AB Bank
  • ঢাকা
  • বুধবার, ১৬ জুলাই, ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

ধনবাড়ীতে খাল-বিল থেকে হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় মাছ


Ekushey Sangbad
জহিরুল ইসলাম মিলন, ধনবাড়ী, টাঙ্গাইল
০৪:৪১ পিএম, ৯ ডিসেম্বর, ২০২৪

ধনবাড়ীতে খাল-বিল থেকে হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় মাছ

বর্ষা এলেই খাল-বিল, পুকুর-জলাশয়ে পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছে ভর্তি হয়ে যেত। কিন্তু এসব খাল-বিলে এখন দেশীয় মাছ পাওয়া যায় না বললেই চলে। দিনে দিনে বিলুপ্তির পথে সুস্বাদু ছোট দেশীয় মাছ।

জেলেরা জানান, জলাশয়ে বছরের অধিকাংশ সময় পানি না থাকা, প্রজনন মৌসুমে পানিপ্রবাহ কমে যাওয়া এবং খাল-বিল ভরাট করে ফেলায় হারিয়ে যেতে বসেছে এসব মাছ।

এছাড়া জমিতে রাসায়নিক সার ও অপরিকল্পিত মৎস্য আহরণ, প্রজনন মৌসুমে প্রজননক্ষম মাছ ও পোনা ধরা, কারেন্ট জালের ব্যবহার, মাছের আবাসস্থল ধ্বংস করা এবং ক্ষতিকর মৎস্য আহরণ সরঞ্জামের ব্যবহার করায় ধীরে ধীরে বিলুপ্তি হতে চলছে।

কথায় আছে- ‘মাছে-ভাতে বাঙালি।’ কিন্তু দিনে দিনে কমছে নদী-খাল-জলাশয়! ভরাট করা হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতি ছোট মাছের অভায়ারণ্য। যে সব নদী বা খাল রয়েছে তাও আবার বিভিন্ন বিষাক্ত বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে! ফলে দেশি প্রজাতির মাছ এখন বিলুপ্ত পথে।

এক সময়  টাংগাইলে ধনবাড়ী  উপজেলার  বিভিন্ন খাল-বিল, পুকুর-জলাশয় ও নদী থেকে বিভিন্ন প্রজাতির প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। বিলুপ্তির ঝুঁকিতে থাকা এ সব মাছ এখন পাওয়াই কষ্টকর।

উপজেলার খাল-বিলে এবং জলাশয় পুকুরে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ শিকার করতো জেলেরা। আর এসব ছোট মাছের নানারকম নাম ছিল।

এসব মাছের মধ্যে রয়েছে- চাপিলা, বৈচা, চান্দা, চাঁদা গুড়া, গোল চাঁদা, গুলশা, পাবদা, দেশি পুঁটি, সরপুঁটি, তিত পুঁটি, বাইলা, মেনি অথবা (ভেদা), শিং, কৈ, টাকি, শোল, কাঁচকি, মলা, ঢেলা, তাঁরাবাইম, চৌককুনী, চিংড়ি গুড়া, সেললোশ, খৈলশা, ছোট টেংরা, বড় টেংরা, বজুরি, ছোটচিংড়ি, বাতাশি, বড় বাইন, তারা বাইন, শালবাইন, চিত্রা বাইন, মাগুর,  বুচ্ছাসহ নাম না জানা নানা প্রজাতির দেশি মাছ। এসব মাছ এখন বিলুপ্তির পথে।

ধনবাড়ী উপজেলার নদী- খাল-বিল ও ডোবা-জলাশয় থেকে দেশীয় প্রজাতির ছোট-বড় অনেক মাছ এখন বিলুপ্তির পথে।

কৃষিজমিতে অনিয়ন্ত্রিত কীটনাশক ও অবৈধ কারেন্ট জালের ব্যবহার, খাল-বিল-ডোবা ভরাট, উন্মুক্ত জলাশয়ে সেচে ও বাঁধ নির্মাণসহ মাছের বিচরণক্ষেত্রের প্রতিকুল পরিবর্তনের কারণে এরকম বিপর্যয় ঘটছে বলে মনে করছেন অনেকেই।

এক যুগ আগেও এ অঞ্চলে বিভিন্ন প্রজাতির ছোট-বড় দেশীয় মাছ পাওয়া গেলেও বর্তমানে এসব মাছের অনেক প্রজাতিই বিলুপ্তির পথে। ধনবাড়ী   উপজেলায়  নদীর শাখা, ঝিনাই নদী ও বংশাই নদী এছাড়াও রয়েছে  টেংরা দও, হামিলবিল,পেরিবিল,হাসিল বিল,চরভাত কুরা বিল,হুরি দও

