AB Bank
ঢাকা বুধবার, ০১ মে, ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

জন্মনিয়ন্ত্রণের দায় কি শুধুই নারীর?


Ekushey Sangbad
নিজস্ব প্রতিবেদক
০১:৫৪ পিএম, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪
জন্মনিয়ন্ত্রণের দায় কি শুধুই নারীর?

লেখার শিরোনাম দেখে কি কপালের ভ্রূ দুটি এক করে ফেললেন? না, ভ্রূ দুটিকে আপাতত নিজেদের জায়গায় রাখুন। এইবার আসি শিরোনামে। বিপুল জনসংখ্যাবেষ্টিত এই দেশে জন্ম নিয়ন্ত্রণ অত্যাবশ্যকীয় বিষয় বটে। পরিকল্পিত পরিবার গঠনে জন্ম নিয়ন্ত্রণ বা পরিবার পরিকল্পনা অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু এ বিষয়টি অনেক পরিবারের পুরুষ সদস্যরা এড়িয়ে চলেন। তাঁরা জন্ম নিয়ন্ত্রণের সকল দায়ভার পরিবারের নারীর ওপর চাপিয়ে দেন। এতে অনিচ্ছা সত্ত্বেও নারীরা গিনিপিগ হতে বাধ্য হন।


মূলত পরিবার বলতেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে বাবা-মা, আত্মীয়স্বজনসহ সন্তানের ছবি। পরিবার পরিকল্পনা হলো সঠিক সময় সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা। বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রী পরিবার নিয়ে পরিকল্পনা করে থাকেন। এ ক্ষেত্রে নতুন দম্পতির মাথায় রাখা দরকার, পুরো মাসের আয়ের ওপর ভিত্তি করে সন্তানসন্ততি নেওয়া। কিন্তু আমাদের দেশে দম্পতিরা বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার খুব কম সময়ের মধ্যে পরিকল্পনা ছাড়াই সন্তান নিয়ে থাকেন। আর এই পরিকল্পনাহীন প্রক্রিয়ায় বলির পাঠা হতে হয় নারী সমাজকে। কারণ পরিবার পরিকল্পনার বেশির ভাগ পদ্ধতি নারীরা ব্যবহার করে থাকেন। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর থেকে পরিবার প্রচারিত সাতটি আধুনিক পদ্ধতির মধ্যে নারীরা ৫টি পদ্ধতি ব্যবহার করেন, আর পুরুষেরা ব্যবহার করেন ২টি পদ্ধতি। মনে মনে কি প্রশ্ন জাগছে না? জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের দায় কি নারীর একার?

একজন নারীর কথা
ঢাকার বনানীতে থাকেন মরিয়ম (ছদ্মনাম)। মাত্র ২১ বছর বয়স। তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসেবে কাজ করেন। অভাব অনটনের সংসার। তাই  অন্য নারীদের মতন স্বাস্থ্য নিয়ে অসচেতন। মরিয়মের কম বয়সে (বাল্যবিবাহ) বিয়ে হয় এবং বর্তমানে এক সন্তানের মা। এরই মধ্যে জন্ম নিয়ন্ত্রণের জন্য তাঁকে বহুবার শরীরে ক্ষতিকর ইনজেকশন নিতে হয়েছে। আর না হয় হাতে কাঠি বাঁধতে হয়েছে। কিন্তু তাঁর স্বামী এ ক্ষেত্রে নীরব ভূমিকা পালন করেন। তিনি জন্ম নিয়ন্ত্রণে কোনো সুরক্ষা পদ্ধতি ব্যবহার করেন না। জন্ম নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি ব্যবহারের কথা বললে স্বামী মরিয়মকে কটু কথা শোনান। ফলে জন্ম নিয়ন্ত্রণের পুরো দায়ভার তাঁকে একাই বহন করতে হয়। মরিয়ম বলেন, ‘ইনজেকশন নিলে হাত পা ফুলে যায়, ওজনও বেড়ে যায়। পিল নিতে চাই না, কারণ এতে রোজকার কাজের ব্যাঘাত ঘটে।’

