ঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি থেকে উপকূল রক্ষায় ভোলার মনপুরা উপজেলায় চলছে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ। বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য ছিল সবুজ বেষ্টনীর সংরক্ষণ ও পরিবেশবান্ধব বাঁধ নির্মাণ। তবে বাস্তবে ঘটছে তার বিপরীত। স্থানীয়দের অভিযোগ, বাঁধ নির্মাণে ধ্বংস করা হচ্ছে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও চরাঞ্চল।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শুরু হওয়া “ভোলা জেলা মুজিবনগর মনপুরা উপকূলীয় বাঁধ পুনর্বাসন, নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও তীর সংরক্ষণ” প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ছয়টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান— এন.বি.ই, ও.টি.বি.এল, জি.সি.এল, এল.এ.কে.এস.এস.এ, পি.ডি.এল ও ওয়েস্টান। ২০২৬ সালের মধ্যে কাজ শেষ করার লক্ষ্য থাকলেও ইতোমধ্যেই কাজের মান ও বনভূমি ধ্বংস নিয়ে ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয়রা জানান, সাব-ঠিকাদারদের মাধ্যমে পরিচালিত এই প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম চলছে। বাঁধ নির্মাণে বালুর বদলে স্থানীয় চর থেকে সংগ্রহ করা বালু মিশ্রিত মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে শুধু সংরক্ষিত বনাঞ্চলই নয়, আশপাশের চর ও কৃষিজমিও হুমকির মুখে পড়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মিজান অভিযোগ করেন, “বাঁধের পাশের বাসিন্দাদের পুনর্বাসন বা ক্ষতিপূরণ ছাড়াই গাছপালা ও ফসলি জমি ধ্বংস করে চলছে নির্মাণকাজ। অসহায় ভূমিহীন মানুষদের অন্যত্র সরে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে।”
বাকের, রহিম ও ফিরোজসহ আরও অনেকে জানান, বন উজাড়ের কারণে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে ঝুঁকি বহুগুণে বাড়বে। তাছাড়া মাটি দিয়ে নির্মিত বাঁধের স্থায়িত্ব নিয়েও তাঁদের শঙ্কা রয়েছে।
এই বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড (ওয়াবদা)-এর সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার (এসও) মো. আব্দুর রহমান জানান, “মনপুরার বাঁধের কাজ গত ১৫ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। চর কেটে মাটি আনা ও কিছু গাছ কাটার সরকারি অনুমোদন রয়েছে।”
অন্যদিকে, বন বিভাগের মনপুরা রেঞ্জ কর্মকর্তা রাশেদুল হাসান বলেন, “বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় নির্ধারিত গাছ কেটে ফেলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। গাছ কাটার প্রক্রিয়া ভোলা জেলা বন বিভাগ থেকে সম্পন্ন হয়েছে এবং সরকারি টেন্ডার অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।”
স্থানীয়দের দাবি, অনিয়ম, বন ধ্বংস এবং দুর্বল নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারে এই প্রকল্প ব্যর্থ হলে পুরো উপকূলবাসীর জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে পড়বে। তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে নিরপেক্ষ তদন্ত ও কার্যকর পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন।
একুশে সংবাদ/বিএইচ



একুশে সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

