জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার প্রধান ডাকঘর ভবনটি বর্তমানে ভয়াবহ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। দীর্ঘ প্রায় চার দশক আগে, ১৯৮৫ সালে নির্মিত এই ভবনটি আজ সম্পূর্ণভাবে জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে কোনো ধরনের সংস্কার না হওয়ায় ভবনের ছাদ থেকে প্রতিনিয়তই পলেস্তারা খসে পড়ছে,অনেক জায়গায় ছাদের রড বেরিয়ে এসেছে। বর্ষা মৌসুমে ছাদ ও দেওয়াল দিয়ে পানি চুঁইয়ে ভিতরে প্রবেশ করে। এতে মেঝে স্যাঁতসেঁতে হয়ে যায় এবং অফিসের টেবিলে রাখা গুরুত্বপূর্ণ ফাইলপত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়েই এই ভবনের ভেতরে চলতে থাকে ডাক বিভাগের নানা দাপ্তরিক কাজকর্ম।
সরজমিন গিয়ে দেখা গেছে, বাহ্যিকভাবে ভবনটি রঙিন রঙের মোড়কে খানিকটা পরিপাটি মনে হলেও, ভেতরের অবস্থা দেখে পরিষ্কার বোঝা যায় যে এটি কোনোভাবেই ব্যবহারের উপযোগী নয়। প্রধান সড়কের স্থান থেকে ডাকঘর ভবনটি নিচু স্থানে অবস্থিত হওয়ায় ভারী বৃষ্টিপাতে ভবনের সামনের রাস্তা পানিতে তলিয়ে যায়।অনেক সময় হাঁটু সমান পানি জমে থাকে, ফলে ডাকঘরে প্রবেশ করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। ভেতরে ঢুকলে অস্বাস্থ্যকর স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ এবং ছাদ থেকে চুঁইয়ে পড়া পানির কারণে সেবা গ্রহীতারা চরম দুর্ভোগে পড়েন।
প্রতিদিন বহু মানুষ সরকারি-বেসরকারি কাজের জন্য এই ডাকঘরে আসেন। চাকরির প্রবেশপত্র, ব্যাংক ও বীমা লেনদেন, রেভিনিউ স্ট্যাম্প ও গুরুত্বপূর্ণ চিঠিপত্র এখান থেকেই আদান-প্রদান করা হয়। ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রসারে যদিও ডাক বিভাগের চাহিদা আগের চেয়ে অনেকটাই কমে এসেছে, তবে সরকারি ও প্রাতিষ্ঠানিক চিঠিপত্র চালাচালির জন্য এটি এখনও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি মাধ্যম।
এদিকে, স্থানীয় জনগণের দাবি, শুধু সংস্কার নয়, ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যবহারের অযোগ্য এই ভবনটি ভেঙে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন একটি নতুন ডাকঘর ভবন নির্মাণই হতে পারে স্থায়ী সমাধান। বর্তমান অবকাঠামোর মধ্যে দাপ্তরিক কার্যক্রম চালানো কেবল দুর্ভোগই নয়, মারাত্মক প্রাণহানির ঝুঁকিও তৈরি করছে বলে মনে করছেন তারা।
ডাকঘরে সেবা নিতে আসা লতিফুর রহমান নামের এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, প্রতি মাসেই তাকে ডাকঘরে আসতে হয়, কিন্তু বর্ষার সময় হাঁটু পানির মধ্য দিয়ে ঢুকে আবার ভেতরের ভেজা, দুর্গন্ধযুক্ত পরিবেশে দাঁড়িয়ে কাজ করতে হয়। একই অভিজ্ঞতার কথা জানালেন আরেক সেবাগ্রহীতা আজিদুর রহমান। তিনি বলেন, ভবনের ছাদের বেশির ভাগ জায়গা খসে পড়েছে, রড বের হয়ে আছে, যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তাই তিনি জরুরি ভিত্তিতে সংস্কারের দাবি জানান।
ডাকঘরের পোস্টমাস্টার সুনীল চন্দ্র বলেন, প্রতিদিন এখান দিয়ে বহু সরকারি ও বেসরকারি কাগজপত্র, পার্সেল, বীমার অর্থ লেনদেনসহ গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম চলে। বিভিন্ন সময় ডাক বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসে ভবন পরিদর্শন করলেও আজ পর্যন্ত কোনো সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন।
এ বিষয়ে জয়পুরহাট জেলার পোস্ট অফিস পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম জানান, তারা বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন এবং আশ্বাস দিয়েছেন যে খুব শিগগিরই এই সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
একুশে সংবাদ//র.ন