শেরপুরের ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী লোকালয়ে আগে কেবল রাতে বন্য হাতির পাল তাণ্ডব চালালেও এখন দিনেও তা অব্যাহত রেখেছে। এতে আতঙ্কে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন বিপুল সংখ্যক পাহাড়ি হতদরিদ্র মানুষ। প্রায় আড়াই যুগ আগে বন কেটে বিদেশি কাঠগাছের বনায়ন শুরু হওয়ার পর থেকেই এ তাণ্ডব বেড়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রাকৃতিক বন উজাড় করে বিদেশি কাঠগাছ লাগানোর কারণে হাতিরা আশ্রয়স্থল হারিয়েছে। ফলে তারা খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে নেমে আসছে। বর্তমানে হাতির পাল দিন-রাত অবিরাম তাণ্ডব চালাচ্ছে। প্রতিদিন বন্য হাতি দেখতে সীমান্তঘেঁষা পাহাড়ি গ্রামগুলোতে ভিড় করছে উৎসুক জনতা। এতে প্রাণহানির আশঙ্কা বাড়ছে। উপজেলা প্রশাসন ও বন বিভাগ মানুষকে নিরাপদ দূরত্বে থাকার পরামর্শ দিয়েছে।
বন বিভাগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত রবিবার রাত থেকে ঝিনাইগাতী উপজেলার নলকুড়া ইউনিয়নের সন্ধ্যাকুড়া, হলদিগ্রাম, গুমড়া, রাংটিয়া এবং কাংশা ইউনিয়নের ছোট গজনী, বড় গজনী, তাওয়াকুচা গারো পাহাড়ে ৩০-৪০টি বন্য হাতির পাল দিন-রাত অবস্থান করছে। দিনে পাহাড় ও ফসলের খেতে, আর রাতে লোকালয়ে নেমে এসে শস্য ও সবজি ক্ষেত নষ্ট করছে তারা। আতঙ্কিত গ্রামবাসী রাতে মশাল জ্বালিয়ে কিংবা পটকা ফোটিয়ে হাতির পালকে ফেরানোর চেষ্টা করলেও তা ব্যর্থ হচ্ছে।
বুধবার রাতে সরেজমিনে দেখা গেছে, সন্ধ্যাকুড়া এলাকায় হাতির একটি পাল আকাশমনি ও গোলাপ কাঠের বাগানসহ বিভিন্ন সবজি খেতে অবস্থান করছে। এ সময় তারা ধান ও শাকসবজির ক্ষেত পিষে লণ্ডভণ্ড করে ফেলে।
সন্ধ্যাকুড়া গ্রামের কৃষক দেলোয়ার বলেন, “হাতির পাল আমার ২৫ শতাংশ জমির ধান নষ্ট করেছে। অতিকষ্টে সংসার চালাই। হাতির অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি।”
গুমড়া গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, “হাতিরা আমাদের বরবটি ও বেগুনের খেত নষ্ট করছে। আমরা খুব অসহায় হয়ে পড়েছি।”
স্থানীয় কৃষকরা জানান, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী পাহাড়গুলোতে হাতির খাদ্য ও বাসস্থানের অভাবের কারণেই তারা লোকালয়ে আসছে। প্রতিদিন ফসল ও ঘরবাড়ির ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। এতে পাহাড়ি মানুষজন হাতি আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে।
রাংটিয়া বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুল করিম জানান, হাতিদের জন্য সুফল বাগান তৈরি করা হয়েছে, যেখানে লতাপাতা রয়েছে। পাশাপাশি গারো পাহাড়ের প্রতিটি বিটে দুই হাজার করে কলাগাছ রোপণের কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। এতে খাদ্যের সংকট কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, “মূলত খাদ্যের সন্ধানেই বন্য হাতির পাল লোকালয়ে আসে। সীমান্তবর্তী পাহাড়ে পর্যাপ্ত খাদ্যের ব্যবস্থা করতে পারলে তারা আর লোকালয়ে আসবে না। আমরা মানুষকে নিরাপদ দূরত্বে থাকতে বলছি।”
একুশে সংবাদ/শে.প্র/এ.জে



একুশে সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

