বিশৃঙ্খলা আর তিক্ততার পর ব্রাজিলের বেলেমে এমন এক চুক্তির মধ্য দিয়ে জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনের (কপ৩০) পর্দা নামল, যেখানে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য জীবাশ্ম জ্বালানির দায়ের কথা সরাসরি বলাই হল না। বিবিসি লিখেছে, তেল, কয়লা ও গ্যাসের ব্যবহার দ্রুত কমানোর প্রতিশ্রুতি চাওয়া যুক্তরাজ্য, ইইউসহ ৮০টির বেশি দেশকে হতাশায় ফেলে শেষ হল এ সম্মেলনের। তেল উৎপাদনকারী দেশগুলো তাদের পুরনো অবস্থান ধরে রেখেছে; তাদের ভষ্য, অর্থনীতির অগ্রগতির জন্য জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার করতে দেওয়া দরকার।
এমন সময়ে এ সম্মেলন হল, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির পরিমাণ প্রাক-শিল্পায়ন যুগের তুলনায় ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে আটকে রাখার লক্ষ্য ব্যর্থ হতে চলেছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ।
এতে জীবাশ্ম জ্বালানি পর্যায়ক্রমে বন্ধের দুর্বল শর্ত মেনে নিয়ে প্রায় ২০০ দেশ একটি সীমিত চুক্তিতে পৌঁছেছে। বেলেম থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
দুই সপ্তাহের দীর্ঘ আলোচনার পর সর্বসম্মতভাবে চুক্তিটি গৃহীত হয়। তবে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই সম্মেলন বর্জন করায় যুক্তরাষ্ট্র অনুপস্থিত ছিল।
চুক্তি গৃহীত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গরম-আর্দ্র বেলেমের সম্মেলন হল হাততালিতে মুখরিত হয়। বিক্ষোভ, অগ্নিকা- এবং রাস্তাজুড়ে মিছিল সব মিলিয়ে নাটকীয় এক সম্মেলনের এখানেই সমাপ্তি হয়।
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা বলেন, এই চুক্তি প্রমাণ করেছে, সংকটে পড়লে বিভক্ত বিশ্ব এখনও এক হতে পারে।
দক্ষিণ আফ্রিকায় জি২০ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে দু’টি পথ ছিল, চালিয়ে যাওয়া বা হাল ছেড়ে দেওয়া। আমরা প্রথম পথ বেছে নিয়েছি। বহুপাক্ষিকতাই জয়ী হয়েছে।’
তবে ইউরোপীয় মন্ত্রীরা স্বীকার করেছেন, পুরো প্রক্রিয়াটি ভেঙে পড়া থেকে রক্ষা করতে তারা দুর্বল চুক্তিতে রাজি হয়েছেন।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের জলবায়ু প্রধান ভপকে হোকস্ত্রা বলেন, ‘সত্যি বলতে, আমরা আরও বেশি কিছু চেয়েছিলাম। আমি জানি এটা কিছুটা অধরা, কিন্তু একসঙ্গে কিছু করার মধ্যে বিশাল মূল্য রয়েছে।’
কোপ-৩০ এ চীনের প্রতিনিধিদলের প্রধান লি গাও এএফপিকে বলেন, এই সম্মেলন সফল হিসেবে বিবেচিত হবে।
লি বলেন, ‘আমরা একটি অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতিতে এই সফলতা অর্জন করেছি, যা প্রমাণ করে যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সংহতি দেখাতে এবং যৌথ প্রচেষ্টা চালাতে আগ্রহী।’
ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত এবং চীনের এক যৌথ বিবৃতিতে ভারত এই চুক্তিকে ‘অর্থবহ’ বলে প্রশংসা করে। বিশ্বের জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ ৩৯টি দেশের জোট ‘অ্যালায়েন্স অফ স্মল আইল্যান্ড স্টেটস’ (এওসিস) বলেছে, চুক্তিটিতে ‘ঘাটতি আছে, তবে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এটাও প্রয়োজনীয় অগ্রগতি।’
