গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী মধ্যপাড়া (মৃধা বাড়ি) গ্রামে মাদকাসক্ত স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ির নির্যাতনে স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় পুলিশ শাশুড়ি জোবেদা খাতুনকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে স্বামী নুরুল ইসলাম মৃধা ও শ্বশুর শাহজাহান মৃধা ঘটনার পর থেকেই পলাতক রয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) সকাল সাড়ে ৬টার দিকে উত্তেজিত জনতা অভিযুক্ত নুরুল ইসলামের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। এর আগে বুধবার (৬ আগস্ট) রাতে স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ির যৌথ নির্যাতনে গৃহবধূর মৃত্যু হয়। অভিযোগ রয়েছে, তার গোপনাঙ্গে বাঁশ বা ছুরি দিয়ে আঘাত করে তাকে হত্যা করা হয়।
নিহত গৃহবধূ সুইটি আক্তার নিশি (২২) ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার চাকুয়া গ্রামের আফসারুল ইসলামের মেয়ে। অভিযুক্ত স্বামী নুরুল ইসলাম মৃধা (৩৪) বরমী মধ্যপাড়ার শাহজাহান মৃধার ছেলে। তার বিরুদ্ধে শ্রীপুর থানায় তিনটি মাদক মামলা রয়েছে।
নিহতার খালাতো বোন আকলিমা আক্তার জানান, দেড় বছর আগে সুইটির বিয়ে হয় নুরুল ইসলাম মৃধার সঙ্গে। তাদের সংসারে চার মাস বয়সী একটি কন্যাসন্তান রয়েছে। বিয়ের পর সুইটি জানতে পারেন, তার স্বামী মাদকাসক্ত এবং এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। প্রতিবাদ করলেই শুরু হতো নির্যাতন।
গত ৩-৪ দিন আগে পুলিশ নুরুলকে গ্রেপ্তারের জন্য বাড়িতে গেলে না পেয়ে সুইটিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। সুইটি তখন পুলিশের কাছে স্বীকার করেন, তার স্বামী মাদক ব্যবসায়ী। বিষয়টি জানাজানি হলে স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ি একযোগে তাকে নির্যাতন শুরু করে। বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিয়ের ঘটক নাজমুল মোবাইল ফোনে সুইটির স্বজনদের মৃত্যুর খবর দেন।
পরে স্বজনেরা বাড়িতে এসে দেখেন, সুইটির মরদেহ ঘরের মেঝেতে পড়ে আছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে এবং শাশুড়ি জোবেদা খাতুনকে গ্রেপ্তার করে।
সকালে ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজিত জনতা নুরুল ইসলামের দুটি বাড়িতে আগুন দেয়। আগুনে দুইটি বাড়ির আটটি কক্ষ ও আসবাবপত্র পুড়ে যায়।
সুইটির মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
সুইটির খালাতো বোন আরও জানান, সে ছিল এক অসহায় মেয়ে। ছোটবেলায় বাবা-মা তার খোঁজখবর নিতেন না। খালা কলিমা বেগমের কাছে সে বড় হয়েছে। ঘটক নাজমুলের সহায়তায় বিয়ে হলেও, স্বামী ছিল মাদক ব্যবসায়ী। চার মাসের শিশুকন্যার সামনেই সুইটিকে নির্মমভাবে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। শিশুটির শরীরেও আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
শ্রীপুর মাওনা ফায়ার সার্ভিসের ওয়্যারহাউজ ইন্সপেক্টর হুমায়ুন কবির জানান, আগুন নেভাতে তাদের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে বেলা ১১টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এর আগেই উত্তেজিত জনতা দুটি বাড়ির মালামালসহ আসবাবপত্র পুড়িয়ে দেয়।
শ্রীপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সুরতহাল রিপোর্টে দেখা গেছে, সুইটির দুই পা হাঁটুর নিচে থেঁতলানো ছিল। মাথা থেকে পা পর্যন্ত সমস্ত শরীরে নির্যাতনের স্পষ্ট চিহ্ন রয়েছে।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আব্দুল বারিক বলেন, স্থানীয়দের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে গৃহবধূকে নির্যাতনে জড়িত থাকার অভিযোগে শাশুড়ি জোবেদা খাতুনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে আদালতে পাঠানো হবে।
একুশে সংবাদ/গা.প্র/এ.জে



একুশে সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

