রাজপথের বিরোধী দল হিসেবে পরিচিত বিএনপি রাজধানীর থানা-ওয়ার্ডের বিভিন্ন পয়েন্টে সমাবেশ ও বিক্ষোভসহ লাগাতার কর্মসূচি পালন করছে। এসব কর্মসূচিতে লাঠিসোটা নিয়ে যোগ দেওয়া এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের দেয়া উষ্কানীমূলক বক্তব্যে ও লাঠি প্রর্দশনে বিক্ষোভ সমাবেশগুলো ক্রমশ সহিংস হয়ে উঠছে।
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ৩ অক্টোবর দেশে ফিরবেন। দেশে ফেরার পরপরই তিনি আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক ডাকবেন বলে আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। ওই কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে বিরোধী দলের আন্দোলন মোকাবেলার ব্যাপারে এবং দলকে সংগঠিত করা এবং রাজনৈতিক কর্মসূচির মাধ্যমে জনগণকে সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নেবে আওয়ামী লীগ।
রাজধানীতে ১৪ টি নির্বাচনী এলাকা আছে প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় একটি করে সমাবেশ করার চিন্তাভাবনা রয়েছে। এছাড়াও ঢাকা মহানগর উত্তর এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ এর উদ্যোগে আলাদা দুটি পৃথক পৃথক সমাবেশ করার পরিকল্পনা আওয়ামী লীগ গ্রহণ করেছেন। পাশাপাশি দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম সেটি অব্যাহত থাকবে।
ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের অনিষ্পন্ন জেলা, উপজেলার সম্মেলন গুলোর কাজ চলছে। আশা করা হচ্ছে নভেম্বরের মধ্যে কাজগুলো শেষ করা হবে। শুধু আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর নয়, ছাত্র সংগঠনগুলো ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ অন্যান্য সংগঠনগুলোকেও কর্মসূচি পরিকল্পনা গ্রহণ করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কাজেই ঈদে মিলাদুন্নবীর পর থেকে আর রাজনীতির মাঠে আওয়ামী লীগ সরব হবে বলে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতারা ইতোমধ্যে মাঠ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলছেন এবং কর্মসূচি পালনের বিভিন্ন চুলচেরা বিষয় নিয়ে আলাপ আলোচনা করছেন।
সর্বশেষ শুক্রবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীতে এক সমাবেশে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আরও বড় লাঠি নিয়ে আসতে হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় প্রথম লাঠিসোটা নিয়ে বিএনপি কর্মীদেরকে সমাবেশস্থলে যোগ দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। আগামী ১০ অক্টোবর পর্যন্ত বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
বিএনপির কর্মসূচির পাল্টা কোনো কর্মসূচি দেবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক মহল।
সরকারি দলের বেশ কয়েকজন নেতা বলছেন, মিরপুর এবং বনানীতে বিএনপির সমাবেশে বাধা দান বা তাদেরকে দেওয়া ইত্যাদি সংস্কৃতি আওয়ামী লীগ করবে না। বরং আওয়ামী লীগ সিদ্ধান্ত নিয়েছে আগামী মাস থেকে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে তারা সভা সমাবেশ করবে।
নেতারা বলেন, আগামী ১০ অক্টোবরের পর থেকে বিজয় দিবস পর্যন্ত ঢাকাসহ সারাদেশে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালন করবে আওয়ামী লীগ। এসব কর্মসূচিতে মূলত থাকবে সভা-সমাবেশ এবং জনগণকে সম্পৃক্ত করা।
জানা গেছে, বিএনপির সন্ত্রাস, নৈরাজ্য এবং গণতন্ত্র ধ্বংসের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের এই সমাবেশ করা হবে। ইতোমধ্যেই ঢাকা মহানগর উত্তর এবং দক্ষিণ সমাবেশগুলো প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। এর মধ্যে উত্তর এবং দক্ষিণ একাধিক বড় সভা সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। প্রত্যেকটি নির্বাচনী এলাকা ঘিরে ঘিরে সমাবেশ করার প্রস্তুতি নেওয়া হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আগামী মাস থেকেই এই কর্মসূচির কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। যে কর্মসূচি গুলোর মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ তার শক্তি এবং জনসমর্থন প্রদর্শন করবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেন, আজ শনিবার থেকে দেশব্যাপী শুরু হচ্ছে দুর্গাপূজা। শারদীয় দুর্গাপূজার সময় যেন কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি না হয় সেজন্য আওয়ামী লীগ তার কর্মসূচিগুলোকে অক্টোবরের পরে করার প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। আগামী ৫ অক্টোবর শারদীয় দুর্গোৎসবের ছুটি এবং আগামী ৯ অক্টোবর ঈদে মিলাদুন্নবী। এর পরপরই আওয়ামী লীগ কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামবে।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, যদিও আগামী ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। কাউন্সিল অধিবেশনের পাশাপাশি এই ধরনের সমাবেশগুলো করার ব্যাপারে আওয়ামী লীগ নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, বিএনপি কোনো কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ করে না। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা স্বার্থে তাদেরকে আর সুযোগ দেওয়া যাবে না। দলগতভাবে আমরা তাদেরকে প্রতিহত করবো।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় হাজারীবাগে বিএনপির হামলায় গুরুতর আহত দলীয় নেতাকর্মীদের দেখতে রাজধানীর সিকদার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল। সেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপির নেতাদের উদ্দেশ্যে এমন হুশিয়ারি দেন নানক।
এসময় হামলাকারীদের চিহ্নিত করতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে নানক বলেন, আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই- যারা এই ঘটনায় জড়িত রয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদেরকে চিহ্নিত করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীর আওতায় আনতে হবে। ওদের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে।
তিনি বলেন, বিএনপি’র অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মিছিল সমাবেশ করছে। তাই ওদের আর সময় দেওয়ার সুযোগ নেই। হাজারীবাগে তারা আন্দোলনের নামে আওয়ামী লীগের নেতা শাহ আলমকে নির্মম ভাবে অত্যাচার করেছে। সাংবাদিক ও মহিলারাও রক্ষা পায়নি বিএনপির সন্ত্রাসীরা। ওদেরকে সুযোগ দেওয়া হয়েছিল কিন্তু তারা মিছিলের নামে জনগণের উপরে অতর্কিত হামলা চালায়। ওদেরকে প্রতিহত করার এখনই সময়।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের একজন নেতা নাম প্রকাশ না করারশর্তে বলেন, বিএনপিকে বিশ্বাস করা যায় না। তারা আগেও আগুন-সন্ত্রাস করেছে। মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে। জান-মাল ধ্বংস করেছে। বিএনপি আবার আগুন-সন্ত্রাস করতে মাঠে নেমেছে। ওরা গণতন্ত্র বিশ্বাস করতে চায় না। ওরা গণতন্ত্র জানেনা। তাই ওদের বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, কেউ বিএনপির সন্ত্রাসীর কর্মকান্ড- হাতে হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, সাংবাদিক এবং সাধারণ মানুষদের উপর অত্যাচার করেছে। এরা হত্যাকারী দল। দেশে শান্তির লক্ষ্যে এই সন্ত্রাসী দলকে অবশ্যই আমরা মোকাবেলা করব।
একুশে সংবাদ/সফি/এসএপি
আপনার মতামত লিখুন :