তেল, গ্যাস ও কয়লা থেকে বেরিয়ে আসার কৌশল ছাড়া আলোচনায় অংশ না নেওয়ার হুমকি দিয়েছিল বহু দেশ। শেষ পর্যন্ত চুক্তিটিতে ‘জীবাশ্ম জ্বালানি’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়নি। কপ৩০ সভাপতি আন্দ্রে কোরেয়া দো লাগো বলেন, ‘আমরা জানি আপনাদের মধ্যে কেউ কেউ আলোচ্য বিষয়ে আরও বড় আকাঙ্ক্ষা রেখেছিলেন।’ সান্ত¡না হিসেবে তিনি জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বেরিয়ে আসার একটি স্বেচ্ছা ‘রোডম্যাপ’ তৈরির প্রস্তাব দেন।
উল্লেখ্য, সম্মেলনের চূড়ান্ত বৈঠক হয় গত শনিবার। সেখানে দেশগুলোকে বিরোধিতার সুযোগ না দেয়ায় এ আয়োজনের সভাপতিত্ব নিয়ে কড়া সমালোচনা করেন কলম্বিয়ার একজন প্রতিনিধি।
দেশটির প্রতিনিধি ড্যানিয়েলা দুরান গনজালেস বলেন, বিশ্বে যে পরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হয়, তার ৭৫ শতাংশের বেশি জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে আসে বলে আমাদের কাছে যথেষ্ট পরিমাণ বৈজ্ঞানিক প্রমাণ রয়েছে। সেই কারণে আমরা মনে করি, জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনে এখন সেই বাস্তবতা নিয়ে কথা বলা শুরু করার সময় এসেছে। সম্মেলনের চূড়ান্ত পর্বে ‘স্বেচ্ছাসেবার’ ভিত্তিতে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতে দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় দেশগুলোকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করতে ২০১৫ সালের ঐতিহাসিক প্যারিস চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র বেরিয়ে যাবে বলে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দেয়ায় এবারই প্রথম জলবায়ু সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র কোনো প্রতিনিধিদল পাঠায়নি। ট্রাম্প জলবায়ু পরিবর্তনের তত্ত্বকে ‘ভাঁওতাবাজি’ বলেন।
অভিজ্ঞ মধ্যস্থতাকারী, জার্মানির সাবেক জলবায়ু দূত জেনিফার মরগান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অনুপস্থিতি ‘শূন্যতা’ সৃষ্টি করেছে। দেশটি প্রায়ই ইইউ, যুক্তরাজ্যের মত জোটকে সমর্থন দিত।
তিনি বলেন, ১২ ঘণ্টার রাত্রিকালীন আলোচনায় যখন তেল উৎপাদনকারী দেশগুলো কঠোর অবস্থান নেয়, তার বিপরীতে কেউ না থাকলে এটা কঠিন হয়ে যায়। কিন্তু অনেক দেশ যে আলোচনা থেকে সরে যায়নি বা অতীতের জলবায়ু চুক্তি থেকে পিছুটান দেয়নি, সেটাকে ‘স্বস্তির বিষয়’ হিসেবে দেখছেন অনেকে।
অ্যান্টিগা ও বারবুডার জলবায়ু দূত রুলেটা থমাস বলেন, একটি প্রক্রিয়া ধারাবাহিকভাবে কার্যকর থাকায় আমরা খুশিৃযেখানে সব দেশেরই কণ্ঠ শোনা যায়।
চূড়ান্ত বৈঠকে সৌদি আরবের একজন প্রতিনিধি বলেন, নিজস্ব বাস্তবতা ও অর্থনীতির ভিত্তিতে প্রত্যেক দেশেরই নিজেদের মতো পথ তৈরির সুযোগ রাখা উচিত।
অন্যান্য তেল উৎপাদনকারী দেশগুলো অতীতে যেমন জীবাশ্ম জ্বালানির মজুদ ব্যবহার করেছে, সেই সুযোগ সৌদি আরবের থাকা উচিত বলে দেশটি সম্মেলনে তুলে ধরে।
বিবিসি লিখেছে, দুই সপ্তাহের এই সম্মেলন বিশৃঙ্খলায় ভরা ছিল। শৌচাগারের পানি শেষ হওয়া, তীব্র বজ্রঝড়ে সভাস্থল প্লাবিত হওয়া এবং প্রতিনিধিদের গরম ও আর্দ্র কক্ষের ব্যবস্থা করতে অসুবিধা হওয়ার মত সমস্যা দেখা দেয়। সম্মেলনে প্রায় অর্ধ লাখ নিবন্ধিত প্রতিনিধিকে দুইবার সরাতে হয়েছিল। প্রতিবাদকারী প্রায় ১৫০ জনের একটি দল নিরাপত্তা বেষ্টনী অতিক্রম করে সভাস্থলে প্রবেশ করে; তারা আমাদের বন বিক্রির জন্য নয় লেখা প্ল্যাকার্ড বহন করছিলেন। বৃহস্পতিবার অগ্নিকাণ্ডে ছাদে গর্ত সৃষ্টি হলে অংশগ্রহণকারীরা তাড়াহুড়া করে বাইরে চলে যান।
