চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার হারুয়ালছড়ি ইউনিয়নের নয়াহাট ও বাশি মহাজনের হাটের মাঝামাঝি নাজিরহাট-কাজিরহাট সড়কে হাজারিখীল সংযোগ মোড়ে নির্মিত ‘গ্রুপ ক্যাপ্টেন আবু জাফর চৌধুরী স্মৃতি বিমান চত্বর’ এখন জনপ্রিয় পর্যটন স্পট হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
প্রতিদিন বিকেল হলেই এই স্থানে ভিড় করেন স্থানীয় দর্শনার্থী ও দূরদূরান্ত থেকে আসা পর্যটকরা। বিশেষ করে সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে এখানে উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়। মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাথা স্মরণে নির্মিত এই বিমান চত্বর এখন বিনোদন ও ঐতিহাসিক চেতনার মিলনস্থলে পরিণত হয়েছে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা গ্রুপ ক্যাপ্টেন আবু জাফর চৌধুরী: জীবনী ও অবদান
১৯৫৩ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার হারুয়ালছড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আবু জাফর চৌধুরী। তাঁর পিতা মরহুম আলহাজ আলী আহমদ চৌধুরী ছিলেন একজন ধর্মপ্রাণ মানুষ, যিনি তুরস্কের একজন বিখ্যাত আলেমের শিষ্য ছিলেন।
মাত্র ১৮ বছর বয়সে, স্নাতক পর্যায়ে অধ্যয়নরত অবস্থায়, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তিনি। সেক্টর-০১-এর অধীনে পার্বত্য চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে সম্মুখযুদ্ধে সাহসিকতার সঙ্গে লড়েন।
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রথম ব্যাচে ফ্লাইট ক্যাডেট হিসেবে যোগদান করেন। এরপর সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের ফ্রুনজে সামরিক অ্যাকাডেমি থেকে বৈমানিক প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে ফিরে অপারেশনাল পাইলট, অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ও সামরিক দোভাষী হিসেবে কাজ করেন।
পেশাগত জীবনে তিনি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ অপারেশনাল ইউনিটে দায়িত্ব পালন করেন। ইরাকে যুদ্ধবিমানের ফ্লাইং ইনস্ট্রাক্টর হিসেবে এবং দেশে ‘অপারেশন টাইফুন’-এ হেলিকপ্টার পাইলট হিসেবে ভূমিকা রাখেন।
অবসর জীবন ও সমাজসেবা
২০০২ সালে তিনি ঢাকা মার্চেন্টাইল কো-অপারেটিভ ব্যাংক লিমিটেড (ডিএমসিবি)-এর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেন। তার নেতৃত্বে মাত্র ৭টি শাখা ও ৬০ লাখ টাকা আমানত থেকে শুরু করে আজ ১৪৭টি শাখা ও প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক লেনদেন পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
সমাজসেবায়ও রয়েছে তার ব্যাপক অবদান। তিনি ‘প্রয়াস’-সহ বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানে দান, গৃহহীনদের ঘর নির্মাণ, দরিদ্রদের সহায়তা, মসজিদ নির্মাণ, যাকাত তহবিল গঠনসহ বহু জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডে যুক্ত।
নিজ গ্রামে নির্মাণ করেছেন একটি দৃষ্টিনন্দন মসজিদ, যেখানে শত শত মানুষ একসঙ্গে নামাজ আদায় করেন।
সম্মাননা ও স্বীকৃতি
২০১৯ সালে ওয়ার্ল্ড কনফেডারেশন অব বিজনেস কর্তৃক তাকে দেওয়া হয় আন্তর্জাতিক ‘বিজ অ্যাওয়ার্ড’।
স্মৃতি বিমান চত্বর: গৌরবের প্রতীক
ফটিকছড়ির জনগণের জন্য ‘আবু জাফর চৌধুরী স্মৃতি বিমান চত্বর’ কেবল একটি সৌন্দর্য্যবর্ধক স্থান নয়, বরং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও চেতনার জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। এটি প্রমাণ করে—একজন মুক্তিযোদ্ধার সাহস, দেশপ্রেম ও মানবিক চেতনা কিভাবে প্রজন্মের পর প্রজন্মকে আলোকিত করতে পারে।
একুশে সংবাদ/চ.প্র/এ.জে
    
                        

                                        
                                            
                                                        
                            
একুশে সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
												
												
												
												
												
												
												
												
                                            
                                            
                                            
                                            
