দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে পুরনো ঢাকার সূত্রাপুর মৌজার অধীন বাড়ী-ঘর, পৈত্রিক সম্পত্তি, ফ্ল্যাট, জায়গা-জমি ইত্যাদিকে ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক খাস মহল ঘোষণাকে অবিলম্বে প্রত্যাহার এবং গেন্ডরিয়ার লোহারপুল হতে পোস্তগোলা পর্যন্ত বিধ্বস্ত রাস্তাটি জরুরী সংস্কার ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের খাজনা প্রদানের দাবীতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে পুরনো ঢাকা নাগরিক কমিটি নামের এক সংগঠন।
রবিবার (১৩ই জুলাই) রাজধানীর গেন্ডারিয়ার লোহারপুল হতে পোস্তগোলা পর্যন্ত সকল বাড়ির সামনে, ১ ঘন্টা রাস্তায় শান্তিপূর্ণ অবস্থান করেন বাড়ির মালিকরা। পরে সকলে পোস্তগোলা সেনানিবাস মূল সড়কের সামনে এসে মানববন্ধন পালন করেন। মানববন্ধনে প্রদান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিন।
এ সময় পুরনো ঢাকা নাগরিক কমিটির সভাপতি শেখ ফজলুর রহমান বকুল বলেন, ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক দীর্ঘ ৭০/৮০ বছর পর ২০১১ সালে সূত্রাপুর মৌজার ৩০/৩৫ লক্ষাধিক মানুষের স্ব স্ব বাড়ী এবং জমি ও সম্পত্তিকে অবৈধভাবে খাস মহল ও লীজের নামে হয়রানিমূলক ঘোষণার মাধ্যমে খাজনা নেওয়া বন্ধ করে রেখেছে। অথচ যুগ যুগ ধরে আমরা সিএস, আরএস, এসএ ও সর্বশেষ সিটি জরিপে আমাদের নামে সম্পত্তির রেকর্ডের ভিত্তিতে খাজনা পরিশোধ করে আসছি।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, এখন কেন খাজনা নেওয়া হবে না। খাজনা না নেওয়ার কারণে দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে পুরনো ঢাকার দক্ষিণের ৩০/৩৫ লক্ষ মানুষ তাদের বাড়ী ও পৈত্রিক সম্পত্তির সমূহের নামজারি, জমি হস্তান্তর, জমি বা ফ্ল্যাট ক্রয়-বিক্রয়ও রেজিষ্ট্রী করতে পারছে না। এমন কি পিতা-মাতার মৃত্যুর পর ওয়ারিশরা বাড়ী ঘর বা সম্পত্তির ভাগাভাগি, বন্টননামা, হেবা রেজিস্ট্রী, রাজউক কর্তৃক প্লান পাশ বা অনুমোদন, নিজ জমি বা সম্পত্তিতে ডেভলপার দিয়ে বিল্ডিং নির্মাণ করতে এবং ব্যাংক লোন নিতে পারছে না। এতে এলাকা সমূহে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারও হচ্ছে না এবং উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড চরমভাবে এলাকাতে বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে। এছাড়াও সরকার নিজেও খাজনা না নেওয়ার কারণে শত শত কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
শেখ ফজলুর রহমান বকুল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে এর সমাধানে হস্তক্ষেপ কামনা করেন। ৩০ জুলাই এর মধ্যে এর সমাধান না হলে বৃহৎ আন্দোলনের হুশিয়ারী দেন।
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ভূমি ও সংশ্লিষ্ট অফিসগুলো এখনও দুর্নীতির বড় আখড়া। কিন্তু পুরান ঢাকার ৩০/৩৫ লক্ষ মানুষের কষ্টের দিকে সরকার একবারও ভ্রুক্ষেপ করছে না। ১৪ বছর ধরে ভূক্তভোগী হিসেবে এটাই আমাদের বড় দুঃখ ও বেদনা। আমরা এই বৈষমের অবসান চাই। এ বৈষম্য দূর করার জন্যই ২৪ জুলাই ছাত্র-জনতা রক্ত দিয়েছিল। মানুষের জন্য আইন, আইনের জন্য মানুষ নয় বিষয়টি বিবেচনা করে এলাকার ৩০/৩৫ লক্ষ মানুষকে আইনের মারপ্যাচ থেকে মুক্ত করে দেওয়ার জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ের নিকট আকুল আহব্বান জানান।
তিনি বলেন, পুরনো ঢাকার গেন্ডারিয়া লোহারপুল হতে পোস্তগোলা পর্যন্ত সড়কের বেহাল অবস্থার জন্য যাতায়াতে দূর্ভোগের নিরসন কামনা করেন। জরুরী ভিত্তিতে এই রাস্তার সংস্কার কাজ শেষ করতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করর্পোরেশন আর কোন উদাসীনতার ভূমিকা নিবে না বলে আশাপ্রকাশ করেন তিনি।
এ সময় পুরনো ঢাকার সূত্রাপুর, ফরিদাবাদ, মিলব্যারাক, আরসিনগেট, আইজিগেইট, গেন্ডারিয়া, শ্যামপুর, ওয়ারী ও কোতয়ালী থানা এলাকার ভূক্তভোগী বাড়ী-ঘর ও সম্পত্তির মালিক এবং জনগণ উপস্থিত ছিলেন।
একুশে সংবাদ/রাফি/বাবু/এ.জে