সাধারণত কৃষকদের ঘরে যখন ধান থাকে না, তখনই বাজারে ধানের দাম চড়া হয়ে যায়। ধান কাটার মৌসুম শেষ হলে বাজারে সরবরাহ কমে যায়, ফলে চাহিদা-জোগানের নিয়ম অনুযায়ী দাম বেড়ে যায়। এ সুযোগে মধ্যস্বত্বভোগী ও বড় বড় মহাজনরা আগেভাগে ধান কিনে গুদামে মজুত করে রাখে এবং পরে বেশি দামে বাজারে বিক্রি করে। এতে বাজারে ধানের মূল্য আরও বেড়ে যায়। এবারের চিত্রটিও ব্যতিক্রম নয়—এবার ধানের দাম যেন আকাশ ছোঁয়া। অনেক ব্যবসায়ী বলছেন, এর আগে এত বেশি দামে ধান বিক্রি হতে তারা দেখেননি।
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাটবাজার ও মোকামে সর্বোচ্চ দামে ধান বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো—এই দাম বৃদ্ধির সময় কৃষকের ঘরে কি ধান আছে? সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমের শুরুতেই ধান কাটা-মাড়াইয়ের পরপরই মহাজনরা কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনে ফেলেছে। এখন ধানের দাম বাড়লেও কৃষকের ঘরে ধান নেই। ফলে লাভের টাকা যাচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীর পকেটে।
বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার ধান ব্যবসায়ী নাজিম উদ্দিন, যিনি প্রায় দুই দশক ধরে ধান-চালের ব্যবসা করছেন, তিনি জানান—“এবার ধানের যে দাম, তা জীবনে প্রথম দেখলাম। এক মণ জিরাশাইল ধান ১,৫০০ টাকায় এবং কাটারি ধান ১,৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।” অথচ এক বছর আগেও এই ধান সর্বোচ্চ ১,২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
এলাকার কৃষক আলিম উদ্দিন বলেন, “গত বছর ধানের দাম কম হওয়ায় এবার আবাদ কম করেছি। লোকসান করে আবাদ করে কী লাভ? এবার উৎপাদন কম হলেও দাম বেশি। কিন্তু সমস্যা হলো, যখন কৃষক উৎপাদন বাড়াবে, তখন দাম আবার কমে যাবে। কৃষকরা কোনো সময়ই ভালো দাম পায় না—সব সময়ই লাভের টাকা যায় মধ্যস্বত্বভোগীদের পকেটে।”
উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকারি গুদামে ধান বিক্রির প্রক্রিয়া অনেক কৃষকেরই অজানা। নির্ধারিত গ্রেডে ধান শুকানোসহ বিভিন্ন জটিলতায় সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করা কৃষকের পক্ষে কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। অন্যদিকে ধান ঘরে তুলতেই পাওনাদারদের চাপ বাড়ে, ফলে বাধ্য হয়েই কম দামে বাজারে বিক্রি করে দেন তারা। এই সুযোগ কাজে লাগান মহাজন ও মধ্যস্বত্বভোগীরা—যারা কম দামে ধান কিনে গ্রেড অনুযায়ী পরিচর্যা করে বেশি দামে বিক্রি করে দেন সরকারি গুদামে।
পরিশেষে বলা যায়, লাভের সবটা গিয়েই পড়ছে মধ্যস্বত্বভোগীদের ঝুলিতে। অথচ পরিশ্রম করে উৎপাদন করা কৃষক বারবারই থেকে যাচ্ছেন বঞ্চিত।
একুশে সংবাদ/ব.প্র/এ.জে