সহ বেশ ছোট খাল-বিল মাছের প্রধান উৎস। এসব জলাশয়ের মাছ এলাকার চাহিদা মিটাতো। দেশীয় প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির কারণে এসব অঞ্চলের জেলেদের সংসার চালাতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে।

সরজমিনে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্ষা মৌসুমে  মাছগুলো ডিম ছাড়ে। ওই সময় এক শ্রেণির মৎস্য শিকারি এগুলো ধরে ফেলে। এতে দেশীয় প্রজাতির মাছের প্রজনন হয় না। তা ছাড়া কতিপয় মাছ চাষি বিভিন্ন দিঘি, পুকুর ইত্যাদি জলাশয় ইজারা নিয়ে বা ফসলি জমিতে মাছের ঘের তৈরি করে। এসব জলাশয় ও ঘের বিভিন্ন রাসায়নিকদ্রব্য ব্যবহার করে দেশীয় প্রজাতির মাছ ধ্বংস করে ফেলছে।

এ ছাড়া কৃষিজমি থেকে রাসায়নিক পদার্থ বর্ষার সময় ও বিভিন্ন কারখানার বর্জ্য খালের মাধ্যমে নদী ও জলাশয়ে পড়ে পানি দূষিত করছে। ফলে দেশি প্রজাতির মাছ দিন দিন কমে অনেকটা বিলুপ্তির পথে।

ধনবাড়ী  উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জানান,  আগে দেশীয় প্রজাতির যেসব মাছ দেখা যেত, তার অনেকটা এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

স্থানীয়  মৎস্যজীবী শহিদুল, আবদুল ও জব্বার মিয়া জানান, এখন আর আগের মতো খাল-বিল জলাশয়ে আশানুরূপ মাছ মিলে না। এইতো কয়েক বছর আগের কথা। ধনবাড়ী  হাটে, মাঠে, বাজারে, সকাল বেলা বিভিন্ন জাতের ছোট বড় মাছ নিয়ে আসতাম বিক্রি করার জন্য। তখন ক্রেতার খুব ভিড় ছিল। কিন্তু মাছের দাম ছিল খুবই সস্তা। তখন বাজার থেকে ক্রেতারা ৫০/১০০ টাকার ছোট মাছ কিনলে একটা পরিবার অনায়াসে খেতে পারতো এক- দু’দিন। আর তখন মাছ ছিল ভরপুর। আর এখন কাচকি মাছের কেজি ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা, টাকি মাছের কেজি ৫০০থেকে ৬০০ টাকা, বাইম মাছ ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা, পুঁটি মাছ ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা, টেংরা মাছ ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, শিং মাছ ৯০০ থেকে ১২০০ টাকা, মাগুর মাছ ৮০০ থেকে ৯৫০ টাকা দরে বিক্রি করতে হয়। আমরা লাভবান হতাম যদি খাল-বিল-নদীনালা-জলাশয়-পুকুরে কয়েক বছর আগের মতো মাছ পেতাম। এখন ছোট  মাছের দাম ও আগের থেকে অনেক বেশি। মাছ পাওয়া যায় কম। বিক্রি করতে হয় কেজি হিসাবে। আর সামান্য কিছু ছোট মাছ নিয়ে বাজারে আসলে আমাদেরকে পড়তে হয় ক্রেতা সংকটে। আর সে কারণে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়।

ধনবাড়ী  উপজেলা বীরতারা  ইউনিয়নের  মিজান জানান, সেই দিনের কথা বলে কি হবে! কত জাতের মাছ ছিল। (ছোট) মাছ আমরা খায় নাই, ধরি নাই? এহন জাইল্ল্যারা মাছ ধরতে গেলে মাছ পায় না। সব জাতের ছোট মাছ কীটনাশকে ধ্বংস করে ফেলছে। এখন ছোট মাছ পাওয়াটাই কষ্টকর।

সরকার যদি ডিম ছাড়নের সময় খাল-বিল নদীনালায় জেলেদের মাছ শিকার করতে না দিতো তাহলে দেশি প্রজাতির মাছগুলো বাঁচতো।

মাছ ব্যবসায়ী কালু মিয়া দেশি প্রজাতির মাছ রক্ষায় সরকারি তৎপরতা হতাশাজনক মন্তব্য করে বলেন, নদী-খালবিল জলাশয় এবং পুকুর ভরাট হওয়ায় মাছের বিচরণ ও প্রজনন স্থান সংকুচিত হচ্ছে। প্রজনন স্থানে মা মাছের অভয়ারণ্য করে নির্দিষ্ট সময় মাছ ধরা বন্ধ রাখতে হবে, বর্ষাকালে উজানে পোনা ছাড়তে হবে। তাহলে হয়তো আগের মতো ছোট জাতের মাছ বাজারে সয়লাব করবে।


একশে সংবাদ/আ.য

সর্বোচ্চ পঠিত - সারাবাংলা

Link copied!