ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) পুকুর থেকে সাজিদ আব্দুল্লাহ নামের এক শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধারের ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও হল প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটি।
রোববার (২০ জুলাই ) ঘটনা সংশ্লিষ্ট তথ্য-উপাত্ত চেয়ে উন্মুক্ত গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছে প্রশাসনের তদন্ত কমিটি। একইসঙ্গে উভয় কমিটি ঘটনা সংশ্লিষ্ট ২৫ জনের সাক্ষাতকার নিয়েছেন। এছাড়া তদন্ত কমিটি ও কুষ্টিয়া জেলা পুুলিশের কর্মকর্তারা শনিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। সাজিদের অবস্থান করা কক্ষটি পর্যবেক্ষণ এবং তার ব্যবহৃত মোবাইল পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছেন হলের প্রভোস্ট।
তদন্ত কমিটি সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ, সাক্ষাতকার গ্রহণ, ঘটনাস্থল ও কক্ষ তল্লাশি, সুরতহাল প্রতিবেদন পর্যালোচনা নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে পুলিশের কাছে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের কললিস্টের রেকর্ড চাওয়া হয়েছে। কমিটির হাতে সুরতহাল প্রতিবেদন এসেছে। সোমবার ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং এক সপ্তাহের মধ্যে ফরেনসিক প্রতিবেদন আসতে পারে বলে জানায় প্রশাসনের তদন্ত কমিটি। দ্রুততম সময়ে ফরেনসিক রিপোর্টের জন্য বিশেষ আবেদন এবং আইসিটি সেলের কাছে ২৪ ঘন্টার মধ্যে সিসিটিভি ফুটেজ চেয়েছেন তারা।
এদিকে শনিবার সাজিদের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে সুষ্ঠু তদন্ত ও নিরাপদ ক্যাম্পাস সহ ১৫ দফা দাবিতে টানা সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। পরে কর্তৃপক্ষ লিখিতভাবে আশ্বাস দিলে আন্দোলন স্থগিত করেন তারা। এসময় ৬ দিনের মধ্যে দাবি বাস্তবায়ন নাহলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারিও দেন তারা। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ ২৪ ঘন্টার ভেতর প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট ও আগামী ৬ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ এবং হল ও প্রশাসনের তদন্ত কমিটিতে ২ জন করে শিক্ষার্থী অন্তর্ভুক্ত করা। এদিকে সাজিদ আব্দুল্লাহর বিদেহী আত্মার প্রতি সমবেদনা জানিয়ে রোববার ক্যাম্পাসে একদিনের শোক পালন করেছে প্রশাসন। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় মসজিদে দোয়া মাহফিল, কালো ব্যাচ ধারণ ও বিশ্ববিদ্যালয় পতাকা অর্ধনমিত করা হয়েছে। একইসঙ্গে সকাল ১০টায় সাজিদ আব্দুল্লাহর বিদেহী আত্মার প্রতি সমবেদনা ও শিক্ষার্থীদের দেওয়া ১৫ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে শোকর্যালি করেছেন আল-কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। পরে দুপুরে সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্তব্যক্তিরা।
হল তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আবদুল গফুর গাজী বলেন, আমরা ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট ৮ জনের সাক্ষাতকার নিয়েছি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কার্যক্রম শেষ করতে পারব বলে আশা করছি।
প্রশাসনের তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেন বলেন, রোববার আমরা সংশ্লিষ্ট ১৭ জনের সাক্ষাতকার নিয়েছি। শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী ২৪ ঘন্টার মধ্যে প্রাথমিক প্রতিবেদন দেওয়া সম্ভব নয়। এখানে অনেকগুলো ফ্যাক্টর রয়েছে যেগুলো তদন্ত করা সময়সাপেক্ষ। এছাড়া তদন্ত কমিটিতে দুইজন শিক্ষার্থীকে রাখার বিষয়ে প্রশাসন থেকে কোনো নোটিশ পাইনি। তবে এটা আইনবহির্ভূত।
উপাচার্যের রুটিন দায়িত্বে থাকা উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. এয়াকুব আলী বলেন, তদন্তের কাজে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন গাফিলতি নেই। শিক্ষার্থীদের দাবি- ক্যাম্পাসে লাইটিং ও সিসি ক্যামেরার কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়া অন্যান্য দাবি বাস্তবায়নেরও উদ্যোগ নিচ্ছি।
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে শাহ আজিজুর রহমান হল সংলগ্ন পুকুরে আল-কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের সাজিদ আব্দুল্লাহর লাশ ভেসে থাকতে দেখেন শিক্ষার্থীরা। তিনি শহীদ জিয়াউর রহমান হলের ১০৯ নং কক্ষে থাকতেন।
একুশে সংবাদ/এ.জে