AB Bank
  • ঢাকা
  • শনিবার, ০৩ মে, ২০২৫, ২০ বৈশাখ ১৪৩২

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

লিবিয়া উপকূলে নিহতদের মধ্যে ১০ জনই মাদারীপুরের


Ekushey Sangbad
জেলা প্রতিনিধি, মাদারীপুর
০৯:০৩ পিএম, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

লিবিয়া উপকূলে নিহতদের মধ্যে ১০ জনই মাদারীপুরের

লিবিয়া হয়ে সমুদ্রপথে ইতালি যাওয়ার সময় ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে নিহত ২৩ জনের মধ্যে ১০ জনের পরিচয় মিলেছে, যারা মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার বাসিন্দা। নিহতদের মধ্যে দুজন মামা-ভাগ্নে সম্পর্কিত। পুরো উপজেলায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এ ঘটনার জন্য দালালদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছেন স্বজন ও এলাকাবাসী। পুলিশ জানিয়েছে, আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এবং নিহতদের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনতে প্রশাসন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার পশ্চিম স্বরমঙ্গল গ্রামের হাসান মাতুব্বর ও কুলসুম বেগমের ছেলে টিটু হাওলাদার পরিবারের সচ্ছলতা ফেরাতে অবৈধভাবে সমুদ্রপথে ইতালি পাড়ি জমাতে গিয়ে নৌকাডুবিতে মারা যান। মোবাইলে ছেলের মৃত্যুর ছবি দেখে সংবাদে শোকে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন তিনি। ছেলেকে ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলে বার বার মুর্ছা যান।

নিহত টিটু হাওলাদারের মা কুলসুম বেগম বলেন, ‘আমি আমার বাবাকে চাই। আমার এই একটাই সন্তান। আমি অনেক কষ্ট করে আমার সন্তানকে বড় করেছি। আমি রফিক দালালকে ১৬ লাখ টাকা দিছি। সে বলছে, আমার ছেলে সুন্দরভাবে পাঠাবে।’

একইভাবে কান্নায় ভেঙে পড়ে টিটুর বাবা হাসান হাওলাদার বলেন, ‘আমি অনেক কষ্ট করে আমার ছেলেকে বড় করছি। অনেক ধারদেনা করে পাঠাই। এখন আমি কীভাবে ধারদেনা শোধ করব। আমার ছেলে তো নাই। গতকাল দালালে আমার ছেলের লাশের ছবি পাঠাইছে। আমি এখন কী করব।’

শোকে স্তব্দ হয়ে আছে টিটু হাওলাদারের মামা আবুল বাশার আকনের বাড়িতেও। নিহত টিটু হাওলাদারের মামা আরেক নিহত আবুল বাশার আকনের বড় ভাই বাচ্চু আকন বলেন, ‘আমি আমার ভাই ও ভাগিনাকে হারিয়ে ফেলেছি। আমার ভাইয়ের জন্য দুবারে দুই দালালকে ২৮ লাখ টাকা দিয়েছি। জমি-জমা বিক্রি করেছি। ধারদেনা করেছি। এখন আমরা সর্বশান্ত হয়ে গেছি। সরকারের কাছে দাবি করছি, টাকা-পয়সা সবই তো গেছে। এখন আমার ভাইয়ের লাশটা সরকার ফিরিয়ে যেন দেয়। আর ভাগিনা টিটুর লাশটাও সরকারের কাছে ফেরত চাই। আর ঘটনার সঙ্গে জড়িত দালালদের কঠোর শাস্তি দাবি করছি।’

শুধু টিটু হাওলাদারের পরিবারই নয়। মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার ১০ যুবকের নৌকাডুবিতে মৃত্যুর ঘটনায় এলাকাজুড়ে চলছে শোকের মাতম। নিহতদের স্বজনরা জানায়, দালালদের খপ্পরে পড়ে গত জানুয়ারি মাসের শুরুতে ইতালির উদ্দেশে বাড়ি ছাড়ে মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার সুন্ধিকুড়ি গ্রামের সাগর বিশ্বাস, আশীষ কীর্তনীয়া, সাগর বাড়ৈ। শাখারপাড়ের সজীব মোল্লা, সাদবাড়িয়ার রাজীব হোসেন, বৌলগ্রামের অনুপ সরকার ও নৃপেন কীর্তনীয়া, গোবিন্দপুর গ্রামের ইনসান শেখ ও আবুল বাশার। পশ্চিম স্বরমঙ্গল গ্রামের টিটু হাওলদার ও গোবিন্দপুর গ্রামের আবুল বাশার সম্পর্কে মামা-ভাগ্নে। আবুল বাশার লিবিয়া কয়েক মাসে আগেই গিয়েছিলেন। পরে যান তার ভাগ্নে টিটু হাওলাদার। গত ২৪ জানুয়ারি লিবিয়া থেকে একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় যাত্রা করেন তারা। মাঝপথে ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে প্রাণ হারায় ২৩ জন। এর মধ্যে মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার এই ১০ তরুণ।

দালালদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছে পুলিশ। আর নিহতদের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনতে দূতাবাসের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ প্রশাসন।

রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাসুদ হোসেন খান বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে শুনেছি লিবিয়ার ভূমধ্যসাগরে নিহত ২৩ বাংলাদেশির মধ্যে ১০ জনেরই বাড়ি মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার বাসিন্দা। আমরা নিহতদের তালিকা তৈরি করে কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাব। যাতে লাশগুলো দেশে স্বজনদের কাছে ফেরত আসে সেই উদ্যোগ গ্রহণ করব।’

ওসি মাসুদ হোসেন খান আরও বলেন, ‘এ ঘটনায় রাজৈর হরিদাসদি গ্রামের স্বপন মাতুব্বর, মজুমদারকান্দি গ্রামের মনির হাওলাদার ও ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার আলীপুরের রফিকুল ইসলাম দালাল জড়িত থাকার কথা মৌখিকভাবে শুনেছি। ঘটনার পর থেকে দেশে থাকা দালালরা আত্মগোপনে রয়েছেন। অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

 

একুশে সংবাদ/ই.ট/এনএস

Shwapno
Link copied!