বিবিসি লিখেছে, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা সম্মেলনের জন্য বেলেম শহরকে বেছে নিয়েছিলেন, যাতে বিশ্বের দৃষ্টি আমাজন বনের দিকে চলে আসে এবং শহরে আর্থিক প্রবাহ বাড়ে। দেশটির আরও উচ্চাকাক্সক্ষী জীবাশ্ম জ্বালানি চুক্তির ইচ্ছা থাকলেও ব্রাজিলের সমালোচনা রয়েছে আমাজনের মুখে তেল খননের পরিকল্পনার জন্য।
গ্লোবাল উইটনেস নামের ক্যাম্পেইন গ্রুপের তথ্য অনুযায়ী, ব্রাজিলে সামুদ্রিক তেল ও গ্যাস উৎপাদন ২০৩০-এর প্রথমার্ধ পর্যন্ত বাড়তে চলেছে।
বিবিসি লিখেছে, জাতীয় পরিস্থিতি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব- এই দুই নিরিখে দেশগুলোর প্রতিযোগিতামূলক স্বার্থ রয়েছে। কিছু দেশ সম্মেলনের ফল নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে।
ভারত জলবায়ু চুক্তির প্রশংসা করে বলেছে, এ চুক্তি ‘অর্থপূর্ণ’। ৩৯টি ছোট দ্বীপ ও উপকূলীয় রাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্বকারী একটি গোষ্ঠী শনিবারের চুক্তিকে ‘অসম্পূর্ণ’ বললেও ‘অগ্রগতির’ দেখার কথা বলেছে।

দরিদ্র দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে আরও জলবায়ু অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি চেয়েছে।
সিয়েরা লিওনের পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী জিওহ আবদুলাই বলেন, একটি অগ্রগতি হয়েছে। যারা অতীতে বেশি গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন করেছে, তাদের জলবায়ু অর্থায়নে যে বিশেষ দায়িত্ব আছে— এখন আরও স্পষ্টভাবে স্বীকৃতি দেয়া হচ্ছে।
কিন্তু ৮০টির বেশি দেশের জন্য এ এক হতাশাজনক সমাপ্তি, যারা চুক্তিতে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতে কঠোর অবস্থান নেওয়ার পক্ষে বলে আসছিল। যুক্তরাজ্যের জ্বালানি ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী এড মিলিব্যান্ড বলেন, আমি আরও উচ্চাকাক্সক্ষী চুক্তি চাইছিলাম।
ইইউয়ের জলবায়ু কমিশনার ওপকে হোয়েকস্ট্রা সাংবাদিকদের বলেন, আমরা যে আরো বেশি, সব বিষয়ে আরও বেশি কিছু চাই, তা লুকানোর কিছু নেই।
ব্রাজিল আলোচনার সূচনা করেছিল ‘উষ্ণম-লীয় বন সংক্রান্ত স্থায়ী তহবিল’ নামের একটি আলোচনা দিয়ে, যা দেশগুলোকে উষ্ণম-লীয় বন রক্ষার জন্য অর্থায়ন করবে। শেষ পর্যন্ত এ উদ্যোগ বিভিন্ন দেশের সরকারের কাছ থেকে অন্তত ৬.৫ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি পেয়েছে। ৯০টির বেশি দেশ বিশ্বব্যাপী বন উজাড় প্রতিরোধ পরিকল্পনা বা ‘রোডম্যাপ’কে সমর্থন করেছে।
উল্লেখ্য, চুক্তির বিষয়ে সমঝোতা না হওয়ায় অতিরিক্ত সময়ে গড়িয়েছে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন (কপ৩০)। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে ধাপে ধাপে সরে আসার বিষয়ে নতুন করে অঙ্গীকার করা নিয়ে তেল উৎপাদক দেশ ও উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলো এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বিপরীতমুখী অবস্থানের কারণে এ অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় সম্মেলন গতকাল শনিবার বাড়তি সময়ে গড়ায়। শুক্রবার এ সম্মেলন শেষ হওয়ার কথা ছিল। ব্রাজিলের বেলেম শহরে স্থানীয় সময় শুক্রবার বেলা একটায় সমাপনী অধিবেশন হওয়ার কথা ছিল। দুই সপ্তাহ ধরে আলোচনার পরও অংশগ্রহণকারী দেশগুলো কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি। যদিও এ বিষয়ে শুক্রবারের মধ্যে ঐকমত্যে পৌঁছানোর কথা ছিল।
