ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার গোপালপুর ও মৈনট ঘাট দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী চরম ঝুঁকি নিয়ে পদ্মা নদী পার হচ্ছেন। শ্রাবণের উত্তাল তরঙ্গ, বৈরী আবহাওয়া ও টানা বৃষ্টিপাতের মধ্যে খোলা স্পিডবোট ও আনফিট লঞ্চে কোনো ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াই চলছে এ যাত্রী পরিবহন।
নিরাপত্তা সরঞ্জাম, বিশেষ করে লাইফ জ্যাকেট ও পর্যাপ্ত বয়া না থাকায় যাত্রীরা ভয়াবহ ঝুঁকিতে পড়ছেন। প্রতিটি স্পিডবোটে গড়ে ১৮ জন যাত্রী বহন করা হলেও তাদের কাউকেই লাইফ জ্যাকেট সরবরাহ করা হয় না। একইভাবে লঞ্চগুলোতেও নেই প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা উপকরণ। অর্ধ ঘণ্টা পরপর শত শত যাত্রী এসব নৌযানে পদ্মা পার হচ্ছেন।
এ নৌরুট দিয়ে শুধু চরভদ্রাসনের নয়, আশপাশের তিন উপজেলা ও জেলা শহরের অনেক মানুষও স্বল্প সময়ে ঢাকা যাতায়াতের সুবিধায় এই পথ বেছে নিচ্ছেন। তবে বর্ষা মৌসুমে নদীর ঢেউ ভয়ঙ্কর রূপ নেয়, ফলে খোলা স্পিডবোট বা ফিটনেসবিহীন লঞ্চে যাত্রা আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে।
ঘাট কর্তৃপক্ষের অনীহা ও উদাসীনতার কারণেই যাত্রীরা এখনো লাইফ জ্যাকেট কিংবা নিরাপত্তা ছাড়াই পদ্মা পার হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়ে চরভদ্রাসন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরা খাতুন বলেন, “কয়েক দিন আগে পদ্মা নদীতে একটি স্পিডবোট দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। তখন আমি গোপালপুর ঘাটে গিয়ে নির্দেশ দিয়েছিলাম—প্রত্যেক যাত্রীকে লাইফ জ্যাকেট পরে নদী পার হতে হবে। কিন্তু এরপরও যদি নির্দেশনা মানা না হয়, তাহলে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।”
রোববার (২৭ জুলাই) ঢাকা থেকে গোপালপুর ঘাটে আসা যাত্রী শামিম শেখ (৩৮) জানান, “স্পিডবোটে উঠার পর আমরা লাইফ জ্যাকেট চাইলে বোটচালক কোনো কর্ণপাত করেনি।”
অন্য যাত্রী মো. এহসান কবির (৪০) বলেন, “মাঝ পদ্মায় ভয়ানক ঢেউয়ের মধ্যে পড়ি। মনে হয়েছিল মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছি। বোটের সবাই ভিজে গিয়েছিল, শিশু ও মহিলারা কান্নায় ভেঙে পড়েছিল। প্রায় আধা ঘণ্টা আমরা চরম দুশ্চিন্তার মধ্যে ছিলাম।”
এ অবস্থায় বর্ষা মৌসুমে যাত্রীদের জীবনরক্ষা নিশ্চিত করতে লাইফ জ্যাকেট বাধ্যতামূলক করা, ফিটনেসবিহীন লঞ্চ বন্ধ করা এবং পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার দাবিতে এলাকাবাসী প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
একুশে সংবাদ/ফ.প্র/এ.জে