নাটোরের বড়াইগ্রামে ট্রাক ও মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে মাইক্রোবাসের চালকসহ সকল যাত্রী নিহত হয়েছেন। মোট নিহতের সংখ্যা ৮ জন। তাদের মধ্যে স্বামী-স্ত্রী ও নিকট আত্মীয়-স্বজন রয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ৬ জন নারী ও ২ জন পুরুষ।
বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের বড়াইগ্রাম ইউনিয়নের রয়না তরমুজ পেট্রোল পাম্প এলাকায় এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন: কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুরের ধর্মদহ গ্রামের মৃত জিল্লুর রহমানের ছেলে জাহিদুল ইসলাম (৬২) ও তার স্ত্রী শেলী বেগম (৫৬); একই গ্রামের শহীদুল ইসলামের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম (৬০) এবং মিজানুর রহমানের স্ত্রী আনোয়ারা খাতুন (৭০); পাশ্ববর্তী প্রাগপুর গ্রামের রফেজ চৌধুরীর স্ত্রী ইতি খাতুন (৪০); গোলারডাল গ্রামের শুক্কুর আলীর স্ত্রী সীমা বেগম (৪২); মেহেরপুরের গাংনী বেতবাড়ী গ্রামের মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী আঞ্জুয়ারা বেগম (৭০); এবং মাইক্রোবাসের চালক দৌলতপুর এলাকার শাহাবউদ্দিন (৪০)।
নিহতদের স্বজনরা জানান, সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার নন্দিরামধু গ্রামে অসুস্থ এক আত্মীয়কে দেখতে বুধবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে মাইক্রোবাসযোগে রওনা দিয়েছিলেন তারা। পথিমধ্যে ট্রাকের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে মাইক্রোবাসটি দুমড়ে-মুচড়ে গেলে ঘটনাস্থলেই অধিকাংশের মৃত্যু হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুর্ঘটনার সময় বিকট শব্দ হয়। স্থানীয়রা ছুটে এসে মাইক্রোবাসের সামনের অংশ দুমড়ে-মুচড়ে যেতে দেখে। প্রাথমিকভাবে দু’জনের মরদেহ উদ্ধার করা গেলেও বাকিদের বের করা সম্ভব হয়নি। পরে বনপাড়া ও গুরুদাসপুর ফায়ার সার্ভিস এবং বনপাড়া হাইওয়ে থানা পুলিশ মাইক্রোবাসের বডি কেটে আরও তিনটি মরদেহ উদ্ধার করে।
এসময় জীবিত উদ্ধার করা হয় চালকসহ তিনজনকে। তাদের একজনকে বড়াইগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর সেখানে তার মৃত্যু হয়। চালকসহ অপর এক নারীর অবস্থার অবনতি হলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়, সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
সকালের এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার কারণে এবং উদ্ধার কার্যক্রম চলাকালে বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের উভয় পাশে কয়েক শত যানবাহন আটকে পড়ে। প্রায় এক ঘণ্টা পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন নাটোরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আমজাদ হোসেনসহ জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এবং বড়াইগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লায়লা জান্নাতুল ফেরদৌস।
দুপুরে বনপাড়া হাইওয়ে থানা থেকে মরদেহ গ্রহণ করতে এসে নিহত সাত পরিবারের প্রায় অর্ধশতাধিক স্বজনের আহাজারিতে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। অনেকেই শোকে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। কান্না ও বিলাপে অসুস্থ হয়ে পড়া স্বজনদের সহায়তা ও বিশ্রামের জন্য হাইওয়ে থানা পুলিশ প্রয়োজনীয় সেবা প্রদান করে।
বড়াইগ্রাম হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ ইসমাইল হোসেন জানান, মাইক্রোবাসটি ওভারটেক করতে গিয়ে লেন অতিক্রম করায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনাকবলিত ট্রাক ও মাইক্রোবাস জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় আইনগত সব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
একুশে সংবাদ/না.প্র/এ.জে
একুশে সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
