মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, ‘‘আমরা প্রত্যেক সময় চাই শান্তিপূর্ণভাবে সবকিছু হ্যান্ডেল করতে। আমাদের সরকারের একটা যে আচরণ, আমরা অহেতুক কোনো কাউকে আমরা লেথাল ওয়েপন ইউজ করা, বা কোনো কঠিনভাবে দমন করতে চাই না। সেটা করতে গিয়ে অনেকে, যখন একটু বেশি হয়ে যায় সেটাতেও আমরা অনেক সহ্যের পরিচয় দেই, সহ্য করি।’’
তিনি বলেন, ‘‘আমরা মনে করি, এটা সামাজিক ব্যাপার মব সৃষ্টির ব্যাপারটাকে সামাজিকভাবে, আপনারা মিডিয়া কিন্তু অনেক ভালো ভূমিকা রাখতে পারেন। মব সৃষ্টি যেসব কারণে হয়, সে কারণগুলোকে আমাদের চিহ্নিত করতে হবে। সেটাই আমি মনে করি, করা ভালো। এখানে সরকার কোনো ধরনের বাড়তি দমনমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পক্ষপাতী না।’’
রবিবার (২৭ জুলাই) দুপুরে সাভারের আশুলিয়ায় গণস্বাস্থ্য সমাজ ভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিএইচএ ভবনে আয়োজিত জুলাই স্মৃতিচারণ ও আলোচনা সভায় যোগ দিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ মন্তব্য করেন উপদেষ্টা।
ফরিদা আখতার বলেন, ‘‘মানবাধিকার পরিস্থিতি বিভিন্ন সময়ে, বিগত সময়ে যেভাবে আমরা দেখেছি, যে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং যারা ক্ষমতাসীন তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় যেভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়, এবং অনেকগুলো এমন আছে মানবাধিকারের বিষয় যেগুলো স্ট্র্যাকচার মানে একেবারে কাঠামোগত, ওগুলো ইয়ে করতে হবে।’’
‘‘এই যে মানবাধিকার কমিশন, আমাদের পক্ষে তখন কাজ করেছে আন্তর্জাতিকভাবে এবং অনেকগুলো প্রতিবেদন তারা করেছে। যার ফলে কিন্তু ফ্যাসিস্ট সরকার আন্তর্জাতিকভাবে ডকুমেন্টেড হয়েছে তাদের কাজটা। এখন আগামীতেও তারা যখন অফিস করতে চাচ্ছে, তার মানে এই না, এখন আমাদের মানবাধিকার অবস্থা খারাপ বলে আসতে চাচ্ছে তা না। এটা হলো, এরকম একটা অফিস থাকলে, যেই আসুক ক্ষমতায় তারা সবাই প্রত্যেকে একটা ইয়ে থাকবে, যে আমাদের মানবাধিকার রক্ষার বিষয়ে আমরা খুবই সচেতন এবং আমরা সেটা রক্ষা করতে চাই। এবং যেহেতু জাতিসংঘ এই বিষয়ে সক্রিয় তারা তাদের অফিস রেখে এটাকে করতে চাচ্ছেন, আমরা এটাকে সম্মতি জানিয়েছি,’’ যোগ করেন তিনি।
এর আগে ইলিশ প্রসঙ্গে ফরিদা আখতার বলেন, ‘‘ইলিশের যে ধরার মৌসুম, ইলিশ বেড়ে ওঠে গত অক্টোবর নভেম্বর থেকে মা ইলিশ রপ্তানি আমরা চেষ্টা করেছি, তারপর জাটকা নিধন যেন না হয়, যেন ইলিশ বেড়ে উঠতে পারে, সেটা জুনের ১১ তারিখ পর্যন্ত ছিল। এরপরে যেটা হয়েছে, আমরা প্রতিদিন মনিটরিং করছি, সেটা হলো, ইলিশ সমুদ্র থেকে নদীতে আসতে পারছে না বৃষ্টি কম হওয়ার কারণে। সাগরের মাঝখানে ইলিশ আছে কিন্তু নদীতে আসতে পারছে না। গতকাল পর্যন্ত খবর এসেছে, নদীতেও ইলিশ আসছে। তবে এই একটু আবহাওয়া খারাপ হওয়ার কারণে, বিশেষ করে সাগরে তিন নম্বর বিপৎসংকেত আছে বলে, অনেক জেলে এখন মাছ ধরতে যেতে পারছে না।
