রাজশাহীর পবা উপজেলার বামনশিকড় গ্রামে এক রাতের ব্যবধানে একই পরিবারের চার সদস্যের মৃত্যুতে স্তব্ধ হয়ে গেছে গ্রামবাসী। বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) গভীর রাতে ঘটে যাওয়া এই মর্মান্তিক ঘটনাটি শুক্রবার সকালে জানাজানি হলে এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া। নিহতরা হলেন—মিনারুল ইসলাম (৩৫), তার স্ত্রী মনিরা খাতুন (২৮), ছেলে মাহিম (১৪) এবং তিন বছরের মেয়ে মিথিলা।
পুলিশ জানায়, মিনারুল স্ত্রী ও সন্তানদের শ্বাসরোধে হত্যার পর আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে তার লেখা দুটি চিরকুট, যেখানে আর্থিক সংকট ও ঋণের চাপে এই চরম পথ বেছে নেওয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে।
প্রথম চিরকুটে মিনারুল লিখেছেন, “আমি প্রথমে আমার স্ত্রীকে মেরেছি, তারপর ছেলেকে, তারপর মেয়েকে। এরপর আমি গলায় ফাঁস দেব। এই মৃত্যুর জন্য কারো কোনো দোষ নেই।”
দ্বিতীয় চিরকুটে তিনি নিজের অসহায় অবস্থার বর্ণনা দিয়ে লিখেছেন,
“আমি একা যদি মরে যাই, আমার স্ত্রী-সন্তানরা কার আশায় বাঁচবে? কষ্ট ছাড়া কিছু পাবে না। আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে।”
রাজশাহী নগর পুলিশের কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান বলেন, “ময়নাতদন্ত শেষে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। তবে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, এটি হত্যার পর আত্মহত্যার ঘটনা।”
স্থানীয়দের ভাষ্য, মিনারুল দীর্ঘদিন ধরে ঋণের বোঝা ও অভাব-অনটনে ভুগছিলেন। চিরকুটেও উঠে এসেছে বাবার মানসম্মান নিয়ে তার কষ্টের কথা— “আমার বাবা আমার জন্য অনেক মানুষের কাছে ছোট হয়েছে, আর হতে হবে না। চিরদিনের জন্য চলে গেলাম।”
চারজনের প্রাণহীন দেহ একসঙ্গে ঘরে পড়ে থাকার সেই দৃশ্য গ্রামবাসীকে এখনো শিহরিত করছে। যেখানে ছিল হাসি-কান্নার শব্দ, সেখানে নেমে এসেছে নিস্তব্ধ শোক।
একুশে সংবাদ/রা.প্র/এ.জে