কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্স আজ (শনিবার) খোলা হয়েছে। শত শত ভক্তের নগদ অর্থ, স্বর্ণ ও বৈদেশিক মুদ্রার ভিড়ের মধ্যেও সবচেয়ে মূল্যবান হিসেবে উঠে এসেছে এক মায়ের অশ্রুভেজা চিঠি।
সাধারণত মানুষ দানবাক্সে টাকা-পয়সা, অলংকার বা অর্ঘ্য দিয়ে থাকে। কিন্তু এই মায়ের চিঠিতে ছিল শুধুই বুকভরা হাহাকার, সন্তানের জন্য অশেষ দুশ্চিন্তা এবং আল্লাহর কাছে অটুট প্রার্থনা।
চিঠির শুরুতেই মায়ের আর্তি— “প্রিয় পাগলা বাবা, আমি আপনার একজন ভক্ত।”
এরপরই ফুটে ওঠে দোয়া আর আকুতির স্রোত— ছেলেকে প্রেমের বাঁধন থেকে ফিরিয়ে আনার মিনতি, কলঙ্ক থেকে রক্ষার আকুতি এবং পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের বাসনা। শুধু ছেলে নয়, মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়েও মায়ের আবেগঘন আবেদন— একটি সুষ্ঠু জীবন, ভালো পাত্র এবং বিশেষভাবে বিসিএস পরীক্ষায় একটি আসনের প্রার্থনা।
চিঠির ভাষা ছিল সরল ও আঞ্চলিক টানে ভরপুর, তবে প্রতিটি শব্দেই ফুটে উঠেছে মায়ের অশেষ মমতা ও অদম্য বিশ্বাস— “পাগলা বাবা গো, নতুন কইরা আর কোনো বিপদ-আপদ না দিয়া বাসার কাজটা শেষ করাইয়া দেন। আমার ছেলেটারে এই মেয়েটার থেকে মনটা পরিবর্তন কইরা দেন। কলঙ্কের হাত থেইকা আমার বাবাটারে বাঁচাইয়েন। আমার মেয়েটারে স্পেশাল বিসিএসের একটা সিট ভিক্ষা নিয়েন। মেয়েটারে কষ্ট দিয়েন না, নিরাশ কইরেন না।”
এ যেন শুধু এক মায়ের প্রার্থনা নয়, বরং বাংলার অসংখ্য মায়ের প্রতিচ্ছবি— যারা সন্তানের সুখ, নিরাপত্তা ও ভবিষ্যতের জন্য সর্বশক্তিমানের কাছে বারবার আকুতি জানান।
শনিবার সকাল ৭টা থেকে হারুয়া এলাকার পাগলা মসজিদের ১৩টি দানসিন্দুক খোলা হয়। সেখানে পাওয়া গেছে রেকর্ড পরিমাণ দান— ৩২ বস্তা টাকা। দানগণনায় অংশ নেন প্রায় চার শতাধিক মানুষ, যাদের মধ্যে ছিলেন মসজিদ কমপ্লেক্সের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, স্থানীয় মাদরাসার ছাত্র ও রূপালী ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
এটাই প্রথম নয়। চলতি বছরের ১২ এপ্রিল খোলা দানবাক্স থেকে পাওয়া গিয়েছিল ৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার ও বৈদেশিক মুদ্রা। এবার আরও তিনটি নতুন দানবাক্স যুক্ত হওয়ায় প্রত্যাশা করা হচ্ছে, দানের মোট সংগ্রহ শত কোটির ঘর ছাড়িয়ে যাবে।
বর্তমানে পাগলা মসজিদের ১৩টি ব্যাংক হিসাবের এফডিআরে জমা আছে প্রায় ৯০ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এর লভ্যাংশ ব্যয় করা হয় গরিব, অসহায় ও অসুস্থ মানুষের কল্যাণে।
দানবাক্স খোলার সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সেনাবাহিনী ও আনসার সদস্যরা, জামায়াতের জেলা আমীরসহ মসজিদ পরিচালনা কমিটির সদস্যরা।
একুশে সংবাদ/কি.প্র/এ.জে