ঝালকাঠির নলছিটিতে মহানবী (সা.) সম্পর্কে কটূক্তির প্রতিবাদে এক শিক্ষককের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।
মঙ্গলবার (২৭ মে) রাতে নলছিটি গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের হিন্দু ধর্মীয় শিক্ষক মিলন কান্তি দাসের বিরুদ্ধ এ বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা। বিক্ষোভ মিছিলটি শহর প্রদক্ষিণ শেষে বাস স্ট্যান্ড মোড়ে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়। সমাবেশে বক্তারা ওই শিক্ষককে দ্রুত অপসারণসহ তার বিচার দাবি করেন । অভিযুক্ত শিক্ষক মিলন কান্তি দাস গত ১৫ মে দশম শ্রেণিতে (ভোকেশনাল শাখায় শাখায়) বাংলা বিষয়ে পাঠদানকালে নবীজিকে (সা.) নিয়ে এবং ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে কটূক্তি করেন বলে অভিযোগ ওঠে। পরে অভিযুক্ত শিক্ষক অন্য শিক্ষক ও ছাত্রীদের উপস্থিতিতে এ ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয়রা ওই শিক্ষকের বিচারের দাবিতে ফুঁসে ওঠেন। এ বিষয়ে জানতে পেরে ১৯ মে রাতে নলছিটি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নজরুল ইসলাম তার দপ্তরে জরুরি ভিত্তিতে সভা ডাকেন। এতে নলছিটি থানার ওসি মো. আব্দুস সালাম, মসজিদের ইমামগণ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সভায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে বিষয়টি দ্রুত তদন্ত করে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ২১ মে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থেকে ওই শিক্ষককে একটি কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. আনোয়ার আজিমের স্বাক্ষরিত নোটিশে উল্লেখ করা হয়, গত ১৫ মে আপনি (ওই শিক্ষক) ক্লাসে পাঠদানকালে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত জনিত বক্তব্য প্রদানের জন্য কেন আপনার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না। তা পত্র প্রাপ্তির ০৩(তিন) কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো। এতে পরিস্থিতি মোটামুটি শান্ত হয়ে উঠেছিল। এরই মধ্যে ২৪ মে শনিবার স্কুল চলাকালীন সময় এক শিক্ষিকা ছাত্রীদের ডেকে শিক্ষক মিলন কান্তির কাছে ক্ষমা চাওয়ান। পরবর্তীতে এ ঘটনা জানাজানি হলে পরিস্থিতি ফের অশান্ত হয়ে ওঠে। মঙ্গলবার রাতে বিক্ষুব্ধ জনতা ওই শিক্ষকের অপসারণ ও বিচারের দাবিতে শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন।
এদিকে এ ঘটনায় স্থানীয়ভাবে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একাধিক ব্যক্তি প্রতিবাদ জানিয়ে পোস্ট করছেন।
অভিযুক্ত শিক্ষক মিলন কান্তি দাস বলেন, ‘আমি ক্লাসে পাঠদানকালে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগার মতো কোনো বক্তব্য দেইনি। এরপরও আমি ছাত্রীরা যাতে মনে কষ্ট না পায় এজন্য তাদের কাছে পরে অন্য শিক্ষকদের উপস্থিতিতে দুঃখ প্রকাশ করেছি। তিনি আরও বলেন, আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা গুজব ছড়ানো হচ্ছে।’
ওই প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক জলিলুর রহমান আকন্দ বলেন, শিক্ষক মিলন কান্তি দাসকে ক্লাসে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে ২৪ মে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. আনোয়ার আজাদ জানান, ‘অভিযোগের ভিত্তিতে ওই শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জবাব দাখিল করেছেন। পরে শিক্ষক মিলন কান্তির কাছে ছাত্রীদেরকে ক্ষমা চাওয়ানো হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। এতে পরিস্থিতি আবার অশান্ত হয়ে ওঠে। এখন তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আজ বুধবার সন্ধ্যা সোয়া ৬টা পর্যন্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে ফের মিটিং হয়েছে বলে জানা গেছে। ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন এমন এক ব্যক্তি জানান, ৫(পাঁচ) জন কর্মকর্তাকে নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটি স্থানীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, আলেম-ওলামা এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সমন্বয় করে সরেজমিনে বিষয়টি বৃহস্পতিবার ২৯ মে তদন্ত করবেন। তাৎক্ষণিকভাবে ওই সভার বিস্তারিত জানা সম্ভব হয়নি।
একুশে সংবাদ / ঝা.প্র/এ.জে