প্লাস্টিকের পণ্যের কদর বেড়ে যাওয়ায় হারিয়ে যেতে বসছে বাঁশ দিয়ে তৈরি শিল্পসামগ্রী। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্লাস্টিক পণ্য যত সহজলভ্য হয়েছে, ততই বাঁশের তৈরি শিল্পের কদর কমেছে। সাধারণত গ্রামের লোকেরাই বাঁশ শিল্পের সাথে জড়িত। তাই এ শিল্পকে গ্রামীণ লোকশিল্প বলা হয়। কালের বিবর্তনে এবং প্রযুক্তির বদৌলতে পুরনো এ শিল্পের ঐতিহ্য আজ আমাদের মাঝ থেকে বিলুপ্তির পথে। তার স্থানে দখল করে নিচ্ছে প্লাস্টিকের তৈরি আসবাবপত্র। এর মধ্যে প্লাস্টিক পণ্যের কদর বেশী। বাজারে প্লাস্টিক সামগ্রীর সাথে পাল্লা দিতে না পেরে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী বাঁশ শিল্প এখন বিলুপ্তির পথে।
ফরিদপুর জেলা বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, কয়েক দশক ধরে জেলাতে প্রায় ৩ হাজার পরিবার কোন না কোনভাবে জড়িত ছিল বাঁশ শিল্পের সাথে। এক সময় প্রচুর বাঁশ এ অঞ্চলে উৎপাদন হতো তা দিয়ে গৃহস্থ্যের গৃহকাজের চালুন, কুলা, মোড়া, বাজার করার ঝুড়ি, মাটি কাটার ঝুড়ি, বিড়া, চাল মাপার সের, মাছ ধরার পলো, চাষাবাদের জন্য চঙা, ঢাকনা তৈরি সহ বিভিন্ন কাজে লাগতো ।
কালের বিবর্তনে বাজারে প্লাস্টিকের হরেক রকম পণ্য আসায় হারিয়ে যাচ্ছে এ শিল্পটি। একদিকে যেমন বাঁশ উৎপাদন কমছে, অপরদিকে প্লাস্টিকের প্রতিযোগিতায় বাঁশের পণ্যগুলো টিকতেও পারছে না। ফলে এ শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলোতে নেমে এসেছে দুর্দিন। বেঁচে থাকার তাগিদে অনেকেই পেশা বদল করছেন। বর্তমানে বিভিন্ন উপজেলা মাত্র১০০- ৩০০ টি পরিবার এ শিল্পের সাথে কোনো রকমে টিকে রয়েছে। পুরুষের পাশাপাশি নারীও এ শিল্পের সাথে জড়িয়ে আছে। কাজ কমে যাওয়ায় অনেকেই বেকার হয়ে পড়েছেন।
বোয়ালমারী দক্ষিণ কামার গ্রামে সঞ্জীব বিশ্বাস বলেন, গ্রাম থেকে ঘুরে বাঁশ কিনতে হয়। তারপর কিছুদিন পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। এরপর রোদের শুকিয়ে বাঁশ বেত তোলার কাজ শুরু হয়। আবার রোদে শুকিয়ে বিভিন্ন রকমের রং লাগিয়ে রোদে শুকাতে হয়। এতে প্রায় এক সপ্তাহ সময় চলে যায়। তারপর আবার বিক্রি করতে সপ্তাহ চলে যায়। সপ্তাহে ২-৫ হাজার টাকা বিক্রি হলেও ধার দেনা আর লোন পরিশোধ করে সংসার চালানো দায়। সরকারের পক্ষ থেকে আমরা কোন সহযোগিতাও পাই না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক নারী বলেন,বাশ শিল্পের চাহিদা কমে যাওয়া, পুঁজির অভাব ও বাজারে অতিরিক্ত খাঁজানা দিয়ে পোষায়ণা। আমারা অতি কষ্টে চলছি। দ্রব্যমূল্যের উধর্বগতিতে খুবই কষ্টে সংসার চালাতে হচ্ছে।
ফরিদপুর বেলি ব্রিজ এর সামনে কথা হয় সকুমার সেন নামের এক ক্ষুদ্র কুটির শিল্পী এর সাথে তিনি বলেন, পূর্বপুরুষদের কাছে শেখা এই ব্যবসা আজও ধরে রেখেছি। আমাদের এলাকায় এক সময় বাঁশ - বেতের তৈরি জিনিসের ব্যাপক চাহিদা ছিল, কিন্তু বর্তমানে নানান সমস্যা আর পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে আজ সংকটের মুখে পড়েছে শিল্পটি। জেলা মৃৎশিল্পী প্রয়াত সন্তোষ পালের ছেলে
বোয়ালমারী উপজেলার ময়না সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কালিপদ চক্রবর্ত্তী জানান, এক সময় ফরিদপুর জেলায় ৯৯ শতাংশ মানুষ ক্ষুদ্র শিল্পের সাথে জড়িত ছিল। এছাড়াও বাঁশের ঘরের বেড়া, চালা, অবকাঠামো নির্মাণ রান্নাঘর ও কৃষি ক্ষেতসহ পরিবারের অনেক কাজেই বাঁশের ব্যবহার ছিল গুরুত্বপূর্ণ ।
একুশে সংবাদ/স.চ.প্র/জাহা