একজন পুরুষের কথা
ঢাকার  হাজারীবাগ এলাকার রিকশা চালান রহমত আলী (ছদ্মনাম)। বয়স ৬১ বছর। তিনি ৯ সন্তানের বাবা। রহমত আলী বিয়ের পর থেকে জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য কোনো কিছু ব্যবহার করেননি। এই রিকশা শ্রমিক জানেন না, জন্ম নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি কী কী। তাই তিনি কোনো পদ্ধতি নেননি। তিনি বলেন, ‘আমার বড় ভাইয়ের দুই পরিবার, বড় ভাইও ৯ বাচ্চার বাপ। বড় ভাইও তো এসব বিষয়ে কিছু জানতেন না। তবে, এখন দেখি অনেকেই পোলাপান কম নেন। একটা কিংবা দুইটা নেওয়ার পর আর নেন না। আমি আসলে বিয়ের পরে এই বিষয়ে তেমন কিছু জানতাম না।’

পুরুষের দায়িত্বশীল আচরণ
নারীর শরীরকে কোনোভাবেই সন্তান উৎপাদনের যন্ত্র হিসেবে দেখা যাবে না। এই মানসিকতার পরিবর্তনই কেবল পারে জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের ক্ষেত্রে পুরুষের অংশগ্রহণ বাড়াতে। এমনটি মনে করেন প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-এর যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার (এসআরএইচআর) কর্মসূচির প্রধান সৈয়দ নূরউদ্দিন। ইনডিপেনডেন্ট ডিজিটালকে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে জন্ম নিয়ন্ত্রণের যতগুলো পদ্ধতি রয়েছে, তার মধ্যে ২টি ছাড়া (কনডম ও ভ্যাসেকটামি) আর সকল পদ্ধতি নারীর জন্য। দেশে পুরুষদের কনডম ব্যবহারের হার ৭ শতাংশ মাত্র। যেখানে ৬৩ শতাংশ নারী জন্ম নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকেন। অথচ নারীর ব্যবহারের পদ্ধতিগুলোর কোনোটিই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ামুক্ত নয়। এতে নারীরা নানা ধরনের সংকটে ভুগে থাকেন। অথচ পুরুষের জন্য তৈরি করা কনডমের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই, যা অত্যন্ত সহজলভ্য এবং সহজে ব্যবহারযোগ্য একটি পদ্ধতি। কিন্তু ব্যবহারের দিক থেকে অত্যন্ত কম হার দেখা যায়, যা নারীর তুলনায় ৯ ভাগের ১ ভাগ।’

সৈয়দ নূরউদ্দিন মনে করেন, কনডম এমন একটি পদ্ধতি, যা দুই ধরনের উপযোগিতা দেয়। প্রথমত, এটি প্রায় ৯৯ ভাগ ক্ষেত্রে গর্ভধারণ প্রতিরোধ করে। এবং দ্বিতীয়ত এটি যেকোনো ধরনের প্রজননতন্ত্রের সংক্রমণ ও যৌন সংক্রমণ থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে সুরক্ষিত রাখে। অথচ কনডমের ব্যবহারিক চাহিদা পুরুষদের ভেতর অত্যন্ত কম। তাঁর মতে, এটা পুরোপুরিই পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতার ফল। যেখানে গর্ভধারণ, সন্তান ধারণ, লালনপালন করা সম্পূর্ণই নারীর শরীরকেন্দ্রিক, সেখানে নারীর শরীরকে নিয়ন্ত্রণের ওপরই বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া পুরুষদের কনডম ব্যবহার নিয়ে নানা ধরনের ভিত্তিহীন ধারণা প্রচলিত রয়েছে। নানাভাবে কনডম ব্যবহারকে নিরুৎসাহিত করা হয়। প্রকৃতপক্ষে এগুলো সবই, পুরুষকে দায়িত্বশীল আচরণ থেকে দূরে রাখার উপায় মাত্র। এই মানসিকতা পরিবর্তনের জন্য আমাদের কাজ করা প্রয়োজন। নারীর প্রজনন স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। এ ছাড়া সামাজিক বিধিনিষেধ অতিক্রম করে সামাজিক সংহতি তৈরির ওপর জোর দেওয়া প্রয়োজন, যেখানে সকলেই সুরক্ষিত থাকবে।