শুক্রবার আয়োজক দেশ ব্রাজিল একটি খসড়া চুক্তি প্রকাশ করে। এরপর ইইউ সতর্ক করে বলে, কোনো ধরনের চুক্তি ছাড়াই সম্মেলন শেষ হতে পারে না। কারণ, ব্রাজিলের খসড়া চুক্তিতে জীবাশ্ম জ্বালানি কিংবা দেশটির প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভার ‘রোডম্যাপের’ কথা উল্লেখ করা হয়নি।
রাতভর আলোচনার পর ইইউর মন্ত্রীরা শনিবার বৈঠক করেন। বৈঠকের ফলাফল সম্পর্কে ফ্রান্সের পরিবেশমন্ত্রী বলেন, এখন পর্যন্ত আলোচনায় কোনো অগ্রগতি হয়নি। ধনী দেশ, উদীয়মান অর্থনীতি, ছোট দ্বীপরাষ্ট্রসহ ৩৬টি দেশ একটি চিঠিতে আয়োজক দেশ ব্রাজিলকে সতর্ক করেছে। তারা বলেছে তেল, কয়লা ও গ্যাসের ব্যবহার থেকে সরে আসার পরিকল্পনা ছাড়া কোনো চুক্তি তারা গ্রহণ করবে না।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদলের একজন সদস্য এএফপিকে বলেছেন, ২৭ দেশের এই জোটকে একঘরে করে দেয়া হচ্ছে এবং তাদের ‘খলনায়ক’ হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, জোটের কিছু সদস্যদেশ সম্মেলন বর্জনের কথা চিন্তা করছিল। আবার অন্যরা ভয় করছিল যে আলোচনায় ব্যর্থতার জন্য তাদের দোষারোপ করা হতে পারে।
জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ করাসংক্রান্ত ভাষা গ্রহণ করতে অস্বীকার করায় তেলসমৃদ্ধ সৌদি আরব ও রাশিয়া, কয়লা উৎপাদক ভারত এবং অন্য অনেক উদীয়মান দেশকে দায়ী করেছেন ফ্রান্সের পরিবেশমন্ত্রী। ২০২৩ সালে দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত কপ২৮ চুক্তিতে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে আসার পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রধান কারণ তেল, গ্যাস ও কয়লার ব্যবহার ধাপে ধাপে বন্ধ করার প্রচেষ্টা বাস্তবায়নে ব্যর্থতায় হতাশা দেখা দিয়েছে।
সম্মেলনে অংশ নেয়া দক্ষিণ এশিয়ার আলোচক দলের বিশেষ দূত অরুণাভ ঘোষ এ ধরনের প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এক পক্ষ পৃথিবীকে বাঁচাতে যতœশীল হলেও অন্য পক্ষ তা চায় না। কারণ, তারা চুক্তির ভাষা নিয়ে অসন্তুষ্ট। তারা পৃথিবীর ভালো–মন্দ নিয়ে মাথা ঘামায় না। এটি আলোচনার মনোবৃত্তিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
লুলা দা সিলভার ‘রোডম্যাপ’ বাদ দেওয়ার পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন অরুণাভ ঘোষ। তিনি বলেছেন, উদীয়মান দেশগুলোকে তাদের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তা ছাড়া জীবাশ্ম জ্বালানি খাতে নির্ভরশীল শ্রমিকদের জন্য ন্যায়সংগত রূপান্তর নিশ্চিত করতে হবে।
এই সম্মেলনে চুক্তিতে পৌঁছাতে অন্তত দেশেগুলোর মধ্যে সম্মতির প্রয়োজন। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাজি না হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র এ বছর সম্মেলনে অংশ নেয়নি। নানা জটিলতা ও লক্ষ্য বাস্তবায়নের ধীরগতির কারণে হতাশা প্রকাশ করেছে এবারের কপ৩০-এর আয়োজক দেশ ব্রাজিলও। দেশটি বলেছে, নতুন প্রতিশ্রুতি নয়, বরং পুরোনোগুলো বাস্তবায়নে মনোযোগ দেওয়া উচিত।
