শীতের আগমনী আবহে বিজয়ের মাসে আয়োজন করে বি এইচ বিজনেস ক্লাব—জমজমাট হেমন্ত উদ্যোক্তা উৎসব।২০২২ সাল থেকে ক্লাবটি ঈদ বা বিশেষ দিবস কেন্দ্র করে নিয়মিত উদ্যোক্তা মেলার আয়োজন করে আসছে। এবারের হেমন্ত মেলাও সেই ধারাবাহিকতারই অংশ।
এখানে শুধু পণ্য প্রদর্শনী নয়, বরং শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে স্বাবলম্বী হতে আগ্রহী নারী ও তরুণদের মধ্যে উদ্যোক্তা ভাবনা তৈরি করা এবং তাদের সেই স্বপ্নপথে দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যেতে সহায়তাই মূল উদ্দেশ্য।
গত ৭ ডিসেম্বর রাজধানীর বনশ্রীর ব্লু অলিভ রেস্টুরেন্টে আয়োজিত এই উৎসবে অংশ নেন ৩০ জনেরও বেশি নারী উদ্যোক্তা। মেলায় ছিল ফ্যাশন জুয়েলারি, কসমেটিকস, হোম ডেকর, কিডস কালেকশনসহ নানা উদ্যোগ। উদ্বোধনের দিন ছিল লাইভ কনসার্টের আয়োজনও।
এবারের মেলায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিশ্রমী ও প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিত্বরা।প্রধান অতিথি ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, জনপ্রিয় রন্ধনশিল্পী ও বাংলাদেশ বেতারের উপস্থাপিকা হাসিনা আনসার।বিশেষ অতিথি ছিলেন ফারজানা বুটিকস–এর প্রতিষ্ঠাতা ফারজানা আফরিন।
তাদের উপস্থিতি শুধু অনুষ্ঠানকে আলোকিত করেনি, বরং উদ্যোক্তাদের আত্মবিশ্বাসকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। অতিথিরা প্রতিটি স্টলে ঘুরে উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলেন ও তাদের কাজের প্রশংসা করেন।
প্রধান অতিথি হাসিনা আনসার বলেন—“এ ধরনের মেলা শুধুই পণ্যের প্রদর্শনী নয়; বরং মানুষের স্বপ্নকে প্রকাশের সাহস জোগায়। ঢাকার মতো শহরে এত অল্প খরচে উদ্যোক্তাদের অফলাইন নেটওয়ার্ক বিস্তারের সুযোগ সত্যিই বিরল।”
তিনি আরও বলেন,“এই ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা জান্নাতুল ফেরদৌস জান্নাত অত্যন্ত কম খরচে স্টল করার সুযোগ দেন এবং প্রতিটি ব্যবসার প্রচারে সহযোগিতা করেন। একই প্ল্যাটফর্মে সব উদ্যোক্তাকে এক ছাদের নিচে এনে তাদের পণ্যের প্রচারে অসাধারণ ভূমিকা রাখছেন তিনি।”
বিশেষ অতিথি ফারজানা আফরিন বলেন—“বড় সুপারশপগুলোর তুলনায় স্থানীয় ব্র্যান্ডগুলো সাধারণ মানুষের সাধ্যের মধ্যে বিকল্প হতে পারে। পোশাক, গৃহসামগ্রী বা সাজসজ্জার পণ্য—সবই মানুষের সহজপ্রাপ্য হওয়া উচিত।”
স্থানীয় ব্র্যান্ডের প্রতি ভোক্তার আগ্রহ যেমন বাড়ছে, তেমনি উদ্যোক্তাদের সরাসরি ক্রেতাদের কাছে পণ্য তুলে ধরার এমন প্ল্যাটফর্মও গুরুত্ব পাচ্ছে।
মেলায় দর্শনার্থীদের জন্য ছিল—বিশেষ শপিং অফার, বাচ্চাদের কর্নার, বিনামূল্যে মেহেদি দেওয়ার সুযোগ যা পুরো আয়োজনকে করেছে আরও প্রাণবন্ত।
বি এইচ বিজনেস ক্লাব তরুণদের এমন একটি আশ্রয় যেখানে তারা শুধু পণ্য নয়, স্বপ্নও বিকাশ করতে শেখে। বনশ্রী এলাকায় মেলাকে কেন্দ্র করে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ।
এবারের মেলায় অংশ নেন অসংখ্য উদ্যোক্তা—যাদের অনেকেই প্রথমবারের মতো নিজেদের ব্র্যান্ড ও পণ্য সবার সামনে তুলে ধরেন। বিশেষ করে ঢাকার বাইরে থেকে আসা উদ্যোক্তাদের কালেকশন দর্শনার্থীদের দারুণভাবে আকৃষ্ট করে। তাদের মধ্যে ছিল—শীতকালীন পণ্য, পারফিউম, কোরিয়ান কসমেটিকস, হাতের কাজের বিভিন্ন পণ্য।
মেলার বাইরেও ক্লাবটি নিয়মিত আয়োজন করে নানা ওয়ার্কশপ—যেখানে শেখানো হয় অনলাইনে ব্যবসা শুরু করা, প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফি ইত্যাদি বাস্তবমুখী দক্ষতা।
এই ক্লাবের প্রতিটি উদ্যোক্তার সাফল্যের পেছনে রয়েছেন একজন নীরব কিন্তু অদম্য শক্তি প্রতিষ্ঠাতা জান্নাতুল ফেরদৌস জান্নাত।তিনি আড়ালে থাকতেই ভালোবাসেন, কিন্তু সামনে এগিয়ে দেন অন্যদের।
নামমাত্র ফিতে স্টলের সুযোগ দেন, মিডিয়া কভারেজের ব্যবস্থা করেন, ব্র্যান্ড প্রোমোটার দেন—
সবটাই উদ্যোক্তাদের সফলতার জন্য।
তিনি বলেন—“আমি চাই মানুষ আমাকে আমার কাজের মাধ্যমে চিনুক। আমি চাই, অন্যদের স্বপ্ন পূরণে পাশে থাকতে।”
সংগ্রামের মধ্য দিয়ে নিজেকে গড়ে তোলা জান্নাত আজ বি এইচ বিজনেস ক্লাবকে রূপ দিয়েছেন সাহস ও সম্ভাবনার প্রতীকে।
যখন অসংখ্য তরুণ-তরুণী শিক্ষাজীবন শেষে বেকারত্বে হতাশ, তখন বি এইচ বিজনেস ক্লাব হয়ে উঠেছে এক আলোকবর্তিকা।
এ ক্লাব শেখাচ্ছে—উদ্যোক্তা হওয়া মানে শুধু আয় নয়; এটি আত্মমর্যাদা, আত্মবিশ্বাস এবং সমাজ পরিবর্তনের শক্তি।
একুশে সংবাদ/এ.জে



একুশে সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

