মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (মাভাবিপ্রবিসাস) ১০ জুলাইকে ‘কালো দিবস’ হিসেবে পালন করেছে। গত বছর এই দিনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একতরফা সিদ্ধান্তে সমিতির কার্যক্রম স্থগিত করার ঘটনাকে স্মরণ করে দিনব্যাপী কর্মসূচি পালন করা হয়।
২০২৪ সালের ১০ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় মেধানির্ভর ভর্তি ও নাগরিক সুবিধার দাবিতে ছাত্রদের অংশগ্রহণ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিক জাহিদ হোসেনের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ আনা হয়। অভিযোগে বলা হয়, তিনি টাঙ্গাইল সরকারি এমএম আলী কলেজের শিক্ষার্থী মাহিনকে মিছিলে নিয়ে যান। এরপর তার কাছ থেকে জোরপূর্বক স্বাক্ষর নিয়ে একটি মুচলেকা আদায় করা হয় এবং তার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাংবাদিক সমিতির কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়।
জানা গেছে, তৎকালীন ছাত্রকল্যাণ পরিচালক, প্রক্টর, জনসংযোগ ও প্রকাশনা পরিচালক এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের সভাপতি মানিক শীল ও তার ঘনিষ্ঠরা এই পদক্ষেপের পেছনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।
সাংবাদিক জাহিদ হোসেন বলেন, "ওই দিনটি ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ দিনগুলোর একটি। একটি সত্য সংবাদ প্রচার করায় আমাকে রাষ্ট্রদ্রোহীর মতো আচরণের শিকার হতে হয়। মুচলেকা আদায় করা হয় ভয়ভীতির মধ্যে।"
তৎকালীন পরিস্থিতিতে সংবাদ সংগ্রহ, মানসিক চাপে থাকা এবং নজরদারির মধ্যেও মাভাবিপ্রবিসাসের সাংবাদিকরা তাদের দায়িত্ব পালন বন্ধ করেননি। এতে তৈরি হয় মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ের সাহসী সাংবাদিকতার এক দৃষ্টান্ত।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক তুষার আহমেদ বলেন, "স্বৈরাচারী সময়ে মিডিয়াগুলো ছিল প্রায় নিস্তব্ধ। কিন্তু তখনও যারা কথা বলেছিলেন, তাদের ওপর নানা মাধ্যমে চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে। আমাদের সাহসী সাংবাদিকরা তখন মুখ বন্ধ করেননি বরং আন্দোলনের সামনের কাতারে ছিলেন। তাদের সাহসিকতা প্রশংসনীয়।"
বর্তমান সভাপতি বিজয় সরকার বলেন, "জুলাই আন্দোলনের সময় আমরা শিক্ষার্থীদের কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছে দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। প্রশাসন সমিতি বন্ধ ঘোষণা করলেও আমরা পিছু হটিনি।"
মাভাবিপ্রবিসাসের মতে, এই ‘কালো দিবস’ শুধু অতীতের এক নিষ্ঠুর ঘটনার প্রতিবাদ নয়—এটি স্বাধীন সাংবাদিকতা রক্ষার প্রতিশ্রুতি। তারা আশাবাদী, ভবিষ্যতে কোনো প্রশাসন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ উপেক্ষা করে এমন সিদ্ধান্ত আর নেবে না।
এদিন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে স্মরণসভা, আলোচনা ও কালো ব্যাজ ধারণের মাধ্যমে দিবসটি পালন করা হয়।
একুশে সংবাদ/এ.জে