"আত্মহননের চেষ্টায় ব্যর্থ মানুষগুলোকে সমাজের মূলধারায় ফিরিয়ে আনতে হবে। এ জন্য আমাদের তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে"—মঙ্গলবার ঝিনাইদহ জেলার কোটচাঁদপুর উপজেলার এলাঙ্গী ইউনিয়ন পরিষদে আয়োজিত বিশেষ উঠান বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমন মন্তব্য করেছেন জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল।
তিনি বলেন, “যারা আত্মহননের চেষ্টা করেন, পরবর্তীতে সমাজে তারা অবহেলিত হন। তারা নিজেদের একাকী ও ছোট মনে করেন। আমাদের সম্মিলিত প্রয়াসে তাদেরকে পুনরায় সমাজের স্বাভাবিক ছন্দে ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন।”
দীর্ঘদিন ধরেই আত্মহত্যার হার বিচারে দেশের শীর্ষে থাকা ঝিনাইদহ জেলায় এই সংকট মোকাবেলায় জেলা প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান তিনি। ইতোমধ্যে জেলার বিভিন্ন উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে বিশেষ কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে।
জেলা প্রশাসক বলেন, “প্রত্যেকটি জায়গায় গিয়ে কাজ করা সম্ভব না হলেও আমরা উপজেলা প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ ও স্থানীয় নেতৃত্বকে এই ইস্যুতে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে আহ্বান জানিয়েছি।”
উঠান বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী আনিসুল ইসলাম।
বিশেষ অতিথি ছিলেন:কোটচাঁদপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আমানউল্লাহ আল মামুন, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবির হোসেন মাতুব্বর, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম, পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তরুণ কুমার দাস ।
“জীবনকে ভালোবাসুন, আত্মহত্যাকে না বলুন”—এ প্রতিপাদ্যে আয়োজিত বৈঠকে এলাঙ্গী ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ড থেকে ২৫ বছরের মধ্যে আত্মহননের চেষ্টায় ব্যর্থ হওয়া ৩৬ জন নারী-পুরুষ অংশ নেন। তাদের মধ্যে ৭ জন পুরুষ ও ২৯ জন নারী ছিলেন।
উপস্থিত অংশগ্রহণকারীরা নিজের জীবনে আত্মহত্যার চেষ্টা ও তার পেছনের কারণ সম্পর্কে খোলামেলা বক্তব্য দেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উঠে এসেছে পারিবারিক কলহ, দারিদ্র্য ও সামাজিক চাপের চিত্র। হাতে গোনা কিছু ঘটনা প্রেমঘটিত হলেও অধিকাংশই ছিল চরম হতাশাজনিত পারিবারিক সংকটের ফল।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন উপজেলা তথ্যসেবা কর্মকর্তা তানিয়া সুলতানা।
এই ব্যতিক্রমী আয়োজন স্থানীয় পর্যায়ে একটি মানবিক বার্তা ছড়িয়ে দেয়:“মানুষ যখন ভেঙে পড়ে, তখন তাকে আরও নিচে ঠেলে না দিয়ে হাতে ধরে তুলে নেওয়াটাই সবচেয়ে বড় দায়িত্ব।”
একুশে সংবাদ/ঝি.প্র/এ.জে