সম্প্রতি র্যাব-৭ (চট্টগ্রামে) এ কর্মরত থাকাবস্থায় সিনিয়র এএসপি পলাশ সাহার আত্মহত্যার ঘটনা নিয়ে বড় ভাই লিটন সাহা আবেগে আপ্লুত হয়ে বলেছেন, ‘আমাদের দুই পরিবার নিয়ে বিভিন্নজনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মনগড়া সব কথা লিখছেন। সাংবাদিক ভাইয়েরা যে যার মতো রিপোর্ট করছেন। বিভিন্নজনে নিজেদের মত করে কনটেন্ট তৈরি করছেন। আপনাদের কাছে হাত জোর করে মিনতি করছি, আপনারা এসব বন্ধ করুন। আমাদের দুটি পরিবারকে একটু শান্তিতে থাকতে দিন।’
আজ মঙ্গলবার (১৩ মে) সকালে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার তারাশী গ্রামের নিজ বাড়িতে বসে স্থানীয় সাংবাদিকদের মাধ্যমে সব গণমাধ্যম, ফেসবুক ব্যবহারকারী, কনটেন্ট ক্রিয়েটর ও দেশবাসীর উদ্দেশ্যে লিটন সাহা এসব কথা বলেন।
লিটন সাহা আরও বলেন, ২০০৩ সালে আমার বাবা মারা যায়। তখন আমার ছোট ভাই পুলিশের সাবেক সিনিয়র এএসপি পলাশ সাহা ষষ্ঠ শ্রেণিতে ও আরেক ভাই নন্দলাল সাহা নবম শ্রেণিতে পড়তো। আমি তখন বিএসসিতে অধ্যয়নরত ছিলাম। বাবা মৃত্যুর আগে আমাকে বলে যায়, ‘তোর দুই ভাই ও মাকে দেখে রাখিস। ভাই দুজনকে এমএ পাস করাইস’। আমি বাবার কথা রেখেছি। আমার লেখাপড়া বাদ দিয়ে টিউশনি করে আমার ছোট দুই ভাইকে এমএ পাস করিয়েছি। ওদের কোনো দুঃখ কষ্ট বুঝতে দেইনি। আমি ভাই হিসেবে নয়, ওদেরকে সন্তান হিসেবে বড় করেছি। আজ আমার সেই সন্তানতুল্য ভাই পলাশ পৃথিবীতে নেই! আমার মা তার ছেলেকে হারিয়েছে, পলাশের স্ত্রী সুস্মিতা তার স্বামীকে হারিয়েছে। কিন্তু আমি যে কি হারিয়েছি তা কাউকে বুঝাতে পারবো না।’
কান্নাজাড়িত কণ্ঠে লিটন সাহা বলেন, ‘আমার ভাইয়ের মৃত্যুর জন্য আমি কাউকে দোষারোপ করছি না। আজকে প্রায় ৭ দিন হয়ে গেলেও আমি আমার ভাইয়ের জন্য ধর্মীয় কোন কাজ করতে পারছি না। সাংবাদিকসহ বিভিন্ন কনটেন্ট ক্রিয়েটর ভাইয়েরা আমাদেরকে একটু সুস্থ থাকতে দিচ্ছেন না। যতদূর হয়েছে আপনারা আমাদেরকে ক্ষমা করুন। ধর্মীয় ও সামাজিকভাবে পলাশের স্ত্রী এখনও আমাদের পরিবারের সদস্য। যেহেতু পলাশ আমার সন্তানের মত ছিল তাই আমি যতোদিন বেঁচে থাকবো ততোদিন তার পাশে থাকব।’
সিনিয়র এএসপি পলাশ সাহা কোটালীপাড়া উপজেলার তারাশী গ্রামের মৃত বিনয় সাহার ছোট ছেলে। পলাশ ছিলেন খুবই মেধাবী। সে কোটালীপাড়া পাবলিক ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশন থেকে এসএসসি ও শেখ লুৎফর রহমান আদর্শ সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়। স্নাতকোত্তর শেষ করে সাব রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করে। আরও ভালো কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার জন্য একের পর এক চাকরির পরীক্ষা দেয়। যেখানেই পরীক্ষা দেয় সেখানেই চাকরি হয়। একে একে পুলিশের এসআই, আনসারের সহকারি পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক, ৩৬তম বিসিএসএ শিক্ষা ক্যাডারে চাকরি পেলেও ৩৭তম বিসিএসএ পুলিশ ক্যাডারের এএসপি হিসেবে চাকরি হলে সাব রেজিস্ট্রারের চাকরি ছেড়ে পুলিশে যোগ দেয়।
গত বুধবার (৭ মে) দুপুরে সিনিয়র এএসপি পলাশ সাহা পারিবারিক কলহের জের ধরে র্যাব-৭ চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামী ক্যাম্পের নিজ অফিস কক্ষে আত্মহত্যা করেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে কোটালীপাড়া উপজেলার পাড়কোনা মহাশ্মশানে তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
একুশে সংবাদ/গো.প্র/এ.জে