শহর থেকে গ্রামে বেশি
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) থেকে প্রকাশিত বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস–২০২২ শীর্ষক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জরিপে অংশগ্রহণকারী নারীরা পুরুষের তুলনায় বেশি পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহার করেন। বিবাহিত নারীদের মধ্যে ৬২.৩ শতাংশের কিছু বেশি নারী আধুনিক জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করেন। এর বিপরীতে মাত্র ১ শতাংশ নারী সনাতন পদ্ধতি ব্যবহার করছেন। জন্ম নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত বিভিন্ন পদ্ধতির মধ্যে তুলনা করে দেখা যায়, যাদের বয়স ২০-২৪ এবং ৩০-৩৪ বছর, তাদের মধ্যে আধুনিক পদ্ধতির ব্যবহার সর্বাধিক (৬৭.৩ শতাংশ)। জরিপের তথ্য থেকে জানা যায়, শহরের তুলনায় পল্লি অঞ্চলে আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহারের মাত্রা ০.৭ শতাংশ কম। আধুনিক পদ্ধতি পল্লি অঞ্চলে ৬২.১ শতাংশ নারী ব্যবহার করেন, শহরে যে হার ৬২.৮ শতাংশ।

জরিপ থেকে আরও জানা যায়, ১৫-৪৯ বছর বয়সের ৬৩.৩ শতাংশ বিবাহিত নারী জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করেন। এ ক্ষেত্রে শহরের নারীরা পল্লি এলাকায় বসবাসকারী নারীদের তুলনায় জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি অভিযোজন করেন বেশি। ৩০ থেকে ৩৪ বছর বয়সের নারীরা জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করছেন বেশি, যার মাত্রা ৬৮.২ শতাংশ। এরপর নারীরা যখন তাদের প্রজনন বয়সের শেষের দিকে পৌঁছে যান, তখন জন্মনিরোধক ব্যবহারের অনুপাত ধীরে ধীরে ৪০.১ শতাংশে নেমে আসে।

জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির বৈষম্য
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিকল্পনা) মো. মতিউর রহমান বলেন, ‘পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর থেকে পরিবার পরিকল্পনার যেসব পদ্ধতি সম্পর্কে প্রচার চালানো হয়, তার মধ্যে দুটি বাদে বাকি সবগুলো নারীদের জন্য। জন্ম নিয়ন্ত্রণে আমাদের ৭টি আধুনিক পদ্ধতি আছে। যেমন: খাবার বড়ি (নারী), ইনজেকশন/কপার টি (নারী), আইইউডি(নারী), ইমপ্ল্যান্ট (নারী), টিউবেকটমি (নারী), কনডম (পুরুষ), এনএসভি (পুরুষ)। এই সাত পদ্ধতির মধ্যে পুরুষের জন্য আছে মাত্র দুটি পদ্ধতি, আর নারীর জন্য ৫টি। অর্থাৎ, জন্ম নিয়ন্ত্রণকারী পদ্ধতি গ্রহণকারী বেশির ভাগ হচ্ছেন নারী। এ কথা সত্য যে, আমাদের সমাজে জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির পুরুষ গ্রহীতা কম। আমরা চেষ্টা করছি পুরুষ গ্রহীতার সংখ্যা বৃদ্ধির।’

ভ্রান্ত ধারণা থেকে ভুলের সৃষ্টি
জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের প্রশ্নে নারীর স্বাধীন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা নেই বললেই চলে। বহু মানসিক চাপ সহ্য করে নারীদেরই জন্ম নিয়ন্ত্রণের দায়ভার বহন করতে হয়। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. তানিয়া হক জানান, পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতির শুরুটা ছিল শুধু নারীকেন্দ্রিক। তখন পুরুষদের তেমন কোনো পদ্ধতি গ্রহণ করতে হতো না।

গনমাধ্যমকে অধ্যাপক তানিয়া বলেন, ‘জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে নারীকেই গিনিপিগ হিসেবে ব্যবহার করা হতো। সেটা এনজিও থেকে শুরু করে সবাই করেছে। গবেষণায় দেখা গেছে, নারীরা একাধারে এসব পদ্ধতি ব্যবহার করতে গিয়ে নানাবিধ শারীরিক সমস্যায় পড়ে। এতে তাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এ ক্ষেত্রে বলা যায়, যারা এই পদ্ধতিগুলো নিয়ে কাজ করেছেন, তাঁদের মাথায় ভ্রান্ত বা ভুল ধারণা কাজ করেছে। তাঁদের মাথায় ছিল—নারী যেহেতু সন্তান জন্ম দিচ্ছে, সুতরাং সব পদ্ধতি হবে নারীকেন্দ্রিক। এটা হলো সবচেয়ে প্রথম ভুল ধারণা। কারণ, নারী এবং পুরুষ উভয়ের মিলনেই কিন্তু একটা সন্তানের জন্ম হয়। নারী হয়তো সরাসরি সন্তান জন্ম দেন। তবে জন্ম নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি ব্যবহারের ক্ষেত্রে পুরুষেরও ভূমিকা থাকিা উচিত।’

