AB Bank
  • ঢাকা
  • বুধবার, ২৩ জুলাই, ২০২৫, ৭ শ্রাবণ ১৪৩২

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

মাগুরার শ্রীপুরের নাকোল রাইচরণ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ফান্ডের প্রায় ৪‍‍`কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ



মাগুরার শ্রীপুরের নাকোল রাইচরণ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের  ফান্ডের প্রায় ৪‍‍`কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

মাগুরার নাকোল রাইচরণ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি ও শ্রীপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হুমাউনুর রশীদ মুহিত এবং প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক এ এস এম রফিকুল আলা ও বর্তমান প্রধান শিক্ষক শেখ আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধে বিদ্যালয় তহবিলের প্রায় ৪‍‍`কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সদ্য এডহক কমিটির সভাপতি মির্জা ওয়ালিদ হোসেন এর অনুমোদিত অভ্যন্তরিণ অডিট কমিটির তদন্তকালে এ অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি আত্ম-প্রকাশ পেয়েছে।


মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী এ প্রতিষ্ঠানটি নাকোল গ্রামে ১৯০১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বিদ্যালয়টিতে সাবেক প্রধান শিক্ষক এ এস এম রফিকুল আলা ২০১৮ সাল থেকে ২০২৪ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ প্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু বিগত সময়ে বিদ্যালয়টিতে কোনো প্রকার অডিট না হওয়ায় তিনি এবং বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতির যোগসাজসে ৬ বছরে সাড়ে ৩‍‍`কোটির অধিক টাকা আত্মসাত করেছেন বলে প্রতিয়মান হয়। ২০২৪ সালে ৭ ফেব্রুয়ারি পর প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে রফিকুল আলা অবসরে গেলে বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মুনীর হোসেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের  দায়িত্বপ্রাপ্ত হন।

তিনি প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালনকালে  তাকে বিনা নোটিশে হঠাৎ করে মৌখিকভাবে বহিস্কার দেখিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের এক সহকারী শিক্ষিকা সুবর্ণা জামানকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব অর্পণ করেন সভাপতি, যা সম্পূর্ণই সরকারী নিয়ম বহির্ভূত। ৭ দিনের ব্যবধানে অতি তাড়িঘড়ি করে উক্ত প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে শেখ আব্দুল মান্নানকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন সাবেক সভাপতি। নব্য প্রধান শিক্ষক নিয়োগপ্রাপ্তির ১০ মাস হতে না হতেই অর্থ কেলেংকারিতে জড়ায়ে পড়েন। ১০ মাসের ব্যবধানে তিনি বিদ্যালয় ফাণ্ডের ২৪ লক্ষ টাকা ব্যাংকে জমা না দিয়ে নিজ হাতে রেখে নিজের ইচ্ছামত ভূয়া বিল ভাউচার বানিয়ে তসরুপ করেছেন। বিদ্যালয়ের এমন কু-কিত্তি আর বিভিন্ন অনিয়ম দূর্ণীতি বুঝতে পেরে বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত সভাপতি বিশিষ্ট আয়কর উপদেষ্টা মির্জা ওয়ালিদ হোসেন শিপন বিদ্যালয়ের আয়-ব্যয়ের বিষয়টি নিরীক্ষণের জন্য একটি অডিট কমিটি নির্বাচন করে দেন এবং সরকারিভাবেও অডিটের ব্যবস্থা করতে সংশ্লিষ্ট বিভাগকেও অবগত করেন।


বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ অডিট টীমের সূত্রমতে জানা যায়, ২০১২ সাল থেকে ২০১৮ পর্যন্ত এস এস এম রফিকুল আলা অত্র প্রতিষ্ঠানে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এবং ২০১৮ সাল থেকে ২০২৪ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ প্রধান শিক্ষক ছিলেন। সর্বোসাকুল্যে তিনি এই প্রতিষ্ঠানে একটানা দীর্ঘ ১৬ বছর প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি দীর্ঘদিন প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করলেও ২০১৮ সালের আগ পর্যন্ত সেখানে আয়-ব্যায়ের কোনো হিসাব-নিকাশ খুঁজে পাওয়া যায় নাই।

বিদ্যালয়ের ক্যাশবই অনুযায়ী এবং অডিট টীমের হিসাব মতে ২০১৮ সালের পর থেকে শিক্ষার্থীদের বেতন, পরীক্ষা ও টিউশন ফিস, ঘরভাড়া এবং অন্যান্য খাত থেকে ৪ কোটি ১৩ লক্ষ ৬৬১ টাকা আয় হলেও দেখানো হয়েছে মাত্র ২ কোটি ৭০ লক্ষ ১০ হাজার ২১৩ টাকা। আবার এ টাকার মধ্যে ১ কোটি ১০ লক্ষ ৪৮ হাজার ৫৮১ টাকা জমা করা হলেও প্রদর্শিত ও অপ্রদর্শিত ৩ কোটি ২ লক্ষ ৮৭ হাজার ৮০ টাকার কোনো হিসাব নেই।


