AB Bank
  • ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২২ জুলাই, ২০২৫, ৭ শ্রাবণ ১৪৩২

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

ঢাকা মেডিক্যাল থেকে ফোন আসে রনি গুলি খেয়ে মারা গেছে"



ঢাকা মেডিক্যাল থেকে ফোন আসে রনি গুলি খেয়ে মারা গেছে

"বাবা বাইরে গণ্ডগোল চলে। বাইরে যাওয়ার দরকার নেই। এক দিন ভাত না খাইলে মানুষ মরে না। এরই মধ্যে বিকেল চারটার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল থেকে ফোন আসে রনি গুলি খেয়ে মারা গেছে।’ কথাগুলো বলছিলেন জুলাই শহীদ রনির মা। 

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ঢাকার রাজপথে সবচেয়ে বেশি প্রাণ হারিয়েছেন দ্বীপ জেলা ভোলার মানুষ। সরকারি গেজেট অনুযায়ী এ জেলায় মোট ৪৮ জন শহীদ হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে একজন ভোলায়, বাকিরা ঢাকার বিভিন্ন এলাকায়। ২০২৪ সলের ১৬ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত মোট ২১ দিনের মধ্যে তিন দিনেই প্রাণ হারিয়েছেন ৩৩ জন।

এর মধ্যে ১৯ জুলাই ১৩ জন, ৪ আগস্ট ১১ জন ও ৫ আগস্ট ৯ জন শহীদ হন। শহীদদের মধ্যে রয়েছেন ছাত্র, দোকানের কর্মচারী, ট্রাকচালক-হেলপার, রাজমিস্ত্রি, গার্মেন্টসকর্মী, ফুটপাতের দোকানদার, সিএনজিচালক, মসজিদের ইমাম, রিকশাচালক ও শ্রমিক। তাঁরা সবাই নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। অনেক পরিবার একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে অসহায় জীবন যাপন করছে।

শহীদদের মধ্যে ভোলা সদর উপজেলার ১২ জন হলেন ইলেকট্রিক মিস্ত্রি মো. শামীম হাওলাদার (৩৮), ছাত্র মিরাজ ফরাজী (১৮), রিকশাচালক মো. ইমন (২২), ফার্নিচার ব্যবসায়ী মো. দেলোয়ার (৩৬), মুদি দোকানার মো. মহিউদ্দিন (২৬), বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জুলফিকার আহমেদ শাকিল (২৩), সিকিউরিটি গার্ড আলাউদ্দিন মল্লিক (৫৭), শ্রমিক মো. রনি (২৩), ছাতা মেরামতকারী মো. জসিম উদ্দিন (৪৪), প্রাইভেট কারচালক মো. বাবুল (৪০), শ্রমিক জহিরুল ইসলাম শুভ এবং দোকান কর্মচারী মো. হাছান (১৮)। দৌলতখান উপজেলার তিনজন হলেন—ফুটপাতের দোকানদার মো. শাহজাহান (২৬), রাজমিস্ত্রি মো. রিয়াজ (২৬) ও গাড়িচালক মো. শাহিন (২৪)। বোরহানউদ্দিন উপজেলার ৯ জন হলেন বিকাশকর্মী মো. নাহিদুল ইসলাম (২১), ট্রাকশ্রমিক মো. সুজন (২২), রাজমিস্ত্রি মো. ইয়াছিন (২৩), রিকশাচালক মো. জামাল উদ্দিন (৩৫), কলেজ শিক্ষার্থী দীপ্ত দে (২২), গৃহকর্মী লিজা আক্তার (২৩), দোকান কর্মচারী মো. নয়ন (৩৪), গার্মেন্টসকর্মী মো. জাকির হোসেন (২৬) ও গার্মেন্টসকর্মী মো. সোহেল রানা (২২)। এ ছাড়া তজুমদ্দিন উপজেলায় একজন হলেন জুট ব্যবসায়ী মো. মনির হোসেন (৩৪)।

আর লালমোহন উপজেলার ১১ জন হলেন হোটেল কর্মচারী মো. আরিফ (১৭), লন্ড্রি দোকানি মো. মোছলেহ উদ্দিন (৩৫), রিকশাচালক মো. আক্তার হোসেন (৩৫), মসজিদের ইমাম মুফতি শিহাবউদ্দিন (৩০), মিষ্টির দোকানের কর্মচারী মো. শাকিল (২০), মাইক্রোচালক মো. হাবিবুল্লাহ (৪০), হোটেল কর্মচারী মো. সাইদুল (১৪), কম্পানির সেলসম্যান মো. ওমর ফারুক (১৭), সিএনজিচালক মো. সবুজ (২১), ট্রাকের হেলপার মো. আক্তার হোসেন (২৭), সবজি বিক্রেতা মো. হাসান (৩০)। অন্যদিকে চরফ্যাশন উপজেলার ১২ জন হলেন ফুটপাতের দোকানি মো. সিয়াম (১৫), বেসরকারি চাকরিজীবী মো. রাকিব মোল্লা (২৫), কম্পানির সেলসম্যান মো. সোহাগ (১৭), রাজমিস্ত্রি মো. বাহাদুর হোসেন মনির (১৮), গার্মেন্টসকর্মী মো. ফজলু (২৮), রাজমিস্ত্রি মো. ফজলে রাব্বি (২০), ইন্টারনেটকর্মী মো. হাসনাইন (২৫), কলেজ শিক্ষার্থী মো. মমিন (১৯), ট্রাকচালক মো. হোসেন (২৫), দোকান কর্মচারী মো. হাবিবুর রহমান (২৯), মুদি দোকানের কর্মচারী মো. ওমর ফারুক (১৬) ও দর্জি মো. তারেক (১৮)।

ভোলা সদর উপজেলার দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের শহীদ রনির মা মাইনুর বেগম বলেন, ‘রনি ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে টাইলস মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করত। ৫ আগস্ট সকাল ১০টার দিকে মোবাইলে কল করে আমার খোঁজখবর নিছে। আমিও ছেলের খোঁজখবর নিছি। ছেলেরে বলছি, ‘বাবা বাইরে গণ্ডগোল চলে। বাইরে যাওয়ার দরকার নেই। এক দিন ভাত না খাইলে মানুষ মরে না। এরই মধ্যে বিকেল ৪টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল থেকে ফোন আসে রনি গুলি খাইয়া মারা গেছে।’ 

ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার বড় মানিকা ইউনিয়নের উত্তর বাটামারা গ্রামের শহীদ নাহিদুল ইসলামের মা বিবি ফাতেমা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার মেয়ের পর আল্লায় একটা ছেলে দিছিল, আমার সেই ছেলেটারে বুক থেকে ছিনাইয়া নিয়া গেল।  সংসারে যে একটা বাত্তি জ্বালাইব, সেই লোকও নাই। আমার পুতের খুব মেধা ছিল। আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।’

ভোলা জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়,  জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সবচেয়ে বেশি শহীদ হয়েছেন ভোলার সন্তানরা। স্বজনদের হারিয়ে শহীদ পরিবারগুলোর যে ক্ষতি হয়েছে, সেটি আসলে অপূরণীয়। তারপরও সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন সময় আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এই পরিবারগুলোর সঙ্গে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব সময় যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। তাদের যে কোনো প্রয়োজনে সরকারের পাশাপাশি ভোলার জেলা প্রশাসন তাদের পাশে রয়েছে।

 

একুশে সংবাদ/ভো.প্র/এ.জে

Link copied!