AB Bank
ঢাকা বুধবার, ২২ মে, ২০২৪, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

রোহিঙ্গা সমস্যার দায় বিশ্বকেও নিতে হবে


Ekushey Sangbad
ড. রাহমান নাসির উদ্দিন
০২:৪৬ পিএম, ২১ জুন, ২০২৩
রোহিঙ্গা সমস্যার দায় বিশ্বকেও নিতে হবে

গতকাল জুন মাসের ২০ তারিখ বিশ্বব্যাপী বিশ্ব শরণার্থী দিবস পালিত হয়েছে। ১৯৫১-এর ‘রিফিউজি কনভেনশন’-এ বাংলাদেশ এখনও স্বাক্ষর করেনি বলে সরকারিভাবে ‘বিশ্ব শরণার্থী দিবস’ পালন না করার মধ্যে কোনো কৃতিত্ব নেই। বরং এ দিবস উদযাপনের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান খোঁজার চেষ্টার মধ্যেই আখেরে বাংলাদেশের ফায়দা। বিযুক্তির মধ্যে মাহাত্ম্য নেই; সংযুক্তির মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টায় প্রাপ্ত ধান আখেরে বাংলাদেশের গোলায় যাবে– এটা সুনিশ্চিত। 

 

অনেক দেশ আছে, যারা ১৯৫১ সালের ‘রিফিউজি কনভেনশন’-এ স্বাক্ষর করেনি। তার পরও তারা জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে ‘বিশ্ব শরণার্থী দিবস’ পালন করে। এটা পালন করা দরকার অন্য দেশে শরণার্থী হয়ে মানবেতর জীবনযাপনকারী মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং তাদের শক্তি ও সাহস জোগানোর জন্য। তাদের জীবনের মান-মর্যাদা অক্ষুণ্ন ও উন্নত করার জন্য ‘বিশ্ব শরণার্থী দিবস’ যথাযথভাবে পালন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর। কেননা, বিশ্ব শরণার্থী দিবস পালনের মধ্য দিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শরণার্থী হিসেবে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর অধিকার, চাহিদা, প্রয়োজন ও স্বপ্নকে সমর্থন দানের একটা বৈশ্বিক পরিসর হিসেবে এ দিবসটি ব্যবহৃত হয়। এ বছরও এর অন্যথা হচ্ছে না।

 

প্রতি বছর বিশ্ব শরণার্থী দিবসের একটি প্রতিপাদ্য থাকে। এবারের প্রতিপাদ্য বাংলা করলে দাঁড়ায় ‘বে-ঘরেও আশার ঘর: যেখানে বিশ্ব শরণার্থীরাও সর্বদা অন্তর্ভুক্ত’। এ প্রতিপাদ্যের মূল বিষয় হচ্ছে, শরণার্থীদের অন্তর্ভুক্তিকরণের বিষয়টি আশ্রয় প্রদানকারী রাষ্ট্রের নীতি কাঠামোতে নিতে হবে। অন্তর্ভুক্তিকরণের যে শক্তি, সেটাই শরণার্থী সমস্যার সত্যিকার ও দীর্ঘমেয়াদি সমাধান বয়ে আনতে পারে। জাতিসংঘের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যেসব শরণার্থী প্রাণের মায়া নিয়ে আশ্রয়দানকারী দেশে আশ্রয় নিয়েছে, তারা সে দেশটিকেই নিরাপদ বলে মনে করেছে। তাই তাদের আশ্রয় প্রদানকারী দেশে কীভাবে অন্তর্ভুক্ত করা যায়, সেদিকে দৃষ্টি ও নজর দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। যদি নিরাপদে ফেরা সম্ভব হয়, তাহলে শরণার্থীদের নিজ দেশে ফিরে গিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখার কথাও বিবৃতির লেজে ‘দায়সারা’ভাবে জুড়ে দেওয়া হয়েছে।

 

জাতিসংঘের সমস্যা এখানেই– কেন মানুষ নিজ দেশ ছেড়ে অন্য দেশে পালিয়ে আশ্রয় নেয়, সেটাকে আলোচনার কেন্দ্রে আনা হয় না। বরং যে দেশ মানবিক কারণে শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়, সে দেশে কীভাবে শরণার্থীদের অন্তর্ভুক্ত করানো যায় সেদিকেই তাদের নজর। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, মানবতার খাতিরে আশ্রয় দিয়েই যেন দেশটি বড় ভুল করেছে। এখানে দোষটা শরণার্থীদের নয়। দোষ হচ্ছে সেসব দেশের, যেসব দেশ নিজ দেশের মানুষের জীবনকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়ে অন্য দেশে পালাতে বাধ্য করে। বাড়তি দায় নিতে হবে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও। তা না করে তারা আশ্রয় প্রদানকারী দেশের ওপর মানবাধিকার সুরক্ষার নামে বেহুদা চাপ প্রয়োগ করে। এসব কার্যকারণ ও রোগ-পথ্যের কানামাছি খেলার কারণেই বিশ্বব্যাপী শরণার্থী সমস্যা বেড়েই চলেছে।