ড. তানিয়া হক বলেন, ‘জন্ম নিয়ন্ত্রণ বা পরিবার পরিকল্পনায় নারীকে গিনিপিগ বানানোর পেছনে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কাজ করেছে মানুষের জ্ঞানের কমতি। পুরো বিষয়টাই ছিল জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের নামে নারীকে নিয়ন্ত্রণ করা। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, পুরুষেরা কনডম ব্যবহার করতে চান না। কারণ তাঁরা এটা ব্যবহার করতে পছন্দ করেন না। তাই নারীকেই পিল খেতে হয় বা অন্য কোনো পদ্ধতি গ্রহণ করতে হয়। এখন অনেক পরিবর্তন আসছে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নারীকেই ভোগান্তিতে পড়তে হয়।’

পুরুষদের জন্য নতুন নতুন জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি চালুর পরামর্শ দেন এই বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, ‘পুরুষদের ক্ষেত্রেও পিল খাওয়ার পদ্ধতি শুরু করা উচিত। শুধু কনডম না, তাদের জন্য আরও অনেক বেশি পদ্ধতি থাকা উচিত। জন্ম নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে নারীদের যতই পদ্ধতি নিতে হচ্ছে না কেন, সবার প্রথমে দেখতে হবে সেসব পদ্ধতি গ্রহণ করতে তিনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন কিনা, সেটা তাঁর শরীরের সঙ্গে খাপ খাচ্ছে কিনা। এসব ক্ষেত্রে অবশ্যই নারীর স্বাধীনতা থাকা উচিত। একই কথা পুরুষের বেলায়ও প্রযোজ্য।’

পরিসংখ্যান কী বলে
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) থেকে প্রকাশিত বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস–২০২২ শীর্ষক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জরিপে অংশগ্রহণকারী ৭১ শতাংশ নারী জানান, তাঁরা কোনো না কোনো আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকেন। ২০২১ সালে আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহারের মাত্রা ছিল ৮১.৩ শতাংশ। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহারের মাত্রা ১০.৩ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। যেকোনো ধরনের আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহারকারীদের বয়সভিত্তিক গোষ্ঠী বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ৩৫-৩৯ বছর বয়সীদের মধ্যে এর মাত্রা সর্বোচ্চ (৭৬.৪ শতাংশ) এবং ১৫-১৯ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে সর্বনিম্ন (৫৬.৪ শতাংশ)। এ ছাড়া জরিপে অংশগ্রহণকারী নারীদের মধ্যে সর্বাধিক ৩৭.৬ শতাংশ জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি হিসেবে মুখে খাওয়ার বড়িকে বেশি পছন্দ করেন। ২০২১ সালে এ হার ছিল ৩৯.৬ শতাংশ।

জন্ম নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি হিসেবে ইনজেকশন গ্রহণ বাংলাদেশি নারীদের কাছে দ্বিতীয় পছন্দের পদ্ধতি। এর ব্যবহারকারীর অনুপাত ১৩.৯ শতাংশ। পরবর্তী পছন্দের পদ্ধতি হলো কনডম, যা ৬.৯ শতাংশ নারী ব্যবহার করেন। এ ছাড়া সব ধরনের পদ্ধতির মধ্যে মাত্র ০.২ শতাংশ পুরুষ বন্ধ্যাকরণ পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকেন। ১.৮ শতাংশ নারী বন্ধ্যাকরণ, ০.২ শতাংশ ফোম এবং অন্য ০.৬ শতাংশ নরপ্ল্যান্ট ব্যবহার করেন। বাকি ১ শতাংশ যেকোনো সনাতনী পদ্ধতি ব্যবহার করেন। পিল হলো সর্বাধিক ব্যবহৃত পদ্ধতি, যা ৬০.৪ শতাংশ নারী ব্যবহার করেন। এর পরের অবস্থানে রয়েছে ইনজেকশন, যা ২২.৩ শতাংশ নারী ব্যবহার করেন।

