৃষকের মুখে হাসি ফোটাবে।
একুশে সংবাদ/মৌ.প্র/এ.জে



একুশে সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

