ময়মনসিংহের ভালুকায় সম্প্রতি রাতের আঁধারে গোপনে আবারও ‘লিটার’ পরিবহন শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের অনুমতি রয়েছে—এমন গুজবও ছড়ানো হচ্ছে। তবে ভালুকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হাসান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জানিয়েছেন, এই গুজব সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং প্রশাসন কখনোই অশুভ বা ক্ষতিকর কোনো কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নেই।
ইউএনও স্পষ্ট করে বলেন, “যদি কেউ মাছ চাষের উদ্দেশ্যে লিটার পরিবহন করে বা প্রশাসনের অনুমতির দাবি করে, তাদের আটক করে কঠোরভাবে প্রতিহত করতে হবে এবং সঙ্গে সঙ্গে উপজেলা প্রশাসনকে ফোনে অবহিত করতে হবে।”
কেন লিটার ব্যবহার বন্ধ করা জরুরি
ইউএনও’র ভাষ্যে —
১। অনেকে যুক্তি দিয়ে বলেন, মাছে লিটারের ব্যবহার অস্বাস্থ্যকর নয়। বাস্তবে এটি খুবই অস্বাস্থ্যকর। একসময় এটিকে উৎসাহিত করা হতো, কিন্তু পরে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এই পদ্ধতিকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। লিটারের মধ্যে হেভি মেটাল, অ্যামোনিয়া, টক্সিনসহ (যা সকল প্রাণী জৈব প্রক্রিয়ায় দেহ থেকে বের করে দেয়) ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান বিদ্যমান।
২। এটি ব্যবহারে মাছের বৃদ্ধি কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় হয় না। পানির পিএইচ পরিবর্তন করে স্বাভাবিক মাত্রা থেকে নামিয়ে আনে বা বাড়িয়ে দেয়, ফলে অপর্যাপ্ত অক্সিজেনের কারণে অনেক সময় মাছও মারা যায়।
৩। মাছ চাষের সাথে সরাসরি যুক্ত দপ্তরগুলো (মৎস্য অফিস, অনেক ক্ষেত্রে প্রাণিসম্পদ অফিস) থেকে বিস্তারিত জেনে দেখা গেছে এটি ব্যবহার করলে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ারও তেমন কোনো সুযোগ নেই।
৪। আপনি এবং আপনার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বাস্থ্যকে ঝুঁকিমুক্ত ও সুরক্ষিত রাখতে হলে হেভি মেটাল, টক্সিনযুক্ত এবং ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদানসমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে।
এই ব্যবসায় অল্প কিছু মানুষ জড়িত উল্লেখ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হাসান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, “এই ব্যবসায় আমার জানামতে অল্প কিছু মানুষ (মাত্র ৩/৪ জন খুব ভালোভাবে) জড়িত আছেন। আপনারা নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন, মানুষ এই পেশাটিকে কতটা ঘৃণা করে। জীবনে টাকা উপার্জনই একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত নয়, সম্মান অনেক বড় জিনিস। বাঁচার জন্য মানুষের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা হলো অক্সিজেনের মতো।”
তিনি আরও বলেন, “এই অসম্মানজনক পেশা থেকে বেরিয়ে এসে বুক ফুলিয়ে ভালো কিছু করে অর্থ উপার্জন করুন। মাথা উঁচু করে বাঁচুন।”
ভালুকার স্থানীয় মৎস্যজীবী আবদুল করিম বলেন, "লিটার দিয়ে মাছ চাষ করলে প্রথম দিকে হয়তো কিছুটা লাভ দেখা যায়, কিন্তু কয়েক মাস পরেই মাছ অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং মারা যায়। এতে আমাদেরই ক্ষতি হয়।"
ভালুকার প্রবীণ শিক্ষক মো. সেলিম মিয়া বলেন, "প্রশাসনের কঠোর নজরদারি আমরা স্বাগত জানাই। লিটার পরিবহন ও ব্যবহার বন্ধ করতে হলে সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং বিকল্প নিরাপদ উপায় ব্যবহার করতে হবে।"
উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, লিটার পরিবহন ও ব্যবহার প্রতিরোধে মাঠপর্যায়ে নজরদারি আরও জোরদার করা হয়েছে।
একুশে সংবাদ/ম.প্র/এ.জে