প্রয়োজন সঠিক পদ্ধতির নির্বাচন
পরিবার পরিকল্পনার বেশির ভাগ পদ্ধতি একতরফাভাবে শুধু নারীকে ব্যবহার করতে হয়, যার প্রতিটিরই কোনো না কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। শারীরিক এই ধকল নারীকে আজীবন মুখ বুঁজে সহ্য করতে হয়। এটই যেন তার নিয়তি।

এ বিষয়ে কুমুদিনী উইমেন্স মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক (স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা) ডা. বিলকিস বেগম চৌধুরী বলেন, ‘এ কথা সত্যি যে জন্মনিরোধক বেশির ভাগ পদ্ধতিই নারীদের জন্য তৈরি করা হয়েছে। প্রতিটা পদ্ধতিরই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। বড়ি খেলে প্রথম দিকে বমি বা বমিবমি ভাব, মাথা ঘোরানো বা মাথাব্যাথা হতে পারে। এ ছাড়া স্তন ভারী হয়ে যাওয়া বা স্তন ব্যাথা, ওজন বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিতে পারে। প্রজেস্টেরন হরমোনজনিত পদ্ধতি (বড়ি, ইনজেকশন ইত্যাদি) প্রয়োগের ফলে প্রথম দিকে মাসিকের রাস্তায় অল্প অল্প অনিয়মিত রক্তক্ষরণ অথবা একেবারে মাসিক বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ইন্ট্রাইউটেরাইন ডিভাইসের (IUDs) অন্যতম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো মাসিকের সময় বা মাঝখানে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ। কারও কারও তলপেটে ব্যাথা হতে পারে।’

জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণে নারীর ওপর একতরফা যে চাপ, তা হঠাৎ করে উধাও হবে না। পুরুষদের মধ্যে এ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি পরিবার পরিকল্পনার ক্ষেত্রে নারীর ওপরই যেন সব দায় চাপানো না হয়, সে জন্য নানামুখী প্রচার চালানো প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে সরকারি–বেসরকারি সংস্থাগুলোকে কাজ করতে হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, এ ক্ষেত্রে রাতারাতি বদল হয়তো হবে না। তাই বিদ্যমান জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিগুলোর মধ্যে কোনগুলো কে গ্রহণ করবে, সে সম্পর্কে জানাবোঝা তৈরি করতে হবে। কারণ, সব পদ্ধতি সবার জন্য নয়।

এ বিষয়ে ডা. বিলকিস বেগম চৌধুরী গনমাধ্যমকে বলেন, ‘জন্ম নিয়ন্ত্রণের সঠিক পদ্ধতি নির্বাচন করা একান্তই জরুরি। কোন পদ্ধতি প্রয়োগের আগে নারীর সার্বিক ইতিহাস, শারীরিক পরীক্ষা করা প্রয়োজন। যেমন: কোনো নারীর যদি অতি উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্‌রোগ অথবা জরায়ুমুখের বা স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি থাকে, তাকে অ্যাস্ট্রোজেন-প্রজেস্টেরন জন্মনিরোধক বড়ি দেওয়া যাবে না। আবার কারও যদি তলপেটের সংক্রমণ (পেলভিক ইনফেকশন) থাকে, তাকে ইন্ট্রাইউটেরাইন ডিভাইস (IUDs) দেওয়া উচিত নয়। আবার যেকোন পদ্ধতি প্রয়োগের পরও নারীর সার্বিক শারীরিক অবস্থার পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন। যেমন জন্মনিরোধক বড়ি শুরুর প্রথম দুই থেকে তিন মাস পর্যন্ত বমি বা বমিবমি ভাব, হালকা মাথা ঘোরানো ইত্যাদি হতে পারে। এরপর তা ঠিক হয়ে যায়। আবার ইমারজেন্সি জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি (বড়ি বা ডিভাইস) কিন্তু শুধু জরুরি অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতেই ব্যবহার করা উচিত। ইমারজেন্সি জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়িতে হরমোনের পরিমাণ স্বাভাবিক জন্মনিরোধক বড়ির চেয়ে অনেক বেশি থাকে, যার নিয়মিত প্রয়োগ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাই সঠিক ব্যক্তির জন্য সঠিক পদ্ধতির নির্বাচন একান্ত প্রয়োজন। পাশাপাশি পদ্ধতি প্রয়োগের পরও নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা দরকার।’
 

Link copied!