কুষ্টিয়া শহরে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) ক্লাবের জন্য শিক্ষক-কর্মকর্তাদের ব্যবহৃত ভবনের ভাড়া দেড় বছরের বেশি সময় ধরে বকেয়া পড়ে আছে। মালিকপক্ষের দাবি অনুযায়ী, বকেয়ার পরিমাণ ৭ লাখ ২০ হাজার টাকা। তবে আরও বিস্ময়কর বিষয় হলো—ভাড়া সংক্রান্ত মূল চুক্তিপত্রটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিস থেকে "হারিয়ে" গেছে।
বিগত ২০ মাসে মালিকপক্ষ তিন দফা চিঠি দিলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। এতে একদিকে যেমন মালিক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন, অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দপ্তরগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা ও দায়িত্বহীনতা প্রকট হয়ে উঠেছে।
জানা যায়, কুষ্টিয়ার পেয়ারা তলার একটি দ্বিতল ভবন শিক্ষক-কর্মকর্তাদের ক্লাব হিসেবে ব্যবহার করে আসছে বিশ্ববিদ্যালয়। সর্বশেষ ২০২২ সালের ১ ডিসেম্বর ভবনটির ভাড়া নবায়ন করে মাসিক ৩৬ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী, মাসিক ভিত্তিতে ভাড়া পরিশোধ করার কথা থাকলেও ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ৯ মাসের ভাড়া একসঙ্গে পরিশোধ করার পর আর কোনো অর্থ পরিশোধ করা হয়নি।
এরপর মালিকপক্ষ ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে প্রথম চিঠি দেয়। এরপর ২০২৪ সালের মার্চ এবং মে মাসে আরও দুইবার চিঠি পাঠানো হয়। তবে প্রতিবারই প্রশাসনের পক্ষ থেকে অগ্রগতি দেখা যায়নি। মূল চুক্তিপত্র না থাকায় বিল অনুমোদনের কাজও থমকে যায়।
এ বিষয়ে এস্টেট অফিসের বর্তমান প্রধান আলাউদ্দিন বলেন, “আমার দায়িত্ব নেয়ার আগেই মূল ফাইলটি হারিয়ে গেছে। আমি ফটোকপি নিয়ে নতুন ফাইল তৈরি করে হিসাব শাখায় পাঠিয়েছি। নতুন মাসগুলোর হিসাব যোগ করে আবার পাঠাবো।”
তবে সাবেক এস্টেট প্রধান শামসুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমাদের সময় ফাইল ঠিকঠাক ছিল। এখনকার কর্মকর্তারা বুঝে নেয়নি, তাই দায়ভারও আমাদের নয়।”
অর্থ ও হিসাব শাখার পরিচালক আনার পাশা বলেন, “মূল চুক্তিপত্র ছাড়া পেমেন্ট যাচাই করা সম্ভব নয়। ইউজিসি ক্লাব ভাড়া বাবদ বরাদ্দ বন্ধ করে দেওয়ায় বিকল্প খাত থেকে অর্থ ম্যানেজ করতে হচ্ছে। নিয়মিত বিল না দিয়ে একসঙ্গে মোটা অঙ্কের বিল জমা দিলে জটিলতা বেড়ে যায়।”
ক্লাব ভবনের মালিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত বলেন, “একটি বিশ্ববিদ্যালয় কীভাবে চুক্তিপত্র হারায়? এ ধরনের গাফিলতি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মর্যাদার সঙ্গে যায় না।”
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম জানান, “গাফিলতির বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে। আমি নির্দেশ দিয়েছি যাতে দ্রুত বকেয়া ভাড়া পরিশোধ করা হয়।”
একুশে সংবাদ / ইবি.প্র/এ.জে