নদীমাতৃক বাংলাদেশে শীতলক্ষ্যার তীরে নোঙর করা ভাসমান হাসপাতাল ‘জীবন তরী’ নীরবে সেবা দিয়ে যাচ্ছে গাজীপুরের কালীগঞ্জ ও নরসিংদীর পলাশ উপজেলার অসহায় ও প্রান্তিক মানুষের মাঝে। চিকিৎসা সেবায় আস্থা অর্জনকারী এ হাসপাতালটি একটি জাহাজের ওপর প্রতিষ্ঠিত এবং এটি পরিচালনা করছে বেসরকারি সংস্থা ইমপ্যাক্ট ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ (আই.এফ.বি)।
১৯৯৯ সালের এপ্রিল মাসে যাত্রা শুরু করে ‘জীবন তরী’। তারও আগে ১৯৯৩ সালের ২৫ জুলাই ট্রাস্ট হিসেবে নিবন্ধন পায় সংস্থাটি। ভাসমান এই হাসপাতালের উদ্দেশ্য—নদী তীরবর্তী সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের ঘরে ঘরে চিকিৎসা পৌঁছে দেওয়া। এর আগে ২০১৩ ও ২০১৮ সালে একই স্থানে সেবা দিয়েছে হাসপাতালটি।
২০২৫ সালের ৬ মে হাসপাতালটি গাজীপুরের কালীগঞ্জ পৌরসভার দড়িসোম এলাকায়, খাদ্য গুদামের পাশে শীতলক্ষ্যা নদীর ঘাটে নোঙর করে। চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হয় ১০ মে থেকে। ইতিমধ্যে এই ভাসমান হাসপাতাল স্থানীয়দের মাঝে সাড়া ফেলেছে এবং দুই জেলার মধ্যে সুনাম ছড়িয়েছে।
১২ শয্যার এই হাসপাতালটিতে রয়েছেন তিনজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক—একজন নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ, একজন চক্ষু চিকিৎসক এবং একজন অর্থোপেডিকস সার্জন। রয়েছে বিশেষজ্ঞ সার্জনের মাধ্যমে ঠোঁটকাটা-তালুকাটা, হাড়ভাঙা-পঙ্গু রোগীদের অপারেশন ও প্লাস্টিক সার্জারির সুবিধা। হাসপাতালটিতে আরও আছেন তিনজন নার্স, দুজন কর্মকর্তা এবং অন্যান্য সহকারীসহ প্রায় ৩০ জন জনবল।
রোগীরা মাত্র ৫০ টাকা ফি দিয়ে টিকিট সংগ্রহ করে লাইনে দাঁড়িয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। রয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অপারেশন থিয়েটার, পৃথক বেড, এক্স-রে ও প্যাথলজিক্যাল ল্যাব, বহির্বিভাগের জন্য আলাদা অপেক্ষাকক্ষ এবং চিকিৎসকদের নির্ধারিত চেম্বার। রোগী পরিবহনের জন্য দুটি স্পিডবোটও রয়েছে হাসপাতালে।
ভাসমান হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা একাধিক রোগী জানান, এত কম খরচে এত উন্নত চিকিৎসা তারা আগে কখনো পাননি। কেউ কেউ বলেন, "হাসপাতাল তো মানুষের কাছে আসে না, কিন্তু এই হাসপাতাল তো ঘাটেই এসেছে!"
ভাসমান হাসপাতালের প্রশাসক এ.কে.এম সহিদুল হক বলেন, "নদীর পাড়ে বসবাসকারী দরিদ্র মানুষদের জন্য স্বল্প খরচে মানসম্মত চিকিৎসা সেবা দেওয়া আমাদের লক্ষ্য। প্রতিদিন গড়ে ২০০ থেকে ২২৫ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। শুক্রবার ও সরকারি ছুটি ব্যতীত প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চিকিৎসা সেবা চালু রয়েছে।"
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তনিমা আফ্রাদ বলেন, “জীবন তরীর উদ্যোগ অত্যন্ত প্রশংসনীয়। এটি অসুস্থ মানুষের জীবনে আশার আলো হয়ে উঠেছে। স্বল্প ব্যয়ে সাধারণ মানুষের কাছে চিকিৎসা পৌঁছে দেওয়ার এই উদ্যোগে গণমাধ্যমের সহযোগিতা প্রয়োজন।”
একুশে সংবাদ/ন.প্র/এ.জে