ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে ড্রাগনের ভালো ফলন হলেও বাজারে দাম কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। খরচের টাকাও উঠছে না—এমন আশঙ্কায় ভুগছেন অনেকে। এ অবস্থায় অনেকেই ভ্রাম্যমাণভাবে রাস্তায় বসে ড্রাগন বিক্রি করছেন।
চাষিদের দাবি, মৌসুমি ফলের আধিক্য ও অতিরিক্ত আমদানি ড্রাগনের বাজারদরকে বেহাল করে দিয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলামও তা নিশ্চিত করেছেন।
কোটচাঁদপুর পৌর শহরের কালিগঞ্জ-জীবননগর সড়কে অবস্থিত ড্রাগন বাজারটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম আম বাজার হিসেবে পরিচিত। এখানে প্রতিদিন প্রায় ২ কোটি টাকার ফল—যার মধ্যে ড্রাগনের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য—বিক্রি হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলেই এখান থেকে ফল সরবরাহ করা হয়।
এ বছর আমের পাশাপাশি পেয়ারাসহ বিভিন্ন মৌসুমি ফলের আমদানি বেশি হওয়ায় ড্রাগনের দাম পড়ে গেছে। তবে সংশ্লিষ্টরা আশাবাদী, সামনে ড্রাগনের দাম কিছুটা বাড়তে পারে।
বলাবাড়িয়া গ্রামের চাষি জহুরুল ইসলাম জানান, “আমার ১২ বিঘা জমিতে ড্রাগন চাষ রয়েছে। প্রথম দিকে কিছুটা ভালো দাম পেয়েছিলাম, কিন্তু এখন যে দামে বিক্রি হচ্ছে, তাতে খরচই উঠছে না। বছরের অন্য সময়েও ড্রাগন কাটা যায় বটে, কিন্তু এই মৌসুমেই ফলন বেশি হয়।”
মহনপুর গ্রামের চাষি রবিউল ইসলাম বলেন, “ড্রাগনের দাম এতটাই কম যে এখনো গাছে পাকা ফল কাটা হচ্ছে না। এভাবে চললে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।”
‘মোমিন ফল ভান্ডার’-এর মালিক মোমিনুর রহমান বলেন, “প্রথম দিকে কিছু চাষি ভালো দাম পেলেও গেল এক সপ্তাহে বাজার খুব খারাপ। আমরা যে ফল ‘এ গ্রেড’ হিসেবে বিক্রি করি, তা এখন ৮০-৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ‘বি’ ও ‘সি’ গ্রেডের দাম নেমে এসেছে ২০-৩০ টাকায়।”
তিনি জানান, চাষিদের জন্য এই দামে ফল বিক্রি করা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য, কারণ এতে উৎপাদন খরচই ওঠে না।
কোটচাঁদপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, “এ বছর উপজেলায় ৪৩৯ হেক্টর জমিতে ড্রাগনের চাষ হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ১৩ হেক্টর কম। কিছু মানুষ মনে করেন ড্রাগনে টনিক ব্যবহার হয়—এ নিয়ে একটি ভয় মানুষের মধ্যে ছড়িয়েছে, যদিও এ বছর টনিক ব্যবহারের হার অনেক কম। তারপরও বাজারে চাহিদা কম।”
তিনি আরও বলেন, “মৌসুমি ফলের আধিক্য ও বেশি আমদানি ড্রাগনের দাম কমিয়ে দিয়েছে। তবে সামনে কিছুটা দাম বাড়তে পারে, তখন হয়তো কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন চাষিরা।”
ড্রাগন একটি লাভজনক ফসল হলেও বাজার ব্যবস্থাপনা ও গণসচেতনতার অভাবে চাষিরা বারবার লোকসানের মুখে পড়ছেন। সরকারের পক্ষ থেকে ফল বাজারজাতকরণ ও চাষিদের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নেওয়া এখন সময়ের দাবি।
একুশে সংবাদ/ঝি.প্র/এ.জে