 

ক্রমবর্ধমান শরণার্থীর সংখ্যা বর্তমান পৃথিবীর প্রধান সমস্যা। নিকট অতীতে আমাদের অভিজ্ঞতায় জমা আছে সিরিয়ার শরণার্থী সমস্যা, ভেনিজুয়েলার শরণার্থী সমস্যা, রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা, আফগান শরণার্থী সমস্যা, সুদানের শরণার্থী সমস্যা, উইঘুর এবং ইউক্রেনের শরণার্থী সমস্যার কথা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবীতে শরণার্থীর সংখ্যা কমাতে বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে নানান উদ্যোগ গ্রহণ করা এবং অনেক আইন-কানুন তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু সমস্যা কি কমেছে? বরং তা বেড়েছে। সম্প্রতি জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। যার তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে বিশ্বে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা প্রায় ১১ কোটি। আর নিজ দেশেই অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৬ কোটি ২৫ লাখ। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার ওয়েবসাইটে প্রদত্ত তথ্যানুযায়ী বর্তমানে পৃথিবীতে শরণার্থীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন কোটি। ভিন্ন দেশের আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা প্রায় ৫৪ লাখ। রাষ্ট্রবিহীন মানুষের সংখ্যা প্রায় ১ কোটি। এসব পরিসংখ্যান দেখে সহজেই অনুমান করা যায়, বিভিন্নভাবে ঠাঁই হারানো মানুষের সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বাড়ছে। সংখ্যার এ ক্রমবর্ধমান প্রবণতার দায়-দায়িত্ব কার? জাতিসংঘসহ পুঁজিবাদী, আধিপত্যবাদী, কর্তৃত্ববাদী এবং সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলোকে এর জবাব দিতে হবে।

 

বাংলাদেশের মানুষ হিসেবে আমরাও রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যার সাক্ষাৎ ভুক্তভোগী। কাজেই রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা প্রয়োজন এবং এর সমাধানে আশু করণীয় কী, তা নিয়েও সক্রিয়ভাবে চিন্তা-ভাবনা জরুরি হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশে বর্তমানের ১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থী হিসেবে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি অস্থায়ী শরণার্থী শিবিরে বাস করে। প্রায় ছয় বছরে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া নিয়ে নানান দৌড়ঝাঁপ চললেও এখনও পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাকেও আনুষ্ঠানিকভাবে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো যায়নি। মিয়ানমারের অসহযোগিতা, অনিচ্ছা, পর্যাপ্ত প্রস্তুতিহীনতা এবং আন্তরিকতার অভাব এর কারণ। তা ছাড়া ‘রোহিঙ্গারা ফেরত যেতে চায় না’ বলে পাইকারি হারে রোহিঙ্গাদের দিকে অভিযোগের আঙুল তুললেও তাদের জীবনের নিরাপত্তা কীভাবে দেওয়া হবে; রাখাইনে ফেলে আসা বসত-ভিটা ফেরত এবং নাগরিকত্ব প্রাপ্তির নিশ্চয়তা– এসব বিষয়ে কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রতিশ্রুতি কারও তরফ থেকে দেওয়া হয়নি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখানে চুপচাপ। জাতিসংঘ প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় কোনোভাবেই অংশ নিচ্ছে না। বরং জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে নিরুৎসাহিত করতে নিয়মিত বিরতিতে বিবৃতি প্রদান করে যাচ্ছে। এ রকম একটি পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ‘বিশ্ব শরণার্থী দিবস’কে কাজে লাগিয়ে বিশ্ববাসীর সামনে ১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়ার কারণে কী কীসমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে, সেটা যথাযথ গবেষণালব্ধ তথ্য-উপাত্ত দিয়ে তুলে ধরতে পারে। বাংলাদেশে বসবাসকারী বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে একটা মতবিনিময়ের ব্যবস্থা করতে পারে, যেখানে রোহিঙ্গা সমাধানের সম্ভাব্য ও কার্যকর প্রক্রিয়া এবং পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা হবে।

 

রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিচালনায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতার পরিমাণ কমে আসছে। ফলে এ দেশের জনগণের ট্যাক্সের টাকা সেখানে ব্যয় করতে হচ্ছে। বাংলাদেশ কি তাহলে মানবতা দেখিয়ে ভুল করেছে? ইতোমধ্যে ছয় বছর অতিবাহিত হয়ে গেছে। কিন্তু রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কোনো কার্যকর ভূমিকা পালন করছে না– সেটাও সবার সামনে পরিষ্কার করা দরকার। বাংলাদেশ কেন একা ১২ লক্ষাধিক শরণার্থীর ‘বোঝা’ বহন করবে– সে প্রশ্নের উত্তর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেই দিতে হবে।

 

একুশে সংবাদ/আ.হ.প্র/জাহা

Link copied!