২০১৭ সালে আওয়ামী লীগ নেতা হুমাউনুর রশীদ মুহিত বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে এক নাগাড়ে ২০২৪ সাল পর্যন্ত পদটি আকড়ে রাখেন। ২০১৮ সালের দিকে তিনি বিদ্যালয় ভবনের সাথে ১শত ৮টি দোকানঘর তৈরির উদ্যোগ নেন। যেখানে দোকান প্রতি ৩‍‍`লক্ষ, ৪‍‍`লক্ষ হারে অগ্রিম টাকা নেওয়া হলেও হাতগোনা কয়েকটি দোকান বাদে কাউকেই চুক্তিপত্র বা অর্থ গ্রহনের রশিদ প্রদান করা হয়নি। এই খাত থেকে ৩ কোটি ২৪ লক্ষ টাকা আয় হওয়ার কথা থাকলেও ক্যাশ বইতে মাত্র ৯৪ লক্ষ ৫৯ হাজার ৩৫২ টাকা দেখানো হয়েছে।


আবার বিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাব থেকে বিভিন্ন সময়ে প্রধান শিক্ষক রফিকুল আলা বিদ্যালয় সভাপতি হুমাউনুর রশীদ মুহিতের টপটেন ভাটার হিসাব নম্বরে ৫১ লক্ষ টাকা ট্রান্সফারের পাশাপাশি সাবেক প্রধান শিক্ষক রফিকুল আলা অবসরে যাওয়ার আগে তিনটি চেকের মাধ্যমে ২৩ লক্ষ টাকা উত্তোলন করে আত্মসাত করেছেন।  এ ব্যাপারে সাবেক সভাপতি, সাবেক প্রধান শিক্ষক ও বর্তমান প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনীত বিভিন্ন অনিয়ম, দূর্ণীতি ও স্কুল ফান্ডের টাকা আত্মসাতের বিষয়ে সুষ্টু তদন্তের জন্য সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের বরাবর বর্তমান এডহক কমিটির সভাপতি মির্জা  ওয়ালিদ হোসেন শিপন একটি লিখিত অভিযোগ করেন। এ লিখিত অভিযোগের  ভিত্তিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর ঢাকার পরিচালকের  নির্দেশে ২৪ জুলাই হতে ২৮ জুলাই-২০২৫ তারিখ পর্যন্ত উক্ত প্রতিষ্ঠানটি   পরিদর্শন ও নিরীক্ষা টীম দ্বারা পরিদর্শন করা হবে বলে জানা গেছে।


বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক শেখ আবদুল মান্নান এ বিষয়ে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, টাকা ব্যাংকে জমা না দিয়ে তার কাছে রাখা এবং  ব্যয় করা সত্যিই তার ভুল হয়েছে।  তিনি বারবার নিজেকে অপরাধী বলে স্বীকার করেছেন।  

তবে তিনি বলেছেন যে, তিনি ঔই টাকাগুলি সঠিক কাজেই ব্যয় করেছেন। ব্যায়ের ভাউচারসহ অন্যান্য প্রমানাদি তার কাছেই জমা আছে। প্রতিষ্ঠানে তখন সভাপতি না থাকায় শিক্ষকদের বিশেষ অনুরোধে গচ্ছিত টাকা থেকে একটি অংশ শিক্ষকদের বেতন প্রদান করা হয়েছে। কিছু টাকা বিদ্যালয়ের উন্নয়নেই খরচ করা হয়েছে। তারও প্রমানাদি তার কাছে আছে বলে তিনি জানান এখানে  অবৈধভাবে কোন টাকা খরচ বা আত্মসাতের মতো ঘটনা ঘটেনি।


বিদ্যালয় ফান্ডের টাকা আত্মসাতের বিষয়টি জানতে প্রতিষ্ঠানের সাবেক সভাপতি ও আওয়ামীলীগ নেতা হুমাউনুর রশীদ মুহিত এবং সাবেক প্রধান শিক্ষক এ এস এম রফিকুল আলা বাড়িতে গিয়ে তাদের দেখা না পেয়ে তাদের একাধীক মোবাইল নম্বরে যোগাযোগের করার চেষ্টা করেও তাদের সাথে কথা বলা সম্ভব হয় নাই।


বিদ্যালয়ের বর্তমানএডহক কমিটির সভাপতি মির্জা ওয়ালিদ হোসেন শিপন বলেন, বিগত সময়ে প্রধান শিক্ষকসহ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি নানা উপায়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসার করেছেন। নিয়োগ বাণিজ্যে ও দোকানঘর বরাদ্ধ দিয়ে এবং ফান্ডের টাকা বিভিন্নভাবে ব্যয় দেখিয়ে তারা আত্মসাত করেছেন। এটা কখনই বিধিসম্মত হয়নি এবং এর একটি সুষ্টু তদন্ত হওয়া চাই। আর যারা প্রতিষ্ঠানের টাকা তসরুফ করেছেন তাদেরও দৃষ্টান্তমূলক শান্তি  হওয়া উচিত। যেকারণে ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটির সুনাম সুখ্যাতি ধরে রাখতে এবং শিক্ষারজ অনুকুল পরিবেশ উজ্জীবীত করতে সুষ্ট তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন।

 

একুশে সংবাদ/মা.প্র/এ.জে

Link copied!