মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাসেবা কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে। আড়াই লক্ষাধিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবার ভরসা এই ৩১ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটি। তবে সেখানে চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র দুজন। চিকিৎসকের অভাব, ওষুধ সংকট, দীর্ঘদিন ধরে অকেজো যন্ত্রপাতি ও শূন্যপদে লোক নিয়োগ না হওয়ায় জনসাধারণের চিকিৎসা সেবা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন শুধু ডা. গোলাম কিবরিয়া ও ডা. অসিম কুমার বিশ্বাস। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসেবে পদায়নকৃত ডা. ইসমত জাহান ভূঁইয়া আইনি জটিলতায় এখনও যোগদান করতে পারেননি। ফলে প্রতিদিন গড়ে ৬০০–৭০০ বহির্বিভাগীয় রোগী এবং একাধিক ভর্তিকৃত রোগীকে সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা।
পর্যাপ্ত ডাক্তার না থাকায় বহির্বিভাগের বেশিরভাগ রোগীকে সেবা দিচ্ছেন ডিপ্লোমা ইন মেডিকেল ফ্যাকাল্টি (ডিএমএফ) ডিগ্রিপ্রাপ্ত কর্মীরা। এতে করে সঠিক চিকিৎসা না পাওয়ার অভিযোগে অনেকেই ফিরে যাচ্ছেন কিংবা বাধ্য হচ্ছেন মৌলভীবাজার সদর হাসপাতাল বা বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে।
চিকিৎসা সরঞ্জামের অবস্থাও শোচনীয়। ২০০৪ সালে বরাদ্দ পাওয়া এক্স-রে মেশিনটি দুই দশকের বেশি সময় ধরে অব্যবহৃত পড়ে রয়েছে। অপারেশন থিয়েটারে দীর্ঘদিন ধরে তালা ঝুলছে। নেই অপারেশন, নেই কোনো পরীক্ষার সুবিধা—এক্স-রে, ইসিজি, আল্ট্রাসনোগ্রাম, ইউরিন টেস্টসহ গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষাগুলো বন্ধ। ওষুধ সরবরাহও সীমিত; বেশিরভাগ ওষুধ কিনে নিতে হয় বাইরের ফার্মেসি থেকে।
চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা আক্ষেপ করে বলেন, "এই হাসপাতাল যেন নিজেই রোগী হয়ে পড়েছে। এখানে আসলে চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যেতে হয়।"
স্বাস্থ্য পরিদর্শক (ইনচার্জ) মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, নতুন স্বাস্থ্য কর্মকর্তার যোগদান আটকে থাকায় শুধু চিকিৎসা নয়, প্রশাসনিক কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে। এমনকি কর্মীদের বেতন-ভাতা প্রদানেও জটিলতা দেখা দিতে পারে।
মেডিকেল অফিসার ডা. অসিম কুমার বিশ্বাস জানান, "মাত্র দুজন চিকিৎসক দিয়ে এতো রোগীর চিকিৎসা দেওয়া প্রায় অসম্ভব। তার পরও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।"
ভারপ্রাপ্ত উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. গোলাম কিবরিয়া বলেন, "চিকিৎসকসহ জনবল সংকটের কারণে চিকিৎসাসেবা কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।"
রাজনগরবাসীর প্রশ্ন—স্বাস্থ্য খাতের এত উন্নয়ন বাজেটের মাঝেও কেন এমন বিপর্যয়? দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে পুরো উপজেলা স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় ধস নামার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
একুশে সংবাদ/মৌ.প্র/এ.জে