জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার ময়েনউদ্দিন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে সময়মতো শ্রেণিকক্ষে না আসার বিষয়ে মন্তব্য করায় ক্ষিপ্ত হয়ে এক শিক্ষক একযোগে ৩৩ জন শিক্ষার্থীকে বেধড়ক মারধর করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক এম এ জি নাফসি তালুকদারকে শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
ঘটনাটি ঘটেছে আজ মঙ্গলবার সকাল পৌনে ১১টার দিকে বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির একটি কক্ষে। জানা গেছে, নির্ধারিত সময় সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে ক্লাস শুরু হলেও সপ্তম শ্রেণির ‘ক’ শাখায় দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক এম এ জি নাফসি তালুকদার তখনো অনুপস্থিত ছিলেন। প্রায় ২৫ মিনিট পর, সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে তিনি শ্রেণিকক্ষে যাচ্ছিলেন। এ সময় পাশের নবম শ্রেণির কিছু শিক্ষার্থী ক্লাস থেকে বের হয়ে বলেন, “স্যার তো কখনোই ঠিক সময়ে আসেন না, আজও দেরি করে আসছেন। কী ক্লাস হবে আর!”
এই মন্তব্যে ক্ষিপ্ত হয়ে শিক্ষক নাফসি তালুকদার নবম শ্রেণির কক্ষে প্রবেশ করে জানতে চান, উক্ত মন্তব্যটি কে করেছে। কোনো শিক্ষার্থী জবাব না দিলে তিনি উপস্থিত ৩৩ জন শিক্ষার্থীকে এলোপাতাড়ি বেত্রাঘাত করেন। এতে সবাই কমবেশি আহত হয়।
আঘাতপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা প্রথমে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের কাছে অভিযোগ করলে তিনি ব্যবস্থা নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) কাছে অভিযোগ করার পরামর্শ দেন। পরে শিক্ষার্থীরা দলবদ্ধ হয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামিমা আক্তার জাহানের কাছে সরাসরি অভিযোগ করেন।
অভিযোগ পাওয়ার পর ইউএনও তাৎক্ষণিকভাবে প্রধান শিক্ষককে অভিযুক্ত শিক্ষককে শোকজ করার নির্দেশ দেন। প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম বকুল জানান, নির্দেশ অনুযায়ী শিক্ষক এম এ জি নাফসি তালুকদারকে শোকজ করা হয়েছে এবং তিন কার্যদিবসের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
ঘটনায় আহত শিক্ষার্থী আকিব হোসেনের বাবা আবু কালাম বলেন, “শিক্ষক অপরাধ করবেন, আবার শিক্ষার্থীদের মারধর করবেন—এটা মেনে নেওয়া যায় না। একজন শিক্ষকের কাছ থেকে এমন আচরণ অগ্রহণযোগ্য। আমরা অভিভাবকরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।”
অভিযুক্ত শিক্ষক এম এ জি নাফসি তালুকদার বলেন, “কোনো ব্যক্তিগত রাগ বা ক্ষোভ থেকে নয়, শাসনের উদ্দেশ্যেই শিক্ষার্থীদের বেত্রাঘাত করেছি।”
এ প্রসঙ্গে ইউএনও শামিমা আক্তার জাহান বলেন, “শিক্ষার্থীদের মারধরের অভিযোগ পেয়েছি। অভিযুক্ত শিক্ষককে শোকজ করতে বলা হয়েছে। জবাব পাওয়ার পর বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকেও জানানো হয়েছে।”
এ ঘটনায় বিদ্যালয়ের পরিবেশে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। অভিভাবক ও সচেতন মহল দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে কোনো শিক্ষকের পক্ষ থেকে এ ধরনের আচরণ আর না ঘটে।
একুশে সংবাদ/জ.প্র/এ.জে