দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত বাঁশের প্রয়োজনীয়তা থাকলেও আধুনিকতার ছোঁয়ায় বাঁশ চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে কৃষকরা। সম্মিলিত প্রচেষ্টার অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে বাঁশের ব্যবহার। একসময় চারপাশে পর্যাপ্ত বাঁশের ঝাড় দেখা গেলেও বর্তমানে তা বিলুপ্তির পথে। বাড়িঘর'সহ বিভিন্ন কাজে এখন বাঁশের বদলে লোহার তৈরি বিভিন্ন সরঞ্জাম ব্যবহার করার ফলে কমেছে বাঁশের চাহিদা।
একটা সময় ছিল যখন কৃষক তার ফসলের ক্ষেতে বাঁশ দিয়ে বেড়া দিয়ে ফসল রক্ষার জন্য প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতো, সেখানে এখন ধাতব তার টেনে বেড়া দেয়া হচ্ছে। আদিকাল থেকে বাঁশের ব্যপক ব্যবহারের ইতিহাস জানা থাকলেও বর্তমানে তা একেবারে দুর্লভ।
রড সিমেন্টের ব্যপক ব্যবহারে বাঁশের প্রতি অনেকটা অনীহা প্রকাশ পেয়েছে। তাছাড়া বাঁশের তৈরি শিল্পের তেমন একটা চাহিদা না থাকাটাও একটা বড় কারন। ভিটেমাটি উজাড় করে নতুন নতুন বসতিস্থাপনও বাঁশঝাড় ধ্বংসের অনেক বড় একটা কারন। ব্যবসায়ীক চিন্তায় অনীহা ও বনবিভাগের নীরবতার কারনেও নষ্ট হচ্ছে শীতল ছাঁয়ার পরিবেশ। পাশাপাশি মেলামাইন ও প্লাষ্টিকের ব্যবহার অতিমাত্রায় বেড়ে যাওয়ায় বাঁশ শিল্প হারাচ্ছে তার নিজস্ব ঐতিহ্য। বাঁশের ওপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীও আজ হুমকির মুখে। আগের মত পর্যাপ্ত বাঁশ না থাকায় দিনদিন তারা বেকার হয়ে পড়ছে।
চরফ্যাসন উপজেলার ওমরপুর ইউনিয়নের আব্দুল হালিম মিয়াঁ বলেন - বাপদাদার আমল থেকে আমাদের একটা বড় বাঁশঝাড় থাকলেও পরিচর্যা ও দেখভালের অভাবে বর্তমানে তা বিলুপ্তির পথে।
একই উপজেলার আব্দুল্লাপুর ইউনিয়নের নজীর আহম্মেদ এর ছেলে মহিউদ্দিন বলেন - আমার জন্মের পর থেকে আমাদের একটা বাঁশঝাড় থাকলেও পরিকল্পনা ও পরিচর্যার অভাবে এখন প্রায় শেষের পথে।
বাঁশের ব্যপক ব্যবহারের কথা উল্লেখ করে চরফ্যাশসন বেগম রহিমা ইসলাম কলেজে'র ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শরিফুল আলম (সোয়েব) বলেন - মানুষের মৃত্যুর পরে কবরে যেমন বাঁশের প্রয়োজন, ঠিক বেঁচে থাকা অবস্থায় বাঁশের প্রয়োজন আছে । তিনি আরও বলেন বাঁশের তৈরি হস্তশিল্প দেখতে যেমন সুন্দর, ঠিক তেমনি তা একদুম জীবাণুমুক্ত।
বিষয়টি নিয়ে চরফ্যাসন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আ হাসনাইন বলেন - সরকারের তরফ থেকে বাঁশ রক্ষায় কোন নির্দেশনা নেই, তবে পরিবেশ রক্ষায় বাঁশের ভূমিকার কথা তিনি স্বীকার করেন।
এ বিষয়ে চরফ্যাসন বন বিভাগের কর্মকর্তা জানান- বাঁশের চাহিদা কমে যাওয়ার কারনেই বাঁশঝাড় আজ বিলুপ্তির পথে। তবে শীতল ছাঁয়া ও পরিবেশের ভারসম্য রক্ষায় বাঁশের ভূমিকা অপরিসীম।
একুশে সংবাদ/মামুন/প