গতকাল ২৭ জুলাই (রবিবার) সকাল থেকে টানা ভারী বর্ষণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন চট্টগ্রাম নগরবাসী। সাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাব কেটে গেলেও চট্টগ্রামে বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আগামী দুই-তিন দিন মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা ইসমাইল ভূঁইয়া রোববার দুপুরে জানান, ঝড়ো হাওয়ার সম্ভাবনা না থাকায় আপাতত সংকেত নামিয়ে ফেলা হয়েছে। তবে নিম্নচাপের প্রভাবে এবং মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকার কারণে ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। এতে পাহাড়ধসের সম্ভাবনাও রয়েছে। তিনি আরও জানান, রবিবার বেলা ৩টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ১০৭.৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
সকাল থেকে টানা বৃষ্টির কারণে বিপাকে পড়েন স্কুল-কলেজ, অফিস ও শিল্পকারখানাগামী সাধারণ মানুষ। রাস্তাঘাটে যান চলাচল ছিল তুলনামূলকভাবে কম। বিশেষ করে রিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার সংখ্যাও ছিল কম। ফলে অনেক চালকের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ তুলেছেন যাত্রীরা।
অন্যদিকে, অমাবস্যার প্রভাবে জোয়ারের পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় নগরের বিভিন্ন খালের পানি উপচে পড়তে দেখা গেছে। এতে মোহরা ও আগ্রাবাদসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। রবিবার সকালেও এসব এলাকায় বসতবাড়ি, দোকানপাট ও সড়ক পানিতে তলিয়ে যায়। বাসিন্দারা বাড়ির ভেতরের পানি সেচে ফেলতে ব্যস্ত সময় পার করেন।
বাংলাবাজার এলাকার বাসিন্দা মো. সালাহউদ্দিন বলেন, “আমার বাসার নিচতলা জোয়ারের পানিতে ডুবে গেছে। পার্কিংয়ে থাকা গাড়ির চাকা ডুবে গেছে। আর একটু পানি বাড়লেই গাড়ির ভেতরেও পানি ঢুকে পড়বে। বাসার সামনের কয়েকটি মুদি দোকানেও পানি ঢুকে গেছে।”
কালুরঘাট এলাকার ইয়াসিন বলেন, “একদিকে বৃষ্টি, অন্যদিকে জোয়ারের পানি। বাসার ভেতর পানি ঢুকেছে। ইটের ওপর ফার্নিচার তুলে কোনোমতে রক্ষা করেছি। রান্নাসহ ঘরের আনুষঙ্গিক কাজ করতে অনেক কষ্ট হয়েছে। পরে মোটরের সাহায্যে কিছুটা পানি কমিয়েছি।”
চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, কর্ণফুলী নদীতে ৪.১৫ মিটার জোয়ারের উচ্চতাকে বিপদসীমা হিসেবে ধরা হয়। সেখানে রবিবার বিকাল ৩টার দিকে জোয়ারের উচ্চতা ছিল ৩.৬৫ মিটার—যা বিপদসীমার মাত্র ০.৫০ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে, হালদা নদীতে ৮.৪২ মিটারকে বিপদসীমা ধরা হয়। ফটিকছড়ির পাঁচপুকুরিয়া এলাকায় হালদা নদীতে বিকাল ৩টায় জোয়ারের উচ্চতা ছিল ৪.৭৮ মিটার, যা বিপদসীমার চেয়ে ৪ মিটার নিচে।
চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আনিস হায়দার বলেন, “কর্ণফুলী নদীর পানি জোয়ারের সময় বিপদসীমার কাছাকাছি চলে যাচ্ছে। ফলে জোয়ারের সময় কিছু কিছু এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।”
একুশে সংবাদ/চ.প্র/এ.জে