সৈকতে এবার স্বর্ণালঙ্কার ভেসে আসার গুজব
একুশে সংবাদ: করোনা পর্যটন শিল্পে চরম দুর্দিন ডেকে আনলেও সৈকতের বালিয়াড়ি জুড়ে প্রকৃতিকে আপন মহিমা প্রকাশের সুযোগ এনে দিয়েছে। লকডাউনের কয়েকদিন পর থেকে বালিয়াড়িতে পাখা মেলেছে সাগরলতা। আলপনা একে নিজের অস্তিত্ব জানান দিয়েছে লাল কাঁকড়ার দল। ক্ষণে ক্ষণে দেখা মিলেছে ডলফিনের ঝাঁক। ঢেউয়ের সান্নিধ্যে এসেছে বুনো হরিণও। প্রশাসনের কঠোরতায় এসব দেখতে সৈকত তীরে লোকজন আসতে না পারলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্বাদ নিয়েছে এসব চিত্রের।
এসব কিছুকে ছাপিয়ে এখন বেরিয়েছে ভিন্ন খবর। রূপকথার গল্পের মতো প্রচার হচ্ছে সমুদ্র সৈকত তীরে নাকি স্বর্ণালঙ্কার ভেসে আসছে। এমন খবরে সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে ভিড় করছেন লোভাতুর কিছু মানুষ। তাদের মতে সমুদ্রের ঢেউয়ের সঙ্গে ভেসে আসা অলঙ্কার বালিতে আটকে থাকছে। ইতোমধ্যে কয়েকজন স্বর্ণ ও হীরার আংটিও নাকি পেয়েছেন!
করোনার প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ার পর ১৭ মার্চ থেকে সারাদেশে ছুটি ঘোষণা হলে বন্ধ হয়ে যায় পর্যটন সংশ্লিষ্ট সকল ব্যবসাও। খাঁ খাঁ প্রান্তরে রূপ নেয় কক্সবাজারের পর্যটন কেন্দ্রগুলো। বিগত প্রায় চার মাস ধরে সৈকত পুরোটাই জনশূন্য। হঠাৎ সেই শূন্য সৈকতে ঢেউয়ের জলে স্বর্ণালঙ্কার ভেসে আসার খবরে সৈকতে ভিড় করছেন আশপাশের নানা বয়সের মানুষ। এদেরই একজন সৈকতে ডাব বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করা কক্সবাজার শহরের বাহারছড়া এলাকার জসিম উদ্দিন।
তিনি জানান, ঢেউয়ের সঙ্গে স্বর্ণের আংটি, চেইন, কানের দুলসহ নানা ধরনের গহনা ভেসে আসছে। কোথা থেকে কিভাবে আসছে তা জানি না। আগে কয়েকজন পেয়েছে আমিও পেয়েছি একটা। যা বিক্রি করে দিয়েছি।
তবে কোথায় বিক্রি করেছেন বা কী ধরনের স্বর্ণ ছিল সেটি স্পষ্ট করে বলতে পারেননি তিনি।
কলাতলী বড়ছড়া এলাকার আবুল কাশেম বলেন, কিছুদিন আগে সৈকতের বালিয়াড়িতে একটি হীরার আংটি পেয়েছেন এক ব্যক্তি। শুনেছি সেটি বিক্রি করে ২৫ হাজার টাকা পান সেই ব্যক্তি। এটি জেনে আমরাও স্বর্ণ খুঁজতে সৈকতে গিয়েছিলাম। কিন্তু কিছুই পায়নি।
তবে হীরার আংটি পাওয়া সেই ব্যক্তির পরিচয় তিনি নিশ্চিত বলতে পারেননি।
সৈকতের প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য নিয়ে গবেষণাকারী আহমদ গিয়াস বলেন, ঢেউয়ের তোড়ে স্বর্ণালঙ্কার ভেসে আসা রূপকথার গল্প। এটি এমন হতে পারে যে লকডাউনের আগে সৈকতে গোসল করতে নেমে কোনো পর্যটক হয়তো স্বর্ণালঙ্কার খুইয়েছেন। এখন বর্ষা মৌসুমে ঢেউয়ের আসা-যাওয়ায় সেই স্বর্ণালঙ্কার হয়ত জনশূন্যতার সুযোগে বালিয়াড়িতে দৃশ্যমান হয়ে কেউ কেউ পেয়েছেন। সেটা মুখে মুখে গল্প আকারে ‘তিলকে তালে রূপান্তর’ করে এলাকায় ছড়ানো হয়েছে। আর মানুষ সেই গুজবে সৈকতে এসে বালি হাতড়াচ্ছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন পরিবেশবাদী বলেন, সাগরের তলদেশে নানা ধরনের খনিজ পদার্থ থাকতে পারে। সেখানে স্বর্ণধাতু থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। ঢেউয়ের তোড়ে মূল্যবান এসব ধাতুর অংশ ভেসে আসতেই পারে। কিন্তু তা পরিপূর্ণ অলংকার হিসেবে আসা অসম্ভব। বালিয়াড়িতে কানের দুল, নাকের ফুল, আংটিসহ নানা জাতের স্বর্ণালংকার যদি পাওয়া যায় তা সাগর থেকে ভেসে আসা কাল্পনিক। কোনো ধাতুর খণ্ডাংশ ভেসে আসতে পারে, কিন্তু ধাতু থেকে ক্ষয়ে তা ভেসে আসতে গিয়ে পরিপূর্ণ স্বর্ণালঙ্কার হওয়া অবাস্তব। কেউ যদি কিছু পেয়ে থাকে তা তীরেই হারিয়ে যাওয়া বিচ্ছিন্ন কিছু।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশ সুপার (এসপি-ট্যুরিস্ট) মো. জিল্লুর রহমান বলেন, সাগরের জলে স্বর্ণালঙ্কার ভেসে আসার বিষয়টি অবিশ্বাস্য। তবে জনবহুল সৈকত হিসেবে গোসলের সময় ঢেউয়ের তোড়ে অনেক পর্যটকের ব্যবহার্য মূল্যবান পণ্য হারিয়ে যায়। তা ঢেউয়ের সঙ্গে তীরে আসতে পারে। এসব যারা অবগত তারা প্রতিদিনই সৈকতের বালিয়াড়ি ও জলে পরখ করে কিছু খোঁজে। ভাগ্য ভালো হলে কেউ কেউ হয়তো কিছু পায়। তবে সাগর থেকে স্বর্ণালঙ্কার ভেসে আসাটা রূপকথার গল্প বলে মনে হয়।
একুশে সংবাদ/তাশা/গো/০৭/০৭/২০২০
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :