AB Bank
  • ঢাকা
  • বুধবার, ১৩ আগস্ট, ২০২৫, ২৯ শ্রাবণ ১৪৩২

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

জাকাত: ইসলামের এক গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক বিধান


Ekushey Sangbad
আসগর সালেহী, চট্টগ্রাম
০৩:২২ পিএম, ১৬ মার্চ, ২০২৫

জাকাত: ইসলামের এক গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক বিধান

ইসলামে জাকাত একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থ-সামাজিক বিধান, যা দরিদ্র বিমোচন এবং অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য অত্যন্ত কার্যকর। এটি ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি এবং প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমানের ওপর ফরজ।

জাকাতের ধর্মীয় বিধান: 
জাকাত শব্দের অর্থ পবিত্রতা, বৃদ্ধি বা উন্নতি। ইসলামে জাকাত সম্পদের পরিশুদ্ধির মাধ্যম এবং দরিদ্রদের প্রতি ধনীদের দায়িত্ব পালন। কুরআনে আল্লাহ বলেছেন:

"আর তোমরা সালাত কায়েম কর এবং জাকাত দাও। আর তোমরা নিজের জন্য যা কিছু অগ্রিম পাঠাবে, তা তোমরা আল্লাহর কাছে পাবে।" 
(সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১১০)

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
"ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি: (১) তাওহিদ ও রিসালাতে বিশ্বাস, (২) সালাত কায়েম করা, (৩) জাকাত প্রদান করা, (৪) রোজা রাখা, (৫) হজ পালন করা।" (সহিহ বুখারি)

অতএব, জাকাত হলো ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে সম্পদ বণ্টনের এক অনন্য ব্যবস্থা, যা সমাজে অর্থনৈতিক ভারসাম্য নিশ্চিত করে।

দরিদ্র বিমোচনে জাকাতের ভূমিকা:
জাকাত কেবল একটি দান বা সহানুভূতির প্রকাশ নয়; বরং এটি দরিদ্রদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার একটি কার্যকর উপায়।

১. দারিদ্র্য দূরীকরণ:
জাকাতের মাধ্যমে দরিদ্র মানুষ তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে পারে। এটি খাদ্য, পোশাক, বাসস্থান, চিকিৎসা এবং শিক্ষার ব্যয় নির্বাহে সহায়তা করে।

২. অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা:
জাকাত সম্পদের অসম বণ্টন রোধ করে এবং সমাজে ন্যায়সঙ্গত সম্পদ বণ্টন নিশ্চিত করে। এটি ধনীদের সম্পদ দরিদ্রদের মাঝে প্রবাহিত করে, ফলে অর্থনীতি গতিশীল হয়।

৩. সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা:
যখন দরিদ্র মানুষ তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা পায়, তখন সামাজিক অসন্তোষ কমে এবং চুরি, ডাকাতি ও অপরাধ প্রবণতা হ্রাস পায়।

৪. মানবসম্পদ উন্নয়ন:
শিক্ষা, চিকিৎসা ও ক্ষুদ্র ব্যবসায় বিনিয়োগের মাধ্যমে দরিদ্র মানুষ স্বাবলম্বী হতে পারে, যা সামগ্রিকভাবে জাতীয় উন্নয়নে সহায়ক।

জাকাত কাকে, কখন ও কিভাবে দেবো?
জাকাত পাওয়ার যোগ্য আট শ্রেণির মানুষ
কুরআনে উল্লেখিত আট শ্রেণির লোক জাকাত পাওয়ার উপযুক্ত:
১. ফকির: যাদের ন্যূনতম প্রয়োজন মেটানোর সামর্থ্য নেই। 
২. মিসকিন: যারা কিছুটা সচ্ছল, কিন্তু পর্যাপ্ত আয় নেই। 
৩. জাকাত সংগ্রহ ও বিতরণের দায়িত্বপ্রাপ্তরা। 
৪. নও-মুসলিম (যাদের অন্তর ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করা প্রয়োজন)। 
৫. দাস মুক্তির জন্য। 
৬. ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি (যিনি বৈধ প্রয়োজনে ঋণগ্রস্ত হয়েছেন)। 
৭. আল্লাহর পথে যারা সংগ্রামরত। 
৮. মুসাফির (যিনি আর্থিক সংকটে আছেন)। 
(সূরা আত-তাওবা, আয়াত: ৬০)

জাকাত কবে দিতে হবে?
যদি কারো কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ (সোনার হিসাবে ৭.৫ ভরি বা রুপার হিসাবে ৫২.৫ ভরি বা সমমূল্যের নগদ অর্থ) এক হিজরি বছর ধরে থাকে, তবে তাকে ওই সম্পদের ২.৫% জাকাত দিতে হবে।

কিভাবে দিতে হবে?
সরাসরি গরিবদের হাতে নগদ বা প্রয়োজনীয় সামগ্রী দিয়ে দেওয়া যায়।
নির্ভরযোগ্য সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিতরণ করা যেতে পারে।
আত্মীয়স্বজনের মধ্যে যারা জাকাতের হকদার, তাদের দেওয়া উত্তম।

জাকাতের হিসাব কিভাবে করবেন?
জাকাত প্রদানের সঠিক হিসাব রাখতে কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করা দরকার:

১. সম্পদের হিসাব করুন
নিম্নোক্ত সম্পদগুলোর মোট মূল্য নির্ধারণ করতে হবে:
নগদ টাকা (ব্যাংক ও হাতে থাকা)
স্বর্ণ ও রুপা
ব্যবসার পণ্য
বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশ
কৃষিজ পণ্য ও গবাদি পশু

২. দেনা বাদ দিন
যদি কোনো দেনা থাকে, যা এক বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে, তা সম্পদের হিসাব থেকে বাদ দিতে হবে।

৩. নিসাব অতিক্রম হলে হিসাব করুন
যদি নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে, তবে এর ২.৫% হিসাব করে জাকাত দিতে হবে।

উদাহরণ: আপনার মোট সম্পদ = ১০,০০,০০০ টাকা জাকাতের হার = ২.৫% জাকাত = (১০,০০,০০০ × ২.৫%) = ২৫,০০০ টাকা

জাকাত কেবল দারিদ্র্য বিমোচনের একটি হাতিয়ার নয়, এটি সমাজে সহমর্মিতা, সহানুভূতি ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যম। সঠিকভাবে জাকাত আদায় করলে মুসলিম সমাজে অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর হবে এবং ইসলামের প্রকৃত কল্যাণময় নীতি বাস্তবায়িত হবে। ইসলামের নির্দেশনা মেনে আমরা যদি যথাযথভাবে জাকাত প্রদান করি, তবে এটি শুধু ইহকালেই নয়, পরকালেও আমাদের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে।


লেখক: মাওলানা আসগর সালেহী
সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী।

Link copied!