এবারের জলবায়ু সম্মেলনে বেশ কিছু বিশৃঙ্খল ঘটনা ঘটেছে। গত সপ্তাহে সম্মেলনের প্রবেশদ্বার আটকে বিক্ষোভ করেন আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকজন। এর রেশ কাটতে না কাটতেই গত বৃহস্পতিবার সম্মেলনের ভেন্যুর ভেতরে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে।

উন্নয়নশীল দেশগুলো ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোকে জলবায়ু ক্ষতিপূরণের জন্য আরও বেশি অর্থের প্রতিশ্রুতি দিতে চাপ দিচ্ছে; যাতে তারা বন্যা ও খরার মতো জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। পাশাপাশি কম কার্বন নিঃসরণের পদক্ষেপ নিতে পারে। বাতিল হওয়া খসড়ায় বলা হয়েছিল, উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য আর্থিক সহায়তা অনেক বেশি বাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে। পাশাপাশি ২০২৫ সালের তুলনায় ২০৩০ সালের মধ্যে অভিযোজন তহবিল তিন গুণ বাড়ানোর আহ্বান জানানো হয়েছিল।
অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে সমঝোতা, আগামী জলবায়ু সম্মেলন-কপ৩১ হবে তুরস্কে, আলোচনার নেতৃত্ব দেবে অস্ট্রেলিয়া
আগামী জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন-কপ৩১ অস্ট্রেলিয়ায় হওয়ার কথা ছিল। ওই আয়োজনকে ঘিরে অচলাবস্থার অবসান ঘটিয়েছে তুরস্ক এবং অস্ট্রেলিয়া। চূড়ান্ত হয়েছে, ২০২৬ সালে কপ৩১ আয়োজন করবে তুরস্ক। আর সম্মেলনে আলোচনার নেতৃত্ব দেবে অস্ট্রেলিয়া। দুই দেশের মধ্যে এমন চুক্তিকে ‘বহুপাক্ষিকতার জন্য অর্থবহ সাফল্য’ বলে উল্লেখ করেছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেফ এরদোয়ান। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
শনিবার জোহানেসবার্গে জি২০ সম্মেলনের এক অনুষ্ঠানে এরদোয়ান বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বহুপাক্ষিকতার ভিত্তি দুর্বল হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে এই যে সমঝোতায় পৌঁছেছি, সেটি আমি অর্থবহ মনে করি।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ গতকাল জানান, কপ৩১-এর সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়ায় আলোচনার নেতৃত্ব দেয়ার ‘একচ্ছত্র এখতিয়ার’ থাকবে অস্ট্রেলিয়ার। এক বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল একটি বিশেষ বৈঠকের আয়োজন করবে, যেখানে জলবায়ু পরিবর্তনে ওই অঞ্চলের ‘অস্তিত্বগত হুমকি’ তুলে ধরা হবে। প্রশান্ত মহাসাগরের ১৮টি দ্বীপরাষ্ট্র অস্ট্রেলিয়ার বিডকে সমর্থন দিয়েছিল।
তুরস্কের পরিবেশ, নগরায়ণ ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মুরাত কুরুম এক্সে দেয়া পোস্টে বলেন, শত শত দ্বিপাক্ষিক বৈঠক, জলবায়ুভিত্তিক সফর, অসংখ্য কূটনৈতিক আলোচনার পর—অবশেষে তুরস্ক কপ৩১-এর প্রেসিডেন্ট এবং আয়োজক!
তিনি আরও জানান, তুরস্ক এমন একটি ‘ন্যায়সংগত ও ভারসাম্যপূর্ণ’ সম্মেলনের আয়োজন করবে, যা শুধু নিজস্ব অঞ্চল নয় বরং প্রশান্ত মহাসাগর ও আফ্রিকার মতো ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলকেও প্রাধান্য দেবে।
জাতিসংঘের বার্ষিক সম্মেলন বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়ার প্রধান বৈশ্বিক মঞ্চ।
একুশে সংবাদ//এ.জে



একুশে সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