তিনি বলেন, ‘‘বর্তমানে আমি বলতে পারি, ইলিশের সরবরাহ বাড়লে বাজারে দাম কমবে। এবং ইলিশের সরবরাহ বাড়লে যদি বাজারে দাম না কমে, তাহলে বুঝতে হবে, এখানে সিন্ডিকেট কাজ করছে। তাহলে বুঝতে হবে, এখানে বাজার ব্যবস্থার মধ্যে ত্রুটি আছে। সেটা করার জন্য আমরা বাজারে আড়ৎদারদের সাথে আমরা প্রতিদিন কথা বলছি। আমরা বলছি, এটা কোনো অবস্থাতেই এক কেজি ইলিশ যাতে ১৫০০ টাকার ওপরে না হয়। হাজারের নিচে রাখতে পারলে আরও খুশি হতাম। তবে আপনাদের আরও একটা তথ্য দেই, সত্যিকারের ইলিশের স্বাদ হয়, ৭০০-৯০০ গ্রামের ইলিশের মধ্যে। এটা ওরা বলে আরকি। সেটার দাম কম হবে। সেটার পরিমাণ কিন্তু অনেক বেশি আসছে। বড় ইলিশ যারা খেতে চায়, তারা বেশি দাম দিয়ে খাবে। সেটা অন্য ব্যাপার। আমি খুবই চাচ্ছি, ইলিশের সরবরাহ বাড়ুক। এবং আমাদের দেশের মানুষ খাক। বিদেশে আমরা পাঠাচ্ছি শুধু দুটো দেশে। সেটা হলো, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে। ওখানে প্রবাসীদের একটা দাবির পরিপ্রেক্ষিতে। তারা আমাদের রেমিট্যান্স দিচ্ছেন, তারা ইলিশ খেতে পারছেন না এটার জন্য আমরা ১১ হাজার মেট্রিক টন বানিজ্য মন্ত্রনালয়কে অনুমতি দিয়েছি আমরা, যদি কেউ রপ্তানি করতে চায় সেটা দিতে পারবেন। এটার বেশি না। কাজেই এটা আমরা আমাদের প্রতিজ্ঞা থেকে এক কণা সরিনি।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘এবার যে তথ্য, ভারতেরই পত্রিকার তথ্য হলো, গঙ্গায় ইলিশ অনেক বেড়ে গেছে। যে কোনো কারণেই হোক, ওদিকে সাগরের ইলিশ ওদিকে গেছে। কাজেই তাদের আর আমাদের ইলিশের অপেক্ষা করা ঠিক হবে না। আমাদের এখানে যদি ইলিশের সঙ্কট থাকে, তাদের ওখানে আমাদের পাঠানোর কোনো কারণ নাই। এই সৌজন্য গতবার রাজনৈতিক কারণে দেখানো হতো, আমরা আসলে জনগণের প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতি রাখতে গিয়ে যদি সেটা সরবরাহ বেশি থাকে, বা সেই রকম পরিস্থিতি হয়, সেটা তখন দেখা যাবে। এখনও পর্যন্ত আমাদের সেরকম কোনো পরিকল্পনা নেই।’’
গণ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে এই উপদেষ্টা বলেন, ‘‘সব বিশ্ববিদ্যালয় আন্তরিক। গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে যে এটা করছে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় বলতে অনেক সময় আমরা মনে করি বাণিজ্যিক ভাবে শিক্ষার একটা ব্যবস্থা। সেজন্য ওখানে ছাত্র সংসদ প্রয়োজন হয় না। কিন্তু গণ বিশ্ববিদ্যালয় তো সেভাবে চলে না। এটা তো মুনাফার জন্য করা হয়নি। এটা করা হয়েছে, সাধারণ মানুষের ছেলেমেয়েরা যাতে লেখাপড়া করতে পারে। সেখানে ওরা যেটা চেয়েছে আমরা দেওয়ার চেষ্টা করবো।’’
অনুষ্ঠানে গণবিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. আবুল হোসাইনসহ রেজিষ্ট্রার, বিভিন্ন অনুষদের ডিন ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
একুশে সংবাদ/সা.প্র/এ.জে