জুলাই বিরোধী ভূমিকায় থাকা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) আইন বিভাগের দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রশাসনের দেওয়া সাময়িক বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে মানববন্ধন করেছেন ওই বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
ওই দুই শিক্ষক হলেন— অধ্যাপক ড. শাহজাহান মন্ডল ও অধ্যাপক ড. রেবা মন্ডল। তারা জুলাই অভ্যুত্থানবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭১ তম সিন্ডিকেটে এ সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। পরে শনিবার বেলা ১টায় প্রশাসনের এ সিদ্ধান্তকে ‘অযৌক্তিক’ দাবি করে তা প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন করেন আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। পরে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন তারা। এদিকে ইংরেজি, ল’ অ্যান্ড ল্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এবং আল-ফিকহ্ অ্যান্ড ল’সহ কয়েকটি বিভাগের শিক্ষার্থীরাও তাদের শিক্ষকদের বাঁচাতে আন্দোলনে নামার পরিকল্পনা করছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া কয়েকটি বিভাগে শিক্ষকদের মদদপুষ্ট হাতেগোনা কয়েকজন শিক্ষার্থী ফ্যাসিস্টের তালিকায় থাকা শিক্ষককে বাঁচাতে অন্যান্য সকল শিক্ষার্থীর স্বাক্ষর নিচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটির কার্যক্রমকে বিভিন্নভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেন আইনের শিক্ষার্থীরা। তারা দাবি করেন— ‘তদন্ত কমিটি পক্ষপাতিত্ত্ব করে রাঘববোয়ালদের বাদ দিয়ে চুনোপুটিদের ধরায় ব্যস্ত। সিদ্ধান্তটি পক্ষপাতমূলক এবং অযৌক্তিক।’ এসময় তাদের হাতে ‘সাময়িক বরখাস্ত বাতিল চাই’, ‘শিক্ষক ছাড়া ক্লাসে বসব না’, ‘ক্লাসের শিক্ষক ক্লাসে চাই’, ‘যে শেখায় ন্যায়, তার সাথেই অন্যায়’, ‘যে শেখায় সত্য, তাকেই কেন বরখাস্ত?’সহ বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘শাহজাহান মন্ডল ও রেবা মন্ডল সবসময়ই শিক্ষার্থীবান্ধব শিক্ষক হিসেবে পরিচিত। বিভিন্ন সময় যেসব শিক্ষার্থী ফর্ম ফিলাপ করতে পারেনি বা কোন সংকটে পড়েছে, তখনই শিক্ষার্থীর অজান্তেই তার অ্যাকাউন্টে এ শিক্ষকরা টাকা পাঠিয়েছেন।’
মির্জা আল শাহরিয়ার নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনের সময় আমি ১২ দিন জেলে ছিলাম। তখন আমাদের বিভাগের চেয়ারম্যান ছিলেন রেবা মন্ডল এবং সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন শাহজাহান মন্ডল। আন্দোলনের সময় আমাদের বিভাগ থেকে কাউকে যেতে নিষেধ করা বা বাঁধা প্রদান করা হয়নি। এ দুজন শিক্ষক সবসময় রাজনীতির ঊর্ধ্বে গিয়ে শিক্ষার্থীবান্ধব কাজ করেছেন। এ বহিষ্কারাদেশ বাতিল করে আমরা আমাদের শিক্ষকদের শ্রেণিকক্ষে ফেরত চাই।’
এবিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে বিরোধী বিতর্কিত ভুমিকার জন্য শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। পরবর্তীতে আমরা আরও একটি কমিটি গঠন করবো। সেই কমিটি বিবেচনা করবে কাকে কতটুকু শাস্তি দেওয়া যায়। তবে ফ্যাসিস্টের প্রশ্নে কোন ছাড় হবে না।’
প্রসঙ্গত, জুলাই আন্দোলনের বিরোধিতা করায় ১৯ শিক্ষক ও ১১ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে ৩৩ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার ও সনদ বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
একুশে সংবাদ/এ.জে



একুশে সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

