চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসন গ্রাম পর্যায়ে গণশুনানি শুরু করেছে, যার মাধ্যমে জনগণের দৌরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেওয়ার অঙ্গীকার বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর ধারাবাহিকতায় আজ সকালে সীতাকুণ্ড উপজেলার ১০ নম্বর সলিমপুর ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হলো ব্যতিক্রমী এই আয়োজন। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে উপজেলা প্রশাসন, সীতাকুণ্ড।
প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ফরিদা খানম। বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. সাদি উর রহিম জাদিদ। সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফখরুল ইসলাম এবং সঞ্চালনায় ছিলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্লাহ আল মামুন। এ সময় উপজেলার বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের প্রধানরাও উপস্থিত ছিলেন।
চট্টগ্রাম জেলার ১৯১টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে বর্তমানে ৭৫টিতে জনপ্রতিনিধি না থাকায় প্রশাসনের মাধ্যমে সরাসরি সেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসন সরাসরি ইউনিয়ন পর্যায়ে গিয়ে জনগণের সমস্যা শুনে তাৎক্ষণিক সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছে। দিনব্যাপী গণশুনানিতে সলিমপুর ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ বিভিন্ন সমস্যা ও অভিযোগ তুলে ধরেন। জেলা প্রশাসক মনোযোগ দিয়ে তা শুনে সমাধানযোগ্য বিষয়গুলো নিষ্পত্তি করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। ভূমি সংক্রান্ত জটিলতা, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষার মান উন্নয়ন, রাস্তা মেরামত, বিদ্যুৎ সংযোগ, আইনশৃঙ্খলা ও মাদক নিয়ন্ত্রণের বিষয়গুলো প্রধানত আলোচিত হয়। জটিল সমস্যাগুলোর ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসক আশ্বস্ত করেন যে পর্যায়ক্রমে সমাধান করা হবে এবং প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে।
মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী জেলা প্রশাসক প্রতি বুধবার নিজ কার্যালয়ে গণশুনানি করেন। এবার কার্যক্রম মাঠপর্যায়ে আনা হয়েছে, যাতে জনগণ সরাসরি প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পান। জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বলেন, “জনগণের সমস্যা সমাধান করাই প্রশাসনের প্রধান দায়িত্ব। মানুষকে সেবা পেতে দৌড়াতে হবে না, প্রশাসন তাদের দৌরগোড়ায় যাবে এটাই আমাদের লক্ষ্য।” তিনি আরও বলেন, এ ধরনের গণশুনানি কেবল সমস্যা সমাধান নয়, বরং জনগণ ও প্রশাসনের মধ্যে আস্থা, বিশ্বাস ও সহযোগিতার সম্পর্ক সুদৃঢ় করবে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে জেলা প্রশাসক ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গণে একটি জারুল গাছের চারা রোপণ করেন। গণশুনানি শেষে তিনি ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিদর্শন করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আরও সক্রিয়ভাবে সেবা প্রদানের নির্দেশ দেন। এছাড়া, সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে ১০ জন মেধাবী শিক্ষার্থীকে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হয় এবং সাম্প্রতিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত পাঁচ জেলের পরিবারের হাতে আর্থিক সহায়তা তুলে দেন জেলা প্রশাসক।
গণশুনানিতে অংশ নেওয়া সাধারণ মানুষ এ উদ্যোগকে যুগান্তকারী বলে উল্লেখ করেছেন। তারা বলেন, আগে সমস্যার সমাধানে বিভিন্ন দফতরে ঘুরতে হতো; আজ জেলা প্রশাসক নিজে এসে তা শুনেছেন এবং তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছেন, যা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে।
একুশে সংবাদ/চ.